শেষমেশ কিছুটা ভাগ্যের জোরেই ১-১ স্কোরে শেষ হলো খেলা। মঙ্গলবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে অবস্থা যেদিকে যাচ্ছিল, বাংলাদেশ ১, ভারত ০ হলেও কিছু বলার থাকত না।
ম্যাচের আগে মনে হচ্ছিল, এক পয়েন্ট পেলেই খুশি বাংলাদেশ। সে জায়গায় তিন পয়েন্ট পাওয়ার উপক্রম করে ফেলল তারা, সৌজন্যে ম্যাচের ৪২ মিনিটের মাথায় সাদ উদ্দিনের হেড, যা স্তম্ভিত বিস্ময়ে, এবং নীরবে, দেখল গোটা স্টেডিয়াম। ভারতের মান বাঁচানোর দায় নিজের কাঁধে তুলে নেন ডিফেন্ডার আদিল খান, ৮৯ মিনিটের মাথায় ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজের কর্নারকে কামানের গোলায় পরিণত করে।
তবে মান আর পুরোপুরি বাঁচল কই। ভারতের জিতের ঘরে শূন্য, ড্রয়ের ঘরে দুই। ফলস্বরূপ, গ্রুপ ই-তে বর্তমানে চতুর্থ স্থানে সুনীল ছেত্রীর দল।
যে দল কাতারের বিরূদ্ধে গোলশূন্য ড্র করে, তাতে তিনটি পরিবর্তন করেন ভারতের হেড কোচ ইগর স্টিম্যাচ। নিখিল পূজারি, সাসপেন্ড হওয়া রোলিন ব্রগেস, এবং জখম সন্দেশ ঝিঙ্গনের বদলে মাঠে নামেন আশিক কুরুনিয়ান, সুনীল ছেত্রী, এবং আনাস এদাথোদিকা। বাংলাদেশ কিন্তু অপরিবর্তিত রাখে সেই টিম, যা গত সপ্তাহে খেলেছিল এশিয়ান চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে।
প্রথমেই নড়ে যায় 'ব্লুজ':
খেলা শুরুর পর ২০ সেকেন্ড হয়েছে কী হয় নি, রাহুল ভেকে অফসাইডের খোঁজে মনোসংযোগ হারিয়ে বিপ্লো আহমেদকে বক্সে ঢুকে যেতে দিলেন বল সমেত। এরপর মূহুর্তের আতঙ্কের জেরে আহমেদের পায়ে হাল্কা ছোঁয়া রেফারির নজরে না পড়ায় জোর বেঁচে যান ভেকে। রাইট ব্যাক হিসেবে ভেকের জান প্রাণ দিয়ে খেলাটা আশ্চর্যের বিষয় নয়, কিন্তু তিনি নিজেও বোধহয় ঠিক এমনটা ভাবেন নি। কারণ কিছুক্ষণের মধ্যেই বক্সের ভেতরে আরও একটি সন্দেহজনক ট্যাকলের দৌলতে ফের একবার পেনাল্টির সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলেন তিনি।
প্রথম দশ মিনিটেই বোঝা গিয়েছিল, সহজে লড়াই ছাড়বে না বাংলাদেশ, এবং ভারতীয় সমর্থকরা যে একপেশে খেলা দেখতে এসেছিলেন, তার সম্ভাবনা কম। বিশেষ করে বাংলাদেশ গোটা দুয়েক বিপজ্জনক সুযোগ সৃষ্টি করার পর।
জমে গেল খেলা:
শুরু থেকেই দেখার মতো ছিল বাংলাদেশের পজিশনাল প্লে। বারবার তাদের অভ্যস্ত ৪-৪-২ প্যাটার্ন ভেঙে ৪-৫-১ বা ৪-২-৩-১ করে ফেলে ভারতের ওপর ব্যূহ ভেদ করার চাপ সৃষ্টি করছিল তারা।
প্রাণপণে দুরন্ত গতি বজায় রেখে প্রথমার্ধের শেষ ভাগে অবশেষে সাফল্যের মুখ দেখে বেঙ্গল টাইগার্স। বাঁদিক থেকে আসা ফ্রি-কিকের মোকাবিলা করতে গিয়ে নিজের লাফের টাইমিং খুইয়ে বলের সঙ্গে কানেক্ট করতে অসমর্থ হন গুরপ্রীত সিং সন্ধু। এবং ফাঁকা গোলে অনায়াসে প্রবেশ করে সাদের হেড।
মূল দোষ সেই রাহুল ভেকের, কারণ বোকার মতো ফ্রি-কিক দিয়ে গোলের রাস্তা করে দেন তিনিই। বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়ার শটের জবাব ছিল না ভারতের কাছে, এবং গুরপ্রীতের স্বভাববিরুদ্ধ জড়তার পূর্ণ সুযোগ নেন সাদ উদ্দিন।
অবাক করা স্ট্র্যাটেজি
সল্টলেক স্টেডিয়ামের চওড়া পিচকে কাজে লাগিয়ে এক-আধবার আশা জাগালেও মোটের ওপর অবাক করার মতোই ছিল ভারতের স্ট্র্যাটেজি। কাতারের বিরুদ্ধে যে খেলার ঝলক দেখা গিয়েছিল, তা পরিত্যাগ করে কেন যে মাটিতে না খেলে 'লং বল' নীতিতে চলল ভারত, তা বোধগম্য হলো না। হয়তো বাংলাদেশকে কিছুটা চমকে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল।
যদিও শেষরক্ষা করলেন আদিল, প্রথমার্ধের নড়বড়ে ডিফেন্সের কল্যাণে ম্যাচে সেভাবে ফিরতেই পারল না ভারত। দিনের শেষে হতাশাজনক এই পারফরম্যান্স 'ব্লু টাইগার'দের কোয়ালিফিকেশনের দৌড়ে এতটাই পেছনে ঠেলে দিল, যে সেখান থেকে ফেরার চেষ্টা করার কথাও ভাবা যাচ্ছে না আপাতত।