কোহলিদের মিশন ম্যাঞ্চেস্টার, চোক করবে কি নিউজিল্যান্ড?

আজ ম্যাঞ্চেস্টারে মহারণ। ওল্ড ট্র্যাফোর্ড ক্রিকেট গ্রাউন্ডে মুখোমুখি ভারত-নিউজিল্যান্ড। চলতি বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে যুযুধান দুই পক্ষ। লিগের ফার্স্ট বয় বিরাট কোহলির সঙ্গে ফোর্থ বয় কেন উইলিয়ামসনের 'আমনা-সামনা'।

আজ ম্যাঞ্চেস্টারে মহারণ। ওল্ড ট্র্যাফোর্ড ক্রিকেট গ্রাউন্ডে মুখোমুখি ভারত-নিউজিল্যান্ড। চলতি বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে যুযুধান দুই পক্ষ। লিগের ফার্স্ট বয় বিরাট কোহলির সঙ্গে ফোর্থ বয় কেন উইলিয়ামসনের 'আমনা-সামনা'।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
reason-behind-indias-semifinal-loss-againgst-newzeland

কেন হারল ভারত, কী বলছেন শরদিন্দু মুখোপাধ্য়ায়!

আর কয়েক ঘণ্টা পরেই ম্যানচেস্টারে মহারণ। ওল্ড ট্র্যাফোর্ড ক্রিকেট গ্রাউন্ডে মুখোমুখি ভারত-নিউজিল্যান্ড। চলতি বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে যুযুধান দুই পক্ষ। লিগের ফার্স্ট বয় বিরাট কোহলির সঙ্গে ফোর্থ বয় কেন উইলিয়ামসনের 'আমনা-সামনা'। ২০০৮-এর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বিরাট-কেন মুখোমুখি হয়েছিলেন। আবার ২০১৯-এ দেখা হচ্ছে তাঁদের। এই ম্যাচে আর কোনও রি-টেকের সুযোগ নেই। জিতলে ফাইনাল, হারলে বিদায়। ম্যাচের প্রিভিউ করলেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়

Advertisment

প্রত্যাশার বোঝা কি ভারতের ঘাড়ে? তুলনায় চাপমুক্ত নিউজিল্যান্ড? 

অবশ্যই ভারতের ঘাড়ে প্রত্যাশার বোঝা থাকবে। ভারত দু'বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। কিন্তু কিছুটা বোঝা নিউজিল্যান্ডের ঘাড়েও রয়েছে। কারণ ওরা গতবারের ফাইনালিস্ট। চারবার সেমিফাইনাল খেলেও বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো নিউজিল্যান্ডও যে চোকার্স নয়, এই কথাটা বলা যাচ্ছে না। ফলে প্রত্যাশার চাপ দু'তরফেই। সবচেয়ে বড় কথা, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি রিজার্ভ-ডে'তেও বৃষ্টি হতে পারে। আগে দেখেছি, ইংল্যান্ডের চলতি গ্রীষ্মে সকলেই টস জিতলে ব্যাট করছিল। কিন্তু স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় হিসাবটা পুরো আলাদা। যে কোনও দল চাইবে টসে জিতে ফিল্ডিং করতে। কারণ এই আবহাওয়ায় বল নড়বে, সিম করবে। কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে, ডিএলএস মেথডে পরে ব্যাট করলে সুবিধা হবে। টার্গেট চোখের সামনে চলে আসবে। আমি বলব, ইট উইল বি আ গুড টস টু লুজ।

এবার প্রথমে ব্যাট করে জিতেছে অধিকাংশ দল। শুরুর আগে পিচের ছবিটা এতটা একপেশে ছিল না। পাল্টে গেল কীভাবে?

Advertisment

ছবিটা পাল্টে গেল কারণ বৃষ্টিটা বদলে গেল। এবার বিশ্বকাপে প্রতিনিয়ত বৃষ্টি দেখেছি। বেশ কয়েকটা ম্যাচ বৃষ্টির জন্য ভেস্তেও গেছে। কিন্তু আবহাওয়াটা পুরো বদলে গেল। একদম ঝকঝকে রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশের নীচেই খেলা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে রোদে শুকিয়ে যাওয়া উইকেটে দুু-তিনবার খেলা হয়েছে। স্পিনাররাও সুযোগ পেতে থেকেছেন। পেস বোলারদের কাছে উইকেট বধ্যভূমি হয়ে গেল। সুইং বোলারদের জন্য আরও কঠিন। বল নড়াচড়া করে না, একদম সোজা সোজা ব্যাটে আসে। ব্যাটিং সহায়ক উইকেট হয়ে গেল। যাঁরা উইকেট পাচ্ছেন তাঁরা অত্যন্ত স্কিলফুল। নতুন বলেও উইকেট নিতে জানেন, ডেথ ওভারেও উইকেট পান। স্লোয়ার, স্লোয়ার বাউন্সার আর ইয়র্কার ব্য়বহার করছেন। যেমন জসপ্রীত বুমরা। শুরু-মিডল এবং শেষের দিকে উইকেট নিতে জানেন। একদিনের খেলাটা তালুবন্দি করে ফেলেছেন। কোন উইকেটে কী বল করতে হবে, সেটা নখদর্পণে।

ভারত যে দাপটের সঙ্গে সেমিতে উঠেছে, নিউজিল্যান্ড সেভাবে ওঠেনি। লড়াইয়ের জন্য কে বেশি প্রস্তুত?

নিউজিল্যান্ড তিনটি ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপ শুরু করেছে। লিগ পর্যায়ে বৃষ্টির জন্য দু'দলের খেলা হয়নি। কিন্তু ওয়ার্ম-আপ ম্যাচে ভারত হেরেছিল কিউয়িদের কাছে। ভারত যে রিদম আর ফর্মে আছে তাতে অবশ্যই বলব, ভারত এগিয়ে আছে। সে ব্যাটিং হোক বা বোলিং। কিন্তু একটা জায়গায় নিউজিল্যান্ড একটু হলেও এগিয়ে। ওরা এই টুর্নামেন্টে অন্য মানের ফিল্ডিং করছে। ভারতও কিন্তু ভাল ফিল্ডিং করেছে। কিন্তু কিউয়িরা অবিশ্বাস্য। ওরা এই বিভাগে ভারতের থেকে এগিয়ে। ওরা যদি কিছু অসাধারণ রান আউট করে বা ক্যাচ নেয়, আমি অবাক হব না।

রোহিত ফ্যাক্টর কতটা তফাত গড়ে দেবে?

যিনি পাঁচ পাঁচটা বিশ্বকাপ সেঞ্চুরি করেন, তিনি যে অবশ্যই একটা ফ্যাক্টর তা আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। বিশ্বকাপের প্রায় সব রেকর্ডই রোহিত ভেঙে ফেলেছেন। এর আগেও বলেছি, আবারও বলছি, রোহিতের ওপেন করতে নেমে রান করাটা খুব দরকার। রোহিত খেললেই ভারত ৩০০-র গণ্ডী অনায়াসে পেরিয়ে যাচ্ছে। যে ম্যাচগুলোয় রোহিত ভাল খেলতে পারেন নি, সে ম্যাচগুলোয় ভারত বড় রান করতে পারেনি। আফগানিস্তান আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচই দেখা যাক। আফগানদের বিরুদ্ধে রোহিতের ব্যাট থেকে এসেছিল এক রান। ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে ১৮ রান করেন তিনি। রোহিত ৩০-৩৫ ওভার ব্য়াট করতে পারেন। ফলে ওঁর বড় রান করাটা অত্যন্ত জরুরি। রোহিতের সঙ্গে বাকি ব্যাটসম্যানদের ভাল পার্টনারশিপ হলেই রান ৩০০ পেরিয়ে যায়। ৩২৫-৩৩০ রান কিন্তু উইনিং টোটাল হয়ে যাবে।

মিডল অর্ডারের সমস্যা কিন্তু সেমির আগেও থেকে গেল। কী বলবেন?

আমি এখনও মনে করি চার নম্বরে ঋষভ পন্থের আসা উচিত নয়। সেখানে দীনেশ কার্তিকের আসা উচিত। যদি কার্তিক খেলেন। পাঁচে আসুন ধোনি। ছয়ে আসুন পন্থ। তেমন হলে ধোনিকে চারে খেলিয়ে পাঁচে কার্তিককে আনানো হোক। কারণ কার্তিক সেট হতে ধোনির মতো সময় নেন না। যদি তুমি ২৫-৩০ ওভার পন্থকে দাও, উনি কিন্তু ইনিংস বিল্ড-আপ করতে পারবেন না। ওঁর মধ্যে সেই ব্য়াপারটা এখনও আসেনি। আমি চাই পন্থ ১০ ওভার খেলুন, ৪০-৫০ করুন। তেমন হলে ১০ বল খেলে ২০-৩০ রান করুন। ওঁর সঙ্গে হার্দিক পাণ্ডিয়া রয়েছেন। ভারতের রান এমনিই ৩০০ পেরিয়ে যাবে। ভারত যদি চারের সমস্যা এখনও মেটাতে না পারে, তাহলে সমস্যা হয়ে যাবে। টপ অর্ডার ব্য়র্থ হলে ফের সেই ধোনির ওপর গিয়ে চাপটা পড়বে।

মাঠে ফিরছেন লকি ফার্গুসন। কতটা জোর পাবে নিউজিল্যান্ড? 

নিউজিল্যান্ড অসম্ভব শক্তিশালী হয়ে গেল। ফার্গুসন ৯০ মাইলের বেশি গতিতে বল করেন। স্লোয়ার-ইয়র্কার দিতে পারেন। ওয়ান-ডে ক্রিকেটের জন্য় একেবারে আদর্শ। ফার্গুসন ফিরে আসায় নিউজিল্য়ান্ডের বোলিং আক্রমণের পালে হাওয়া এল। উইকেট তুলে নিচ্ছিলেন এবং ফর্মে ছিলেন। বিশ্বকাপে দুরন্ত বল করছিলেন। শুরুর দিকেই হোক বা ম্যাচের মাঝখানে, এমনকী শেষের দিকেও উইকেট পাচ্ছিলেন। সেভাবে রানও দেন নি তিনি। বোলিং ইউনিটটা দুরন্ত শক্তিশালী হয়ে গেল। এবার ওরা জোরে বোলিংয়ের ভিত্তিতেই খেলবে।

পাওয়ার-প্লের শুরুতে যদি ওরা ভারতের উইকেট তুলে নিতে পারে, তাহলে ভারত মারাত্মক চাপে থাকবে।ট্রেন্ট বোল্ট, ম্য়াট হেনরি, জিমি নিশাম, কলিন ডে গ্রান্ডহোম রয়েছেন। যদি বৃষ্টি হয়, ওঁরা সেই আবহাওয়ার পুরো ফায়দা তুলবেন। যদিও ওদের স্পিন আক্রমণ ততটা ভাল নয়। স্যান্টনারকে নিয়েই খেলবে। ইশ সোধিকে খেলাবে না। কেন উইলিয়ামসনও অফস্পিন করছেন। ওদের স্পিন বিভাগ এতটাই দুর্বল যে কেনকে বল করতে হচ্ছে। দেখতে গেলে কেন কিন্তু খারাপ বল করেন নি টুর্নামেন্টে। পার্ট-টাইম অফস্পিনার হিসেবে যথেষ্ট ভাল করেছেন।

মহম্মদ শামির ডেথ ওভারে রান হজম করা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে, যদিও তিনি এবার ভারতের স্টার

শামি অসাধারণ বল করছেন। যখন থেকে সুযোগ পেয়েছেন, দু'হাতে আঁকড়ে ধরেছেন। এখন অনেকে বলছেন শামি শেষের দিকে এসে রান দিয়ে ফেলছেন। কিন্তু প্রথম দিকে তো উইকেট তুলে নিচ্ছেন। সেখানে তো রানের গতি মন্থর করে দিচ্ছেন। দলে আরও দুজন পেস বোলার রয়েছেন। শামিকে শেষের দিকে বল না-করালেই হলো। ওঁকে আগেই বল করিয়ে নিক। ডেথের দিকে সামলে দেওয়ার জন্য় ভুবনেশ্বর আর বুমরার মতো দু'জন স্পেশালিস্ট রয়েছেন। উনি রিদমে আছেন, ভাল উইকেট নিচ্ছেন। বুমরা-ভুবিরাই ডেথ ওভার করুন। যদি অন্য় বোলার মার না খেয়ে যান, শামিকে শেষের দিকে আনারই প্রয়োজন নেই।

শরদিন্দুর প্রথম একাদশ: রোহিত শর্মা, কেএল রাহুল, বিরাট কোহলি, দীনেশ কার্তিক, এমএস ধোনি, ঋষভ পন্থ, হার্দিক পাণ্ডিয়া, জসপ্রীত বুমরা, ভুবনেশ্বর কুমার, মহম্মদ শামি ও রবীন্দ্র জাদেজা/যুজবেন্দ্র চাহাল

India New Zealand Cricket World Cup