scorecardresearch

দাদি-ই করে দেখাল, বলছেন মোহনবাগানে খেলা দেশের প্রথম ‘গোলাপি’ ক্রিকেটার

ইডেনে সাক্ষী থাকছে গোলাপি বলের দিন-রাতের ক্রিকেটের। সেই ম্যাচের আগেই দেশের প্রথম গোলাপি বলের ব্যাটসম্যান জয়জিৎ বসু জানাচ্ছেন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা।

Jayojit Basu
দেশের প্রথম গোলাপি বলের ব্যাটসম্যান জয়জিৎ বসু (সংগৃহীত)

ভবানীপুরের রবিকান্ত সিং যখন বোলিং মার্ক থেকে বল হাতে ছুটে এসেছিলেন। তখন ভাবতেই পারেননি অজান্তেই ইতিহাসের সঙ্গী হয়ে যাবেন তিনি। তা-ও আবার বছর তিনেক আগে। ব্যাটিং স্টান্স নিয়েছিলেন তিনি। বোলারের হাত থেকে ছিটকে বেরিয়েছিল গোলাপি বল। সেদিনই জয়জিৎ বসুর জার্সিতে অদৃশ্যভাবে যোগ হয়ে গিয়েছিল, দেশের প্রথম গোলাপি বলের ব্যাটসম্যান- এমন পরিচয়!

সপ্তাহ দুয়েক পরেই শহরে ঐতিহাসিক গোলাপি বলের আসর বসছে। দিন-রাতের টেস্ট ঘিরে আগ্রহ তুঙ্গে ক্রিকেটমহলে। তার আগে গোলাপি বলের প্রথম ভারতীয় ব্যাটসম্যান জয়জিৎ বসু ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানিয়ে রাখছেন, “শহরকে দাদি (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) দারুণ একটা উপহার দিল।”

দেশকে ‘পিঙ্ক গিফট’ দেওয়ার বহু আগেই বাংলা ক্রিকেটে চালু হয়ে গিয়েছিল গোলাপি বলে খেলা। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় সিএবি-র সর্বেসর্বা হয়ে সুপার লিগে চালু করেছিলেন গোলাপি বলের ম্যাচ। ২০১৬-র সুপার লিগ ফাইনালে মুখোমুখি ভবানীপুর ও মোহনবাগান। টসে হেরে ব্যাটিং করতে নামেন সবুজ-মেরুন জার্সিধারীরা। ওপেন করতে নেমেছিলেন জয়জিৎ বসু। তারপরে বাকিটা ইতিহাস।

আরও পড়ুন হাসিনাকে জানানো উচিত ছিল শাকিবের, সাফ জানাচ্ছেন বাংলাদেশের মন্ত্রী

সেদিনের কথা স্মরণ করতে গিয়ে আজও নস্ট্যালজিয়ায় ভাসেন ঘরোয়া ক্রিকেটের তারকা ক্রিকেটার। “মনে রাখার মতো একটা ম্যাচ হয়েছিল। ভবানীপুরকে গোটা ম্যাচে ডমিনেট করেছিলাম আমরা। ব্যাটে, বলে কোনও বিভাগেই আমাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পারেনি ওরা।” জানাচ্ছিলেন জয়জিৎ। সেই ম্যাচে মোহনবাগানের জার্সিতে খেলেছিলেন ঋদ্ধিমান সাহা, মহম্মদ শামিও। সাত বছর ধরে মোহনবাগানে খেলছেন জয়জিৎও। মোহনবাগানের ঘরের ছেলেই অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে বলছিলেন, “মহম্মদ শামি চোটে অনেকদিন জাতীয় দলের বাইরে ছিল। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফিরে আসার চেষ্টা করছিল। সেই সময়েই সুপার লিগে খেলেছিল ও। লম্বা লম্বা স্পেলে বোলিং করছিল শামি। প্রথম ইনিংসে ৫টা উইকেটও নিয়েছিল। সেবার ম্যাচের সেরা হয়েছিল শামি।”

Jayojit Basu
ময়দানি ক্রিকেটের পরিচিত মুখ জয়জিৎ বসু (সংগৃহীত)

গোলাপি বলে ক্রিকেট খেলা চালু করার জন্য জয়জিৎ বসুর মুখে কেবলই দাদির (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) নাম। তিনি বলছিলেন, “গোলাপি বলের ক্রিকেট দাদির ব্রেনচাইল্ড। এমন ভাবনা ভারতীয় ক্রিকেটে নিয়ে আসার জন্য ওঁর কুর্নিশ প্রাপ্য। দেশের ক্রিকেটে প্রথমবার চালু করার বহু আগেই এমন ঘটনা ঘরোয়া ক্রিকেটে উনি নিয়ে এসেছিলেন। গোলাপি বলে টেস্ট যে আধুনিক ক্রিকেটের দাবি এবং দর্শকদের কাছে আকর্ষণ নিয়ে হাজির হবে, সেটা দাদিই প্রথম বুঝেছিলেন। সৌভাগ্যক্রমে সুপার কাপের ফাইনালেই ওপেন করতে নেমেছিলাম আমি। এখন সুপার লিগের ফাইনাল গোলাপি বলেই খেলা হয়।”

গোলাপি বলে খেলা কতটা চ্যালেঞ্জিং? জয়জিৎ বলছিলেন, “গোলাপি বলে খেলার সময়ে ব্যাটসম্যানের অ্যাডজাস্টমেন্টটাই আসল। লাল বলের থেকে গোলাপি বল অনেক জোরে আসে। সাধারণ বলের থেকে সুইংও বেশি করে। কারণ বলের শাইন অনেকক্ষণ থাকে। তবে পাটা উইকেটে খেলা হলে, ব্যাটিং করা সহজ। জোরে বল আসার জন্য স্রেফ টাইমিংয়েই বল বাউন্ডারিতে পাঠানো সম্ভব।”

Mohun Bagan Joyjit Basu
জয়জিৎ বসুদের হাত ধরে একের পর এক সাফল্য মোহনবাগানে (সংগৃহীত)

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রিভার্স সুইংয়ের মাস্টার তাঁরই সতীর্থ মহম্মদ শামি। ইডেনে দিন রাতের ম্যাচে তিনি কতটা রিভার্স করাতে পারবেন, তা নিয়ে অবশ্য সন্দিহান জয়জিৎ। তাঁর যুক্তি, “দিন-রাতের ক্রিকেটে শিশির একটা ফ্যাক্টর। খেলা সন্ধে পর্যন্ত গড়ালে শিশির থাকবেই। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে খেলা। তখন শিশিরের পরিমাণ আরও বাড়বে। বল একবার ভিজে গেলে রিভার্স সুইংয়ের সম্ভবনা প্রায়ই নেই-ই।”

সেক্ষেত্রে পেসারদের থেকে চ্যালেঞ্জ বেশি স্পিনারদের। কীভাবে? “জোরে বোলাররা কোনওরকমে বল করতে পারলেও, স্পিনারদের গ্রিপ করতে অসুবিধা হবে। তবে এখন আন্তর্জাতিক স্তরে আউটফিল্ডে একধরণের রাসায়নিক দেওয়া হয়। যাতে শিশির শুষে নেয়।” নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানাচ্ছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটে সফল মুখ।

আরও পড়ুন গৌরবের ইতিহাস নিয়ে সোনার গোলার্ধে, বিখ্য়াত দুই ক্লাবের সঙ্গে আলোচনা মোহনবাগানের

গোলাপি বলেও রিভার্স সুইং সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে কিছু শর্ত রয়েছে। তাঁর বিশ্লেষণ, “পিচ খুব শুকনো থাকলে, বলের একদিকের পালিশ উঠবে। তখন রিভার্স সুইং সম্ভব। তবে বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাঠের আউটফিল্ডের মান ভীষণ ভাল। তাই বলের পালিশ আউটফিল্ড থেকে ওঠার সম্ভবনা নেই। তখন পিচই ভরসা।”

প্রখ্যাত বাচিকশিল্পী জগন্নাথ বসু এবং ঊর্মিমালা বসু সম্পর্কে জেঠু-জেঠিমা হন। বিখ্যাত বসু পরিবারের তারকা ক্রিকেটার মুখিয়ে রয়েছেন ডে-নাইট টেস্টের জন্য। বলছিলেন, “ইডেনে খেলা থাকলে মিস করি না। সিএবি-র অনারারি মেম্বার। সেই টিকিটেই খেলা দেখতে যাব।”

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Sports news download Indian Express Bengali App.

Web Title: India vs bangladesh day night test in eden gardens will be a historic one says indias first pink ball cricketer jayojit basu