নিউজিল্যান্ড সফরের শুরুটা যতটা ভাল হয়েছিল ভারতের, শেষ হলো ততটাই খারাপ ভাবে। তিনটে টি-টুয়েন্টিতেই কিউয়িদের হারিয়ে টগবগ করে ফুটছিল বিরাটের টিম।উলটপুরাণের শুরু তারপর থেকেই। ওয়ান-ডে সিরিজের তিনটে ম্যাচেই হেরেছিল টিম ইন্ডিয়া। বাকি ছিল দুই টেস্টের সিরিজ। তাতেও ভারতের 'হোয়াইটওয়াশ' সম্পন্ন হলো আজ ক্রাইস্টচার্চে। আড়াই দিনে ম্যাচ শেষ।
ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস ১২৪-এ মুড়িয়ে দিয়ে জেতার জন্য প্রয়োজনীয় ১৩২ কিউয়িরা হাসতে হাসতে তুলে দিলেন মাত্র তিন উইকেট হারিয়ে। সিরিজ উইলিয়ামসনদের পকেটে, ২-০। সাত উইকেটে লজ্জার হার বিরাট-বাহিনীর। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট সিরিজে ১৮ বছর পর এ হেন 'হোয়াইটওয়াশ' ঘটল ভারতের। প্রত্যাশিতভাবেই টিম সাউদি 'ম্যান অফ দ্য সিরিজ' আর কাইল জেমিসন ম্যাচের সেরা।
চূড়ান্ত একপেশে ভঙ্গিতে আজ ভারত-বধ সম্পন্ন করল নিউজিল্যান্ড। ফোর্থ ইনিংসে অন্তত ২০০ রানের টার্গেট কিউয়িদের সামনে রাখতে পারলে তবু শামি-বুমরারা একটা পুঁজি পেতেন মরিয়া শেষ চেষ্টার। হনুমা-পন্থ-জাদেজারা ন্যূনতম প্রতিরোধও গড়তে পারলেন না। গতকালের ৯০-৬ থেকে ভারত গুটিয়ে গেল ১২৪-এ। বাকিটা এক লাইনে লিখে ফেলা যায়। হেলাফেলায় নিউজিল্যান্ডের ১৩২-৩, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শীর্ষে থাকা ভারতের লজ্জার 'হোয়াইটওয়াশ'-এর সাক্ষী থাকল ক্রাইস্টচার্চ।
দুই টেস্টের এই সিরিজ দ্রুত ভুলে যেতে চাইবেন বিরাটরা। প্রাপ্তি বলতে শুধু সদ্য শেষ-হওয়া টেস্টের প্রথম ইনিংসে শামি-বুমরাদের বোলিং। আর জাদেজার ওই অবিশ্বাস্য 'দশক-সেরা' ক্যাচ। বাকিটা শুধুই আশঙ্কা আর দুশ্চিন্তার খতিয়ান। বিদেশে বিশ্বমানের সিম-সুইং খেলায় টপ অর্ডারের দুর্বলতা ফের দৃষ্টিকটুভাবে প্রকট। ময়াঙ্ক-পৃথ্বীর ওপেনিং জুটি নির্ভরতা দিতে পারেনি। শর্ট বলে পৃথ্বীর টেকনিকের গলদ ধরা পড়ে যাচ্ছে, বিদেশে সফল হওয়া কঠিন হবে মুম্বইয়ের তরুণের।
সিনিয়রদের মধ্যে পূজারা-রাহানেরাও সঙ্কটের মুহূর্তে মুশকিল আসান হতে দুটো টেস্টেই ব্যর্থ। ঋদ্ধিমান সাহার বদলে প্রথম এগারোয় ঋষভকে নেওয়া হয়েছিল ব্যাটিংয়ের জন্য। চারটে ইনিংস সুযোগ পেয়েছিলেন এবং অশ্বডিম্ব প্রসব করেছেন। এবং সবচেয়ে জরুরি, ক্যাপ্টেন কোহলির ব্যাটে রানের খরা। দুঃস্বপ্নের সিরিজ গেল বিরাটের। যার মাশুল দিতে হলো ভারতকে। টিমের সেরা ব্যাটের থেকে যদি চারটে ইনিংসের একটাতেও পঞ্চাশও না আসে, ভুগতে তো হবেই।
কয়েক সপ্তাহ পরেই আইপিএল শুরু। চার-ছক্কা হইহইয়ের মাঝে এই লজ্জার হোয়াইটওয়াশের স্মৃতি ফিকে হয়েই যাবে কিছুটা। কিন্তু যে অস্বস্তিকর প্রশ্নগুলো টেস্টে খাতায়-কলমে বিশ্বের এক নম্বর টিমের সামনে ছুড়ে দিল এই সিরিজ, সেগুলো তো থেকেই যাবে। যে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বার করতে না পারলে বিদেশে এমন লজ্জা কিন্তু আরও অপেক্ষা করে থাকবে। দেশে তো সবাই জেতে। বিদেশে নিয়মিত জিতলে তবেই না এক নম্বর!