Advertisment

ফিরে দেখা: ইডেনের সেরা পাঁচটি স্মৃতি

ঐতিহাসিক ইডেনেই প্রথম গোলাপি বলের ম্যাচ। ক্রিকেট ইতিহাসে অসংখ্যবার ইডেনে নতুন রেকর্ড ভাঙা-গড়া হয়েছে। ক্রিকেটের নন্দনকাননের সেরা পাঁচ স্মৃতি বাছাই করার কাজ সত্যিই দুরূহ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
eden gardens india bangladesh test

ইডেন গার্ডেন্স

নভেম্বরের ২২ তারিখে কলকাতা ভারতের প্রথম টেস্ট ম্যাচ আয়োজন করতে চলেছে। প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ। সিএবি-র কর্ণধার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, দিন-রাতের টেস্টে সাধারণ টেস্টের তুলনায় দর্শক অনেক বেশি আসবেন। সেই ধারণা সত্যি প্রমাণ করেই ইডেন টেস্টের টিকিটের জন্য কাড়াকাড়ি শহরে। টিকিট-বুভুক্ষু ঘুরে বেড়াচ্ছেন স্টেডিয়ামের আশেপাশে।

Advertisment

ঐতিহাসিক ইডেনেই প্রথম গোলাপি বলের ম্যাচ। ক্রিকেট ইতিহাসে অসংখ্যবার ইডেনে নতুন রেকর্ড ভাঙা-গড়া হয়েছে। ক্রিকেটের নন্দনকাননের সেরা পাঁচ মুহূর্ত বাছাই করার কাজ সত্যিই দুরূহ। তবে অসংখ্য মণি-মাণিক্যের মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া হলো এই পাঁচটি মুহূর্ত -

কানহাইয়ের মাস্টারক্লাস: ১৯৪৮ সালে প্রথমবার ইডেনে টেস্ট খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১০ বছর পরে দ্বিতীয়বার ভারত সফরের সময় আরও শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলেছিল ইডেনে। সেই সফরে অনায়াসেই ভারতকে ৩-০ হারিয়েছিল ক্যারিবিয়ান দল। সেই স্কোয়াডেই ছিলেন দ্বিতীয় ভারতীয় বংশোদ্ভূত ক্রিকেটার রোহন কানহাই। ইডেনে ২৫৬ করে ২৩ বছরের কানহাই নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। ১৯৫৮ সালের শেষ দিনে ম্যাচ শুরু হয়েছিল। প্রথম দিনের শেষে কানহাই ২০৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। ৪৭ বছর ধরে ভারতে সফররত কোনও দলের হয়ে সর্বোচ্চ স্কোর ছিল কানহাইয়ের ২৫৬। ৪৩ বছর ধরে সেই ইনিংসই ছিল ইডেনের পিচে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের নজির।

আরও পড়ুন, ইডেনেই কেন গোলাপি বলে দিন রাতের টেস্ট?

কপিল দেবের হ্য়াটট্রিক: ১৯৯১ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে কপিল দেব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একমাত্র হ্য়াট-ট্রিক করেন ইডেনে। বিপক্ষে ছিল শ্রীলঙ্কা। কপিল দেব নিজের ওভারের শেষ বলে আউট করেছিলেন রোশন মহানামাকে। পরের ওভারে বল করতে এসে পরপর সনৎ জয়সুরিয়া এবং রমেশ রত্নায়েকে-কে ফিরিয়ে হ্যাট-ট্রিক সম্পন্ন করেন ভারতের প্রথম বিশ্বকাপজয়ী ক্যাপ্টেন। ভারতের সেলিব্রেশনের ধুমে কপিলের হ্য়াট-ট্রিক অনেক দর্শকেরই চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল। জায়ান্ট স্ক্রিনে ইনিংসের শেষে পরিসংখ্যান দেখানোর পরে দর্শকরা বুঝতে পারেন কপিল হ্যাট-ট্রিক করেছেন।

হিরো কাপ জয়: ১৯৯৩ সালে হিরো কাপ জয়ের মুহূর্ত এখনও ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। ইডেনের ৬০ বছরের পূর্তি উপলক্ষ্যে হিরো কাপের আয়োজন করা হয়েছিল। ইডেনই ভারতের প্রথম স্টেডিয়াম যেখানে ফ্লাডলাইটে খেলা হয়। হিরো কাপে ভারত দারুণ পারফর্ম করে সেমিফাইনালে জিতে ফাইনালেও উঠে গিয়েছিল। সেমিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ভারত ফাইনালে ওঠে। শেষ ওভারে জয়ের জন্য় প্রোটিয়াদের প্রয়োজন ছিল ৬ রান। দমবন্ধ করা সেই শেষ ওভার স্বেচ্ছায় বল করেছিলেন তরুণ শচীন তেন্ডুলকর, এবং চার রানের বেশি নিতে দেন নি প্রতিপক্ষকে।

আরও পড়ুন, গোলাপি বলে দিন-রাতের টেস্ট: যা যা আপনি জানতে চান

ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টসে জিতে ভারতকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিল ক্যারিবিয়ানরা। প্রথমে ব্যাট করে ভারত ৭ উইকেট হারিয়ে ২২৫ তুলেছিল। হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন বিনোদ কাম্বলি। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস তরতরিয়ে এগোচ্ছিল। স্বচ্ছন্দে ব্যাটিং করছিলেন ব্রায়ান লারা। তবে শচীন ব্রেক থ্রু আনার পরে কপিল দেব পরপর দু-উইকেট তুলে নেন।

স্কোরবোর্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজের শতরান ঘোষণা করতেই কুম্বলে ম্যাজিক শুরু হয়ে যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষ ৬ উইকেট হারায় মাত্র ২২ রানে। কুম্বলে ১২ রানের বিনিময়ে হাফ ডজন উইকেট দখল করেন। যে কোনও ভারতীয়ের সেরা বোলিং পারফরম্যান্স ছিল এটিই। তবে স্টুয়ার্ট বিনি পরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চার রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট নিয়ে কুম্বলের নজির পেরিয়ে যান।

লক্ষ্মণ-দ্রাবিড়ের অবিস্মরণীয় কীর্তি: ইডেনে ২০০১-এ ভারতের টেস্ট জয় ক্রিকেটের লোকগাথায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে। টানা ১৬টি ম্যাচ জিতে স্টিভ ওয়ার অপ্রতিরোধ্য অস্ট্রেলিয়া ভারতে খেলতে এসেছিল। প্রথম টেস্টেই ভারতকে মুম্বইয়ে হারিয়ে কলকাতায় নামে তারা। এবং কলকাতা থেকেই অস্ট্রেলিয়া দলের শেষের শুরু।

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া ২ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ২১৪ তুলে দিয়েছিল। তারপরেই হ্যাট-ট্রিক করেন হরভজন সিং। রিকি পন্টিং, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট এবং শেন ওয়ার্নকে পরপর ফিরিয়ে দেন। তবে গিলেসপি ও ম্যাকগ্রা'র সহায়তায় স্টিভ ওয়া অস্ট্রেলিয়াকে ৪৪৫-এ পৌঁছে দেন। দ্বিতীয় দিনে ভারত স্কোরবোর্ডে ১২৮ তুলতেই খুইয়ে ফেলেছিল ৮ উইকেট।

ভারত ফলো-অন হজম করার পরে নিশ্চিত হারের সামনেই দাঁড়িয়েছিল সৌরভ বাহিনী। তৃতীয় দিন লক্ষ্মণ ও দ্রাবিড় জুটি বাঁধার পরেও অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ২০ রান পিছিয়ে ছিল ভারত। কিন্তু ম্যাচের চতুর্থ দিনে অবিশ্বাস্য কীর্তি স্থাপন করেন দুই ভারতীয়। গোটা দিন ব্যাটিং করে পুরোপুরি হতোদ্যম করে দেন অজি বোলিংকে। লক্ষ্মণ ২৮১ করে আউট হন। দ্রাবিড় ১৮০ তোলেন। পরে বল করতে নেমে শচীন ও হরভজনের সামনে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং নতজানু হয়। এবং ফলো-অন হজম করেও ম্যাচ জেতার বিরলতম নজির গড়ে ভারত। আজ পর্যন্ত ইডেনে ভারতের সবচেয়ে ঐতিহাসিক জয় সম্ভবত এটি।

রোহিত ঝড়: ২০১৪ সালে ইডেনের ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে রোহিত শর্মার ব্যাটিং। এক বছর আগেই শচীনের ১৯৯তম টেস্টে অভিষেক হয় রোহিতের। ২০১৪-য় বিধ্বংসী ফর্মে ইডেনে নামেন রোহিত। সমস্ত রেকর্ড তছনছ করে দেন একাই। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে-তে ৩৩ টি বাউন্ডারি ও ৯ টি ওভার বাউন্ডারি মেরে একাই ২৬৪ রানের ইনিংস খেলেন। বোলারদের নিয়ে কার্যত ছেলেখেলা করেছিলেন তিনি সেদিন। অজন্থা মেন্ডিস, কুলশেখরার কেরিয়ারই খতম করে দিয়েছিলেন ইডেনের মাটিতে।

Harbhajan Singh Eden Gardens Rohit Sharma
Advertisment