আজ আর কয়েকঘন্টা পরেই নটিংহ্যামে মুখোমুখি হতে চলেছে ভারত-নিউজিল্যান্ড। দুই দলই তাদের 'উইনিং স্ট্রিক' বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু শিখর ধাওয়ানের অভাব কতটা বোধ করবে ভারত? ম্যাচ নিয়ে কী বলছেন আমাদের বিশ্বকাপ বিশেষজ্ঞ শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়?
কীভাবে ট্রেন্ট বোল্ট, জেমস নিশামদের সামলাবে ভারত?
দেখুন, বোল্ট, নিশাম, হেনরি, এঁরা কিন্তু কেউ 'এক্সপ্রেস বোলার' নন। এঁরা মূলত 'সুইং অ্যান্ড সিম' বোলার, আশি-চুরাশিতে বল করেন। এঁদের সবসময় সেকেন্ড লাইনে খেলতে হবে, ফার্স্ট লাইনে নয়। অর্থাৎ বল যখন পড়ছে তখন নয়, যখন 'deviate' করছে বা ঘুরছে, তখন খেলতে হবে। কাজেই বলটা একটু দেরিতে খেললে, এবং চোখের নীচে খেললে, এই বোলারদের খেলতে সুবিধে হবে। একমাত্র এক্সপ্রেস বোলার হচ্ছেন লকি ফার্গুসন, যিনি নব্বইয়ের ওপর বল করেন। তাঁকে ব্যাকফুটে গিয়েই খেলতে হবে, উনি সামনে বল করেন না।
ভারতের স্পিনারদের কীভাবে খেলবে নিউজিল্যান্ড?
রস টেলর এবং কেন উইলিয়ামসন, এই দুজন স্পিনের বিরুদ্ধে নিউজিল্যান্ডের সেরা ব্যাটসম্যান। কেন উইলিয়ামসন বিশ্বমানের প্লেয়ার, প্রথম চারজন ব্যাটসম্যানের মধ্যে তাঁর নাম করতেই হবে। উনি পেস বোলিংয়ের বিরুদ্ধে যতটা সাবলীল, স্পিনের বিরুদ্ধেও ততটাই। সঙ্গে রস টেলরের অগাধ অভিজ্ঞতা। উনিও পেস এবং স্পিন, দুটোই যথেষ্ট ভাল খেলেন, বিশেষ করে স্পিন। টেলর একটা আড়াআড়ি শট মারেন, মিডউইকেটের ওপর দিয়ে, যেটাতে উনি পোক্ত, এবং সবচেয়ে বড় কথা, দুজনেই দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। দুজনেই আফগান স্পিনারদের বিরুদ্ধে ভাল রান পেয়েছেন, নট আউট ছিলেন। রশিদ খানের মতো ইউনিক রিস্ট স্পিনারকে যদি ট্যাকেল করতে পেরে থাকেন, তাহলে ভারতের দুই রিস্ট স্পিনার, যাঁদের ওঁরা এর আগে আইপিএল-এ সফলভাবে খেলেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়।
তবে মার্টিন গাপটিল, টম লেথাম, কলিন মনরো, এবং কলিন গ্রান্ডহোমকে সঙ্গত দিতে হবে। পাওয়ার প্লে-তে ভাল ব্যাট করা অসম্ভব জরুরি, কারণ ব্যাটে-বলে দুরন্ত ফর্মে রয়েছে ভারত। আরও একটা কথা, দেখতে গেলে এই ম্যাচটাই কিন্তু এই বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের প্রথম বড় পরীক্ষা। এর আগে ভারতের মতো শক্তিশালী টিমের বিরুদ্ধে খেলে নি ওরা। তিনটে ম্যাচে জিতেছে ঠিকই, কিন্তু এখনো কোনো ক্রিকেট 'সুপার পাওয়ার' কে খেলে নি ওরা। কাউকে ছোট না করেই বলছি, ওদের আসল বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে আজ।
নিউজিল্যান্ডের জয়রথ থামাতে পারবে ভারত?
ভারত কিন্তু শুরুটা ভাল করে নি। ওয়ার্ম আপ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেছিল। কিন্তু তারপর দুটো বড় দলকে হারিয়ে ওদের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে এই মূহুর্তে এগিয়ে ওরা। ওপেনাররা ফর্মে, মিডল অর্ডার ফর্মে, বিরাট কোহলি, কে এল রাহুল ফর্মে, মহেন্দ্র সিং ধোনি রান করছেন, হার্দিক পান্ডিয়া রান করছেন। একটাই বড় ধাক্কা, শিখর ধাওয়ান ওপেনিংয়ে নেই। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় রাহুলকে দিয়ে ওপেনিং করানো উচিত এবং কেদার যাদবকে চার নম্বরে খেলানো উচিত। দেখতে গেলে কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিজয়রথ থামানোর সবরকম 'ফায়ার পাওয়ার' ভারতের রয়েছে। বুমরা-ভুবনেশ্বর ভাল ফর্মে আছেন, স্পিনাররা ভাল বল করছেন। ভারতকে হারাতে হলে নিজেদের ছাপিয়ে যেতে হবে নিউজিল্যান্ডকে।
গাপটিল-টেলর-উইলিয়ামসন বনাম বিরাট-রোহিত
উইলিয়ামসন এবং টেলর বিশ্বমানের ব্যাটসম্যান। গাপটিল সেখানে একটু 'হিট অ্যান্ড মিস' গোছের প্লেয়ার। যেদিন লেগে যাবে, সেদিন ভাল রান করবে। সেদিক থেকে বিরাট বা রোহিত অনেক বেশি কন্সিস্টেন্ট। রোহিতের কথাই ধরা যাক। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১২২ রানের ওই ইনিংসটা দেখতে ভাল লাগে নি হয়তো, কিন্তু দলকে জিতিয়েছে ওই ইনিংস। নিজের স্বাভাবিক খেলাটা না খেলে, উইকেট কামড়ে পড়ে থেকে দলকে জেতানো - এটাই মুম্বই ঘরানার ব্যাটিং।
নিউজিল্যান্ড এই ত্রয়ীর ওপর অত্যধিক নির্ভরশীল, এটাও ঠিক। বিশেষ করে টেলর এবং উইলিয়ামসনের মধ্যে একজন যদি রান না করেন, তাহলে কী হবে তা এখনও দেখা হয় নি। অন্যরা এখনো রান করেন নি।