Advertisment

অ্যাডিলেড টেস্টে ঐতিহাসিক জয় ভারতের

দশ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে শেষবার টেস্ট জয়ের স্বাদ পেয়েছিল ভারত। ২০০৮-এ পার্থে জিতেছিল টিম ইন্ডিয়া। তারপর আবার অ্যাডিলেডের এই জয়। ২০০৩-এর পর ভারতের অ্যাডিলেডে এই প্রথম জয়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
India Wins

ইতিহাস লিখে জয়োচ্ছ্বাস কোহলিদের (ছবি টুইটার)

ভারত ২৫০ ও ৩০৭

Advertisment

অস্ট্রেলিয়া ২৩৫ ও ২৯১ (১১৯.৫ ওভার, টার্গেট ৩২৩)

৩১ রানে জয়ী ভারত

ম্যাচের সেরা: চেতেশ্বর পূজারা

সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম সেরা টেস্ট ম্যাচ দেখল ক্রিকেট বিশ্ব। বলা ভাল, ক্রিকেটের দীর্ঘতম ফর্ম্যাটের সেরা বিজ্ঞাপন দিয়ে রাখল ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়ার এই টেস্ট ম্যাচ। দু'মাস আগে পাকিস্তান দুবাইয়ের মাটিতে যে ইতিহাস লিখেছিল, এদিন তার পুনরাবৃত্তি ঘটল না। সেবার দেড় দিন মতো ছিল হাতে, কিন্তু ৪৬২ রানের লক্ষ্যমাত্রাও অস্ট্রেলিয়ার কাছে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। এবার দেড় দিনেরও একটু বেশি সময়ে ২১৯ রান তুলতে পারল না অস্ট্রেলিয়া। যে রান তোলার জন্য তাদের হাতে ছিল ছয় উইকেট।

স্রেফ ভারতীয় বোলারদের দাপটে নিজেদের ঘরের মাঠে অভীষ্ট লক্ষ্যে আপ্রাণ চেষ্টা করেও পৌঁছতে পারল না অস্ট্রেলিয়া। দীর্ঘায়িত লাঞ্চ-পরবর্তী সেশনে অ্যাডিলেড ওভালে ৩১ রানে চার-ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে জিতে সিরিজে ১-০ এগিয়ে গেলেন বিরাট কোহলি অ্যান্ড কোং।

আরও পড়ুন: ইতিহাস আর ভারতের মাঝে এখন দূরত্ব ছ’কদম

লাঞ্চের পর ১৮৬/৬ তে ফের ইনিংস শুরু করে অস্ট্রেলিয়া, কিন্তু শুরুতেই চরম বিপর্যয়। ক্রিজে সেট হয়ে যাওয়া অধিনায়ক টিম পেইন সেশনের সপ্তম বলেই ব্যাক্তিগত ৪১ রানের মাথায় জসপ্রিত বুমরার বাউন্সার সামলাতে না পেরে তড়িঘড়ি পুল করলেন। আকাশছোঁয়া সেই শট অনায়াসে নিজের বাঁদিকে ছুটে গিয়ে লুফে নিলেন ঋষভ।

মিচেল স্টার্ক এবং প্যাট কামিন্স ৪১ রানের জুটি বেঁধে বেশ কিছুক্ষণ ঠেকিয়ে রাখেন ভারতীয় বোলারদের, কিন্তু শেষমেশ মহম্মদ শামির অফ স্টাম্পের বাইরের বলকে হালকা ছুঁয়ে ঋষভের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন স্টার্ক। তখন অস্ট্রেলিয়ার জেতার জন্য প্রয়োজন ১০০ রানের কম। এরপর অজি টেল এন্ডাররা জোড়াতালি দিয়ে খাড়া করেন নেথান লায়ন এবং কামিন্সের আরও একটি জুটি, যার অবদান ৩১ রান। ঠিক যখন ভারতের কপালে ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে, ফার্স্ট স্লিপে বুমরার বলে বিরাটকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান কামিন্স।

শেষ পর্যন্ত কেল্লা ফতে করলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তাঁর ধৈর্যের পুরস্কার হিসেবে তুলে নিলেন জশ হেজেলউডের উইকেট। টি ব্রেকের তখন আর স্রেফ পাঁচ মিনিট বাকি। এর আগে ৫২.৪ ওভার বল করেন অশ্বিন, এবং ৩৩.৪ ওভার ধরে সাফল্যের মুখ দেখেন নি তিনি।

পরিসংখ্যানের সমর্থনও এই ম্যাচে পায়নি অজিরা। শেষবার ১৯০২ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এই মাঠে এত বড় রান তাড়া করে জিতেছিল তারা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একমাত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজ বড় রান তাড়া করে জয় পায়। কিন্তু সেটাও ৩০০-র কম। যদিও গতকাল অজি শিবির শন মার্শকে ঘিরে স্বপ্ন দেখেছিল। কারণ এই মানুষটার ব্যাটেই সম্প্রতি ঘরোয়া ক্রিকেটে শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ৩১৩ রান তাড়া করে জিতেছিল। যার মধ্যে মার্শ করেছিলেন ১৬৯। কিন্তু এটা ঘরোয়া ক্রিকেটে নয়, লড়াইটা আন্তর্জাতিক।

অ্যাডিলেডে আরও একটি বিভাগে ইতিহাস লিখল ভারত। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারত কখনও টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ জেতেনি। সোমবার সেটাই দেখল আপামর দেশবাসী। তাছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এ নিয়ে মাত্র ছ'টি টেস্ট জিতল ভারত। সেদিক থেকেও কম ঐতিহাসিক নয় এই ম্যাচ। দশ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে শেষবার টেস্ট জয়ের স্বাদ পেয়েছিল ভারত। ২০০৮-এ পার্থে জিতেছিল টিম ইন্ডিয়া। ২০০৩-এর পর ভারতের অ্যাডিলেডে এই প্রথম জয়।

ব্যক্তিগতভাবে এই ম্যাচটি চিরদিন মনে রাখবেন ঋষভ পন্থ। তাঁর এগারোটি ক্যাচ তাঁকে মহেন্দ্র সিং ধোনি (৯) ও ঋদ্ধিমান সাহার (১০) রেকর্ড ছাপিয়ে একটি টেস্টে সর্বোচ্চ ক্যাচধারী ভারতীয় উইকেটকিপার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দিল।

অ্যাডিলেডের পর দ্বিতীয় টেস্ট ১৪ ডিসেম্বর পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী পার্থে, যেখানে বিশ্বের অন্যতম দ্রুতগতির পিচে মুখোমুখি হবেন কোহলি ও পেইনরা। তৃতীয় টেস্ট প্রথাগতভাবে শুরু হবে ২৬ ডিসেম্বর, যাকে বক্সিং ডে টেস্ট বলে অজিরা, এবং শেষ ম্যাচ সিডনিতে ৪ জানুয়ারি।

cricket Virat Kohli Cricket Australia
Advertisment