Advertisment

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান খেলাক ভারত

আর ঘণ্টাকয়েক পরেই এজবাস্টনে মুখোমুখি ভারত-ইংল্য়ান্ড। ভারত জিততে পারলেই পৌঁছে যাবে ট্রফির অনেকটা কাছে। আমাদের বিশ্বকাপ বিশেষজ্ঞ শরদিন্দু মুখোপাধ্যায় এই ম্যাচের প্রিভিউ করলেন

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
reason-behind-indias-semifinal-loss-againgst-newzeland

কেন হারল ভারত, কী বলছেন শরদিন্দু মুখোপাধ্য়ায়!

আর ঘণ্টাকয়েক পরেই এজবাস্টনে মুখোমুখি ভারত-ইংল্যান্ড। ভারত জিততে পারলেই পৌঁছে যাবে ট্রফির অনেকটা কাছে। আমাদের বিশ্বকাপ বিশেষজ্ঞ শরদিন্দু মুখোপাধ্যায় এই ম্যাচের প্রিভিউ করলেন। চলতি বিশ্বকাপের সম্ভবত দুই সেরা ব্যাটিং দল আজ মাঠে নামছে। শরদিন্দু কথা বললেন সম্ভাব্য ব্যাটিং লাইন-আপ নিয়ে।

Advertisment

ইংল্যান্ড দলের এখন চিত্রটা ঠিক কী?

জেসন রয়ের চোট-আঘাতজনিত সমস্যার জন্য টিম থেকে ছিটকে যাওয়াটা ইংল্যান্ডের কাছে বিশাল আঘাত। জেমস ভিন্স কিছুতেই রয়ের পরিপূরক হতে পারলেন না। তাঁর জন্যই জনি বেয়ারস্টো এবং জো রুট চাপে থাকছেন। মিডল অর্ডারের ওপরেও বিরাট চাপ পড়ছে। রয় শুধু রানই করতেন না, অত্যন্ত দ্রুত গতিতে রান করতে পারতেন। সেট হয়ে গেলে বড় রান করে দিতেন। ইংল্যান্ডের টোটাল স্কোর কিন্তু গত এক বছরে ৩০০-র গণ্ডী পেরিয়েছে। অবশ্যই তার অন্যতম কৃতিত্ব রয়ের। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গত ম্যাচেও ভিন্স আউট হয়ে গেলেন শূন্য রানে। মর্গ্যান (৪) আর রুট (৮) রান করতে পারেন নি। মিডল অর্ডার সেই চাপে পড়ে গেল। রয় যদি ফিট হয়ে যান তাহলে খেলবেন। এটা হতে পারে যে জস বাটলার ওপেন করতে নামলেন। আমি বলব ভারতের বিরুদ্ধে লিয়াম প্লানকেটকে খেলাক ইংল্যান্ড। তিনি কিন্তু ব্যাটে-বলে ফারাক গড়ে দিতে পারেন। ফলে টেলটা লম্বা হবে। বোলারদের মধ্যে মার্ক উড আর জোফ্রা আর্চার দুরন্ত ফর্মে রয়েছেন। একজন স্পিনার হিসেবে আদিল রশিদ খেলুন।

জো রুটকে কিভাবে আটকাবে ভারত?

এই ইংল্যান্ড ব্যাটিং লাইন আপে কিন্তু জো রুটের কথা আলাদা করে বলতেই হবে। উনি হচ্ছেন আধুনিক ক্রিকেটের সনাতনী ব্যাটসম্যান। প্রথাগতভাবেই ক্রিকেটটা খেলেন। বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একজন রুট। অবশ্যই বিগ-থ্রি-তে তিনি। ফলে রুটকে সহজে আউট করা সম্ভব নয়। এখন প্রশ্ন, ভারত কিভাবে রুটকে আউট করবে। রুটকে তাঁর কমফোর্ট জোনের বাইরে আনতেই হবে। তাঁর জন্য বিরাটদের একটাই পরিকল্পনা থাকা উচিত। রুটকে অফস্টাম্প আর অফস্টাম্পের বাইরে বল করে যেতে হবে। যত বেশি ডট বল হবে, তত চাপ বাড়বে। রুটের ব্যাকফুট পাঞ্চটা দুর্দান্ত ভাল। একটা কাজ করতে হবে। স্লিপ আর গালিতে ফিল্ডার রাখতে হবে বিরাটকে। মহম্মদ শামি আর জসপ্রীত বুমরার কাজই হবে রুটকে আউটসাইড দ্য অফস্টাম্প খেলার আমন্ত্রণ জানানো। রুট কিন্তু উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসবেন না। উইকেটটা তুলে নিতে হবে।

ব্যাটিং অর্ডারে ইংল্যান্ডের কোথায় সমস্যা হচ্ছে?

ইংল্যান্ড বারবার একই ভুল করছে। ওরা কেন বাটলারের মতো একজন ম্যাচ উইনারকে ছয় নম্বরে ব্যাট করাচ্ছে! আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। বাটলার চারে নামুন, মর্গ্যান ব্যাট করুন পাঁচে। আমি একবারও বলছি না যে, মর্গ্যান ম্যাচ উইনার নন, কিন্ত বাটলারের ফর্ম বিচার করেই ওঁকে ব্যাটিং অর্ডারে এগিয়ে আনার কথা বলছি। বাটলার চারে খেললে ইনিংস বিল্ড আপ করে শেষের দিকে আক্রমণ করতে পারেন। ছয়ে ব্যাট করুন বেন স্টোকস। উনি তারপর ইনিংস টেনে নিয়ে যাবেন। স্টোকস কিন্তু ভাল ছন্দে আছেন।

ভারতের চারের সমস্যা এখনও মিটল না, বিজয় শঙ্কর কি বসতে চলেছেন?

আমি বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকে চার নম্বর জায়গাটা নিয়ে কথা বলে আসছি। বারবার বলেছি. আবারও বলছি সেই একই কথা। চারে খেলুন কেদার যাদব। বিজয় শঙ্কর শেষ তিনটে ম্যাচে সুযোগ পেয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন নি। চার নম্বর পজিশনটা স্যুট করছে না ওঁকে। রানও করতে পারছেন না। বোলিংয়েও বিজয়ের ওপর বিরাটের সেরকম আস্থা নেই। তাহলে কেন থাকবেন দলে? বিশ্বকাপে এত সুযোগ কেউ পায় না। যখন রিজার্ভে এত ভাল প্লেয়াররা রয়েছেন, আমার মনে হচ্ছে বিজয় বসবেন। দীনেশ কার্তিক বা ঋষভ পন্থের মধ্যে যে কোনও একজন খেলবেন। দীনেশকেও চারে খেলাতে পারে ভারত। কিন্তু আমার মনে হয়, দীনেশকে এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে চারে খেলালে বাড়তি চাপে ফেলে দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে কেদারই ঠিক আছেন। উনি খেলার মধ্যে আছেন।

ধোনির কী ব্যাটিং অর্ডার হওয়া উচিত? সেট হতে এত সময় নেওয়াটা কতটা চিন্তার?

আমি একটা কথাই বলব। পাঁচে ব্যাট করতে আসুন ধোনি। কারণ নেমেই মারমুখী হতে পারবেন না। সেট হতে সময় লাগে। পাঁচে নামলে সেই সময়টা পাবেন। ছয়ে খেলুন ঋষভ পন্থ, আর সাতে হার্দিক পাণ্ডিয়া। পন্থ আর পাণ্ডিয়াকে এই ব্যাটিং অর্ডারে নামালে ধোনি কিন্তু নিজের ইনিংসটা খেলতে পারবেন, স্লগ ওভারে হাত খুলে খেলতে পারবেন। ৪৫-৫০ ওভার ওঁকে চেনা মেজাজে পাওয়া যাবে। ২০ ওভারের ক্রিকেট নয় এটা, ৫০ ওভারের ক্রিকেট। ফলে ধোনির সেট হওয়া নিয়ে কোনও চিন্তার কারণ আমি দেখছি না অন্তত।

মিডল অর্ডারে ভারতের ব্যর্থতা কতটা ভোগাতে পারে? 

একটা কথা মাথায় রাখতে হবে। রোহিত শর্মা আর বিরাট কোহলিকে কিন্তু রান করতেই হবে। ওঁরা ব্যর্থ হলেই ভারতের মিডল অর্ডার চাপে পড়ে যাচ্ছে। আর এই চাপটা এসে পড়ছে সেই ধোনির ওপরেই। কারণ বিজয় শঙ্কর কোনও রান করতে পারছেন না। একটা বিষয় খেয়াল করে দেখুন, আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ধোনির ২৮ রান আর পার্টনারশিপটা বাদ দিয়ে দিন, একই ভাবে গত ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওঁর ফিফটিও যদি সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে কিন্তু ভারত দু'টো ম্যাচেই হেরে গিয়েছে। আর ধোনি আউট হওয়া মানেই টিমের ফালক্রামটা নষ্ট হয়ে যাবে।

পন্থ আর পাণ্ডিয়া এমন জাতের ব্যাটসম্যান, যাঁরা প্রথম বল থেকেই ছয় মারতে পারেন। ওঁদের ফায়ারওয়ার্কস কিন্তু রানটাকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাবে। পন্থ যদি বড় রান নাও করতে পারেন, ১০ বল খেলে ৩০ রান করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। সেটাই বিরাট পার্থক্য হয়ে যাবে ম্যাচে। শঙ্কর তো বাদ যাবেনই। একান্তই যদি পন্থ সুযোগ না পান, তাহলে কার্তিক খেলবেন। এক্সট্রা ব্যাটসম্যান খেলানোয় টপ অর্ডার ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে ভারত। পন্থ খেললে মিডল অর্ডারে একটা বাঁ-হাতি আর ডান-হাতি কম্বিনেশনও কাজ করবে।

ম্যাচ এজবাস্টনে। কেমন আচরণ করে ওখানের পিচ?

এখন কিন্তু বৃষ্টি দেখছে না ইংল্যান্ড। রৌদ্রজ্জ্বল, ঝকঝকে পরিবেশেই খেলা হচ্ছে। আস্তে আস্তে ইংল্যান্ড কিন্তু মিড সামারে চলে যাচ্ছে। আর বিশ্বকাপের অধিকাংশ উইকেটেই ম্যাচ হয়ে গিয়েছে। ফলে উইকেট থেকে যে বিরাট কিছু সাহায্য পাওয়া যাবে, সেটা বলা সম্ভব নয়। তবে টস জিতে ভারতের ব্যাট করা উচিত।

ইংল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের প্রথম একাদশ কী হতে পারে? 

রোহিত শর্মা, কেএল রাহুল, বিরাট কোহলি, দীনেশ কার্তিক/কেদার যাদব, এমএস ধোনি, ঋষভ পন্থ, হার্দিক পাণ্ডিয়া, যুজবেন্দ্র চাহাল, মহম্মদ শামি, কুলদীপ যাদব এবং জসপ্রীত বুমরা।

India England Cricket World Cup
Advertisment