Advertisment

সমকামী সম্পর্ক প্রকাশ্যে আনলেন এশিয়ান গেমস চ্যাম্পিয়ন দুতি চাঁদ

২৩ বছরের দুতিই ভারতীয় ক্রীড়াজগতের প্রথম তারকা, যিনি নিজের সমকামী সম্পর্ক প্রকাশ্যে আনলেন। "অনাবশ্যক আগ্রহ" এড়াতে তাঁর সঙ্গিনীর নাম এই মুহূর্তে জানাতে ইচ্ছুক নন তিনি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

দুতি চাঁদ। ছবি সৌজন্যে: টুইটার

১০০ মিটার দৌড়ে রেকর্ডধারী, ২০১৮ এশিয়ান গেমসে দুটি রৌপ্য পদক বিজয়িনী। তিনি দুতি চাঁদ, ভারতের দ্রুততম মহিলা, যিনি এবার শিরোনামে এলেন দৌড়ের জন্য নয়, আদর্শ জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার জন্য। দ্য সানডে এক্সপ্রেসকে দুতি জানিয়েছেন, তাঁর জীবনসঙ্গিনী খুঁজে পেয়েছেন তিনি, ওড়িশার জজপুর জেলায় তাঁর গ্রাম চক গোপালপুরেরই বাসিন্দা, যাঁকে বেশ কয়েক বছর ধরে চেনেন তিনি। ২৩ বছরের দুতিই ভারতীয় ক্রীড়াজগতের প্রথম তারকা, যিনি নিজের সমকামী সম্পর্ক প্রকাশ্যে আনলেন। "অনাবশ্যক আগ্রহ" এড়াতে তাঁর সঙ্গিনীর নাম এই মুহূর্তে জানাতে ইচ্ছুক নন তিনি।

Advertisment

বর্তমানে টোকিয়ো অলিম্পিক এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত দুতি, কাজেই ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এক্ষুনি ভাবার অবসর নেই।

"আমি আমার আদর্শ জীবনসঙ্গী খুঁজে পেয়েছি। আমার বিশ্বাস, নিজের পছন্দের মানুষের সঙ্গে থাকার স্বাধীনতা সকলের থাকা উচিত। আমি সবসময়ই যাঁরা সমকামী সম্পর্কে থাকতে চান, তাঁদের সমর্থন করেছি। এটি যার যার নিজের পছন্দের ব্যাপার। এই মুহূর্তে আমি ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ এবং টোকিয়ো অলিম্পিকের ওপর ফোকাস করছি, কিন্তু ভবিষ্যতে ওর সঙ্গেই ঘর বাঁধতে চাইব," সানডে এক্সপ্রেসকে জানান দুতি।

তাঁর বক্তব্য, এলজিবিটি সম্প্রদায়ের অধিকার এবং তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে কথা বলার সাহস তিনি পেয়েছেন গত বছর সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের ফলে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারার আংশিক খণ্ডন হওয়াতে।

"আমি বরাবরই বিশ্বাস করে এসেছি যে সবার ভালবাসার স্বাধীনতা থাকা উচিত। ভালবাসার চেয়ে বড় আবেগ হয় না, এবং তাকে অস্বীকার করা উচিত নয়। ভারতের সুপ্রিম কোর্টও পুরোনো আইন খণ্ডন করেছে। আমি কার সঙ্গে থাকতে চাই, তার ভিত্তিতে কারোর অধিকার নেই আমি কেমন অ্যাথলিট, তা বিচার করার। এটি একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, যার সম্মান করা উচিত। আমি এখনও আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক মিটে মেডেল জেতার," বলেন দুতি।

ভারতে এলজিবিটি বিবাহের আইনি স্বীকৃতি না থাকলেও, প্রতীকী সমকামী বিয়েতে কোনও আইনি বাধা নেই। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্টে অবসান ঘটে ব্রিটিশ আমলের ১৫৮ বছরের পুরোনো আইনের, যার আওতায় দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ব্যক্তিগত সমলিঙ্গের সম্পর্ককে অপরাধ বলে গণ্য করা হতো, যার শাস্তি ছিল কারাদণ্ড।

দুতি বলেন, তাঁর স্বপ্ন ছিল একজন আদর্শ জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়া। "আমি এমন কাউকে চেয়েছিলাম, যে আমাকে আমার পেশা চালিয়ে যেতে উৎসাহ দেবে। গত দশ বছর ধরে দৌড়চ্ছি আমি, হয়তো আরও পাঁচ থেকে সাত বছর দৌড়ব। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে সারা পৃথিবী ঘুরতে হয় আমাকে। কাজটা সহজ নয়, আমারও ব্যক্তিগতভাবে কারোর সমর্থন প্রয়োজন।"

ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড প্রতিযোগিতায় মহিলাদের গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে বরাবরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তাঁতিদের গ্রাম চক গোপালপুরের এই মেয়ে। সুইটজারল্যান্ডের লসান শহরে অবস্থিত কোর্ট অফ আরবিট্রেশন ফর স্পোর্টে আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের 'হাইপার অ্যান্ড্রোজেনিজম' (মহিলাদের শরীরে পুরুষ হরমোনের আধিক্য) সংক্রান্ত নিয়মের বিরুদ্ধে আবেদন করেছেন দুতি। এই নিয়মের ফলে মহিলা অ্যাথলিটদের শরীরে টেস্টোস্টেরন নামক হরমোনের সীমারেখা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। হরমোনের পরিমাণ তার বেশি হলে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড ইভেন্টে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না মহিলারা।

এই টেস্টোস্টেরনের সীমারেখা লঙ্ঘন করেছেন তিনি, এই অভিযোগে ২০১৪ সালের কমনওয়েলথ গেমসের আগে ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়্রেন দুতি। গত বছর এই নিয়ম বাতিল করে আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন, যার ফলে ১০০ এবং ২০০ মিটার দৌড়ে অংশগ্রহণ করতে পারেন দুতি।

Advertisment