বিমানবন্দরে সিকিওরিটি চেকিংয়ের পরেও চিনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় কার্যত যাওয়া হল না অরুণাচল প্রদেশের তিন ক্রীড়াবিদের। বিমানবন্দর থেকেই তাঁদের ফেরত আসার নির্দেশ দেওয়া হয়।
অভিযোগ তিন উশু প্লেয়ারকে 'স্টেপলড ভিসা' দিয়েছে চিন। যার জেরেই দ্বন্ধ বেড়েছে ভারত-চিনের। চিনের চেংদু শহরে ২৮ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় গেমস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের ক্রীড়াবিদরা এই গেমসে অংশ নিচ্ছেন। ভারত থেকে যাচ্ছেন ২২৭ জন ক্রীড়াবিদের দল।
অধিকাংশ ক্রীড়াবিদ আগের রাতে চিনে উড়ে গেলেও অরুণাচলের ওই তিন খেলোয়াড় তাঁদের সঙ্গে যেতে পারেননি। তাদের ভিসা দিতে দেরি করেছে বেজিং। শুক্রবার ভোরে তাঁদের চিনের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, এরপরই শুরু হয় নাটক। একেবারে শেষ মুহূর্তে চিন সরকার তাঁদের ভিসা পাঠালে দেখা যায়, চিনা কর্তৃপক্ষ অরুণাচলের তিন ক্রীড়াবিদকে সাধারণ ভিসা দেওয়ার পরিবর্তে 'স্টেপলড ভিসা' দিয়েছে। এরপরই অরুণাচল প্রদেশের ক্রীড়াবিদদের চিনে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় ভারত সরকার। 'অগ্রহণযোগ্য', বলেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত।
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি জানিয়েছেন, 'এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই চিনা কর্তৃপক্ষের কাছে ‘কড়া প্রতিবাদ’ জানিয়েছে ভারত'। তিনি বলেছেন, 'চিনে একটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতে যাওয়া কয়েকজন ভারতীয় খেলোয়াড়কে 'স্টেপল ভিসা' দেওয়া হয়েছে। এটা সম্পূর্ণরূপে 'অগ্রহণযোগ্য' এবং আমরা এর দৃঢ় প্রতিবাদ জানিয়েছি'।
২৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় গেমসের জন্য চিনে তিন ভারতীয় উশু খেলোয়াড়কে স্ট্যাপলড ভিসা জারি করা হয়েছিল, যার ভিত্তিতে ভারত তীব্র আপত্তি জানিয়েছে ভারত। এমতাবস্থায়, প্রশ্ন হল 'স্টেপল ভিসা' কী, চীন কখন এবং কেন এটি ইস্যু করা হয় এবং ভারত কেন এর প্রতিবাদ করেছে।
'স্ট্যাপলড ভিসা'কে কেন্দ্র করে ভারত ও চিনের মধ্যে ফের উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করেছে। ২৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় গেমসের জন্য তিন ভারতীয় উশু খেলোয়াড়কে স্ট্যাপল ভিসা দিয়েছে চিন। এতে ভারত তীব্র আপত্তি জানায়। ভারত সরকার বিমানবন্দর থেকে তিন খেলোয়াড়কে দেশে ফেরার নির্দেশ দেয়। ভারত স্পষ্ট বলেছে, চিনের এই পদক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়। আসলে, ভারতের ১১ সদস্যের উশু দল বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় গেমসের জন্য চিনে যাওয়ার কথা ছিল। এই খেলোয়াড়দের মধ্যে তিন অরুণাচল প্রদেশের। তাদের চিনে উড়ে যাওয়ার জন্য 'স্ট্যাপলড ভিসা' দেওয়া হয়। উল্লেখ্য 'চিনের স্ট্যাপলড ভিসা' ভারতে অনুমোদিত নয়।এখন প্রশ্ন হল স্টেপল ভিসা কী, চিন কখন এবং কেন এটি ইস্যু করে এবং ভারত কী নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে।
স্ট্যাপলড ভিসা কি?
সাধারণত কোন দেশে ভ্রমণ করতে হলে সেই দেশের থেকে অনুমতি নিতে হয়। যা ভিসা আকারে পাওয়া যায়। ভ্রমণের উদ্দেশ্য অনুযায়ী ভিসার ধরণ পরিবর্তিত হয়। যেমন- বিজনেস ভিসা, পার্টনার ভিসা, অন অ্যারাইভাল ভিসা। বিভিন্ন দেশে এ সংক্রান্ত নিয়মও ভিন্ন।
চিনে একধরণের ভিসা রয়েছে যা স্ট্যাপলড ভিসা নামে পরিচিত। এই ভিসায় ইমিগ্রেশন আধিকারিক যাত্রীর পাসপোর্টে কোন স্ট্যাম্প দেন না। এটি পাসপোর্টে স্লিপ হিসাবে স্ট্যাপল করা হয়। এই স্লিপে স্পষ্ট লেখা আছে কেন যাত্রীরা চিনে যাচ্ছেন। তার উদ্দেশ্য কী। এজন্য একে স্ট্যাপলড ভিসা বলা হয়। পাসপোর্টে একটি পৃথক স্লিপ সংযুক্ত করতে একটি স্ট্যাপলার ব্যবহার করা হয়, তাই নাম স্ট্যাপলড ভিসা।
চিন ছাড়াও, কিউবা, ইরান এবং উত্তর কোরিয়া সহ অনেক দেশ রয়েছে যারা স্ট্যাপলড ভিসা প্রদান করে। এখন চিন ভারতীয় খেলোয়াড়দের এই ভিসা ইস্যু করে আবারও দুই দেশের সম্পর্কের তিক্ততা বাড়িয়েছে।
ভিসার কারণে ভারত-চীন সম্পর্ক তিক্ত কেন?
এর কারণ চিনের মানসিকতা। আসলে, তিব্বতের উপর চিনের কর্তৃত্ব রয়েছে এবং তারা ভারতের অরুণাচল প্রদেশকে তিব্বতের অংশ বলে মনে করে। চিন বিশ্বাস করে অরুণাচল প্রদেশের উপরও তাদের অধিকার রয়েছে এবং সেখানকার লোকদের তাদের দেশে আসার জন্য ভিসার প্রয়োজন নেই। এটিই বিতর্কের মূল বিষয়।
সে কারণেই এটি অরুণাচল প্রদেশের খেলোয়াড়দের জন্য স্ট্যাপলড ভিসা জারি করেছে চিন। ভারত আগেও এই বিষয়ে আপনার বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়ে আসছে। চিনের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই, যিনি ২০১৪ সালে ভারতে এসেছিলেন এবং বলেছিলেন যে চিন থেকে স্ট্যাপলড ভিসা দেওয়ার মানে হল যে আমরা সীমান্ত ইস্যুতে কোনও ধরণের আপস করছি না।
যদিও এই স্ট্যাপলড ভিসা নিয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছে ভারত। চিনের এই পদক্ষেপ 'অগ্রহণযোগ্য' বলে উল্লেখ করেছে বিদেশমন্ত্রক। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিদম বাগচি বলেছেন ভারত ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে চিনা কর্তৃ্পক্ষের কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই অনুসারে, সাংবাদিক সম্মেলনে অরিন্দম বাগচি বলেন, যে বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে। এই নিয়ে ভারত তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে।