আট বছর আগে, ঘটনাচক্রে ১৪ জানুয়ারিতেই, এশিয়ান কাপে মুখোমুখি হয় ভারত-বাহরেইন। ম্যাচের ফলাফল, বাহরেইন ৫, ভারত ২। সেই রাতে চোখের জল ফেলেছিলেন ডিফেন্ডার সন্দেশ ঝিঙ্গন। সোমবার রাতটাও চোখের জল দিয়েই শেষ হলো সন্দেশের, কারণ তাঁর আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও একস্ট্রা টাইমে পেনাল্টির দৌলতে স্কোর ১-০ করে ম্যাচ ছিনিয়ে নিল বাহরেইন। শেষ হলো ভারতের এশিয়া কাপ সফর।
ম্যাচ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ভারতের ইংরেজ কোচ স্টিফেন কনস্টান্টাইন ঘোষণা করলেন, তিনি "এগিয়ে যাচ্ছেন", এশিয়ান কাপের পর তাঁর চুক্তি নবীকরণ করতে চান না তিনি। জানুয়ারি ২০১৫-তে জাতীয় দলের ভার নেন কনস্টান্টাইন।
সোমবার আর স্রেফ চার মিনিট টিকে থাকতে পারলেই ইতিহাস গড়ে ফেলত ভারত। গোটা ম্যাচে বাহরেইনের মত টেকনিক্যালি উন্নত দলকে গোল করার কোনো সুযোগ দেয় নি তারা। কিন্তু ইনজুরি টাইমে বাহরেইনের ফরোয়ার্ডের ওপর অধিনায়ক প্রণয় হালদারের চ্যালেঞ্জই কাল হলো, নির্দ্বিধায় পেনাল্টি দিলেন রেফারি। গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সন্ধুকে অনায়াসেই কাটিয়ে জালে বল ঢুকিয়ে দিলেন জামাল রশিদ। পুল এ-র অন্য ম্যাচটি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও থাইল্যান্ড ১-১ ড্র করার ফলে ভারতের অভিযান চুপচাপ শেষ হয়ে গেল।
এদিন জিততে পারলে এই প্রথম এশিয়ান কাপে শেষ ১৬-র রাউন্ডে পৌঁছত ভারত। ড্র করতে পারলেও এগোনোর আশা অন্তত থাকত। কিন্তু প্রথম দুটি ম্যাচের আক্রমণাত্মক ফুটবলের ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না সোমবার। সেই আদি অকৃত্রিম রক্ষণাত্মক স্টাইল স্বমহিমায় ফিরে এলো, নিজেরাই নিজেদের কবর খুঁড়লেন সুনীল ছেত্রী ও তাঁর সতীর্থরা।
কিক অফের মোটামুটি ঘন্টাখানেক আগে থেকে লক্ষণ টের পাওয়া যাচ্ছিল, ম্যাচের লাইন আপ দেখেই। অনিরুদ্ধ থাপার সৃজনশীল স্টাইলের পরিবর্তে কনস্টান্টাইন বাছলেন রোলিন বর্জেসের মত ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে। বার্তাটা ছিল স্পষ্ট, ভারত হার বাঁচাতে খেলবে, জিততে নয়, যদিও কনস্টান্টাইন হয়তো সহমত হবেন না।
ম্যাচ শুরু দেড় মিনিটের মধ্যেই জোর ধাক্কা - ডান হাঁটুর চোট নিয়ে খেলতে নামা ডিফেন্ডার আনাস এডাথোডিকা ইশারায় জানালেন, মাঠ ছাড়তে চান তিনি, বিকল্প নামানো হোক। টাচ লাইনে দাঁড়ানো কনস্টান্টাইনকে দেখে একেবারেই মনে হলো না এই ঘটনায় আদৌ খুশি হয়েছেন। গত দুবছরের সিংহভাগ ধরে এডাথোডিকা-ঝিঙ্গন জুটি হয়ে উঠেছিলেন কোচের সেন্ট্রাল ডিফেন্সের প্রধান হাতিয়ার, এবং দলের সাম্প্রতিক উত্থানের স্তম্ভ।
বিকল্প হিসেবে নামলেন ইস্ট বেঙ্গলের সালাম রঞ্জন সিং - ২৩ সদস্যের দলে একমাত্র আই-লীগ খেলা প্লেয়ার - কিন্তু এডাথোডিকার অবর্তমানে ডিফেন্স ধরে রাখার সমস্ত দায়িত্ব পড়ে গেল ঝিঙ্গনের কাঁধে। গোড়ার এই ধাক্কা সামলে উঠতে পারল না ভারত।