দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আপাতদৃষ্টিতে জয়টা যত সহজে পেয়েছিল ভারত, আজ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কিন্তু কাজটা সোজা হবে না। অস্ট্রেলিয়া প্রথম ম্যাচেই সেটা বুঝিয়ে দিয়েছে। নির্বাসন কাটিয়ে ফেরা স্টিভ স্মিথ এবং ডেভিড ওয়ার্নার রয়েছেন চেনা ছন্দে। তাঁদের সঙ্গেই যোগ দিয়েছেন মিচেল স্টার্ক। এই তিনজন মিলেই কিন্তু দলটাকে একটা অন্য রূপ দিয়েছেন।
গত ম্যাচের কথাই ধরা যাক। ১৪৭ রানে ৬ উইকেট হারানো দলটার স্কোর ওই জায়গায় নিয়ে গেলেন স্মিথ। একটা বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত থাকা অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ক্যাপ্টেন তিনি। তাঁর মধ্যে সেই পুরনো খিদেটাই দেখতে পেলাম।
মাথায় রাখতে হবে, ন্যাথান কুল্টার-নাইল একজন বোলার। তাঁর সঙ্গে স্মিথ ১০২ রানের পার্টনারশিপ করে দিলেন। পাশাপাশি টেলএন্ডেররাও দুর্দান্ত খেলে দিলেন। এই মুহূর্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিশ্বমানের বোলিং। অন্য যে কোনও দল হলে ভেঙে পড়ত। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া বলেই ওই জায়গায় ওরকম ক্রিকেট খেলতে পারল। অজিরা কিন্তু শেষ কামড়টা না-দেওয়া পর্যন্ত থামে না। ফিঞ্চ-ওয়ার্নার, স্টোইনিস আর ম্যাক্সওয়েল ফেরার পরেও এরকম লড়াই করার মতো একটা স্কোর তুলল অস্ট্রেলিয়া। বুঝিয়ে দিল, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ভঙ্গুর নয় ওদের ব্যাটিং অর্ডার। অ্যালেক্স ক্যারি, কুল্টার-নাইল, কামিন্সরাও ব্যাট করতে জানেন। ২৮৮ রান করাটা মুখের কথা নয়।
আরও পড়ুন: কাপ-কাহন: আজ অ্যাডভান্টেজ ভারত, চাপে দক্ষিণ আফ্রিকা
মিচেল স্টার্ক আর প্যাট কামিন্সের আগুনে বোলিংয়ের সামনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কার্যত নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। স্টার্ক কিন্তু চোট-আঘাতের জন্য দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে ছিলেন। সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করেই বুঝিয়ে দিলেন, উনি রয়েছেন চেনা ফর্মেই। ৯৩ মাইল বেগে বল করা চাট্টিখানি কথা নয়। ওঁর স্টক বলগুলো ভয়ঙ্কর। এই ডেলিভারিতে বল গোত্তা খেয়ে ঢুকে যায় ডান হাতি ব্যাটসম্যানদের কাছে। ওভার দ্য উইকেটই হোক বা রাউন্ড দ্য উইকেট। স্টার্ক সাবলীল।
এবার আসি ভারতের কথায়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সাউদ্যাম্পটনে রোহিত শর্মা আর শিখর ধাওয়ানের শুরুটা ভাল হয়নি একেবারেই। ওখানে ডাবল-পেসড উইকেট ছিল। শচীন তেন্ডুলকর বলছিলেন, "অতিরিক্ত বাউন্সের সঙ্গেই স্পাঞ্জি উইকেট ছিল। বল থেমে থেমে আসছিল।" এরকম উইকেটে রোহিত কিন্তু বুক চিতিয়ে ব্যাট করলেন। দেখতে গেলে টিপিক্যাল মুম্বই ঘরানার ক্রিকেট খেললেন।
'রোহিটম্যান' বলেই আমরা ওঁকে চিনি। সাদা বলের রাজা। গত ম্যাচে নিজের স্ট্রোক দখলে রেখে খেলে গেলেন। বলব না, ভীষণ দৃষ্টিনন্দন ক্রিকেট, কিন্তু অবশ্যই কার্যকরী। লুজ বলের জন্য ওয়েট করছিলেন। ব্যাকলিফ্টটা ছোট করে এনে হরিজন্টাল শট নিতে থাকলেন। গায়ের জোরে শট মারা নয়, বোলিংয়ের পেসটাকে কাজে লাগিয়ে খেলা। রোহিতের সঙ্গে রাহুল, ধোনি আর পাণ্ডিয়ারা ছোট ছোট ইনিংস খেলে স্কোরটাকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতকে কিন্তু ছোট কোনও ভুলেরও অনেক বড় মাসুল দিতে হতে পারে। অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন টিম। একবার রক্তের গন্ধ পেলে শিকারি বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়বে।
দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে অজিদের বোলিং অনেক অভিজ্ঞ আর ধারালো, একটা ঝাঁঝ রয়েছে। শুরুতেই উইকেট হারালে কিন্তু অজিরা চেপে বসবে ভারতের ঘাড়ের ওপর। ভারতকে মাথায় রাখতে হবে বিপক্ষ যদি পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন হয়, তাহলে তারাও দু'বারের। অস্ট্রেলিয়ার চোখে চোখ রেখে খেলতে হবে। চোখ সরানোর কোনও জায়গা নেই।
ভারতের চ্যাম্পিয়ন মানসিকতাই বের করে আনতে হবে। অস্ট্রেলিয়া গত ম্যাচে ফিরে এসেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ভারতকে উইকেট হারিয়ে প্রমাদ গুণতে হয়নি। আমাদের টেলএন্ডারদেরও অবদান রাখতে হবে ম্যাচে। দক্ষিণ আফ্রিকার পর ভারত যদি অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারে তাহলে কোহলিদের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে চলে যাবে। সেমিফাইনালে যাওয়ার রাস্তাও পরিষ্কার হয়ে যাবে।
আজ ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে যে পাঁচটা দিকে আমার নজর থাকবে:
১) ভারতীয় দলের ওপেনিং অর্ডার
২) মিডল অর্ডারে ধোনি নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে
৩) পাণ্ডিয়া ছাড়া আর কোনও 'বিগ হিটার' নেই
৪) ভারতের স্পিন বিভাগ শক্তিশালী। ওদের পেস অ্যাটাক দুুরন্ত
৫) স্টাার্কের প্রথমন স্পেলে ভারতীয়দের উইকেট দেওয়া চলবে না