আইপিএল না খেললে কী হত, ভাবতেই পারছেন না রাজস্থান রয়্যালসের চেতন সাকারিয়া। আইপিএল মাঝপথেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তারপরে গুজরাটের ভাবনগর জেলায় ভারতেজ গ্রামে পৌঁছে গিয়েছেন উঠতি তারকা। তারপরেই পিপিই কিট পরে হাসপাতালে ছুটেছেন। করোনা আক্রান্ত হয়ে বাবা যে হাসপাতালে ভর্তি!
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে চেতন সাকারিয়া বলছিলেন, "গত সপ্তাহেই ফোন করে আমাকে বলা হয়েছিল, বাবা করোনা আক্রান্ত। ফ্র্যাঞ্চাইজির তরফ থেকে কিছু অর্থ পেয়েছিলাম। সঙ্গেসঙ্গেই তা বাড়িতে ট্রান্সফার করে দি-ই। এই কঠিন সময়ে ওই অর্থই ভরসা যোগাচ্ছে।"
আরো পড়ুন: টেস্ট দল থেকে বাদ পড়ছেন হার্দিক! সাদা জার্সিতে জাতীয় দলে জায়গা নেই তারকার
চলতি সপ্তাহেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে আইপিএল। জাতীয় দলে এখনো সুযোগ না পাওয়া চেতন সাকারিয়াদের কাছে ঘরোয়া ক্রিকেট, আইপিএল-ই উপার্জনের প্রধান উৎস। আইপিএলের নিলামে রাজস্থান রয়্যালস সাকারিয়াকে কিনেছিল ১.২০ কোটি টাকায়।
তিনি এদিন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলছিলেন, "অনেকেই বলছেন, আইপিএল বন্ধ করে দেওয়া হোক। তাঁদের বলতে চাই, আমি পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। উপার্জনের একমাত্র পথ হল ক্রিকেট। আমার বাবাকে ভালোভাবে চিকিৎসা করতে পারছি, কারণ আমার কাছে আইপিএলের চুক্তি ছিল। যদি এই টুর্নামেন্ট একমাস না হত, তাহলে ব্যাপক সমস্যায় পড়তাম। বাবা সারা জীবন টেম্পো গাড়ি চালাতেন। আইপিএলের জন্যই আমার জীবন বদলাতে চলেছে।"
আইপিএল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সাকারিয়ার প্রাত্যহিক কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত বাবার জন্য অপেক্ষা করা। বাবা মধুমেহ রোগী, তা নিয়েই উদ্বেগের অন্ত নেই সাকারিয়ার। নিলামে এম ঝটকায় ক্রোড়পতি হয়র গিয়েছিলেন গুজরাটের তরুণ পেসার। তবে নিলামের কিছুদিন আগেই হারিয়েছিলেন প্রাণাধিক ভাইকে। তারপরে সাকারিয়া বলে দেন, আইপিএল চুক্তি তাঁর জীবন হয়ত বদলে দেবে। কিন্তু ভাইকে হারানোর শূন্যতা ঘোচাতে পারবে না।
বন্ধ হয়র যাওয়া আইপিএলের অন্যতম সেরা আবিষ্কার চেতন সাকারিয়া। সাত উইকেট দখল করেন তিনি। "টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সঞ্জু ভাই এসে বলেছিল, টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে প্রতিশ্রুতিমান মনে করছে। তাই তৈরি থাকো। তুমি খেলবে। প্রথম ম্যাচের আগের রাতে ঘুমোতেই পারিনি। খালি ভেবেছি, কীভাবে বল করব, কোথায় বল রাখব!" বলছিলেন তিনি।
আইপিএলের অভিষেক ম্যাচেই পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে ৩১ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। কেএল রাহুল, মায়াঙ্ক আগারওয়ালদের মত বড় নাম-ও ছিল তাঁর শিকারের তালিকায়। তবে ধোনিকে আউট করার স্মৃতি এখনো ভুলতে পারেননা তিনি। জানিয়ে দেন, "ধোনি এমন একজন যে ডেথ ওভারে একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে। ওঁকে শুরুতেই সেদিন আউট করে দিতে পেরে ভাল লাগছে।"
আর মুম্বই ম্যাচের স্মৃতিও তাঁর কাছে টাটকা। বলছিলেন, "মুম্বই ম্যাচের পরেই রোহিত শর্মার অটোগ্রাফ নিতে গিয়েছিলাম। সেই সময় রোহিত ভাই বলল, ঠিক পথেই এগোচ্ছি।" আপাতত সাকারিয়ার প্রার্থনা একটাই। তা হল, বাকি টুর্নামেন্ট জলদি শেষ হোক! গলায় কিছুটা হতাশা এনে বলছিলেন, "আমাদের এলাকায় আমিই একমাত্র যে এত টাকা উপার্জন করছি। মা তো জানেই না, ১ এর গায়ে কটা শূন্য হলে কোটি হয়! আপাতত আমার লক্ষ্য বাবাকে হাসপাতাল থেকে সুস্থ করে আনা। তারপর বাড়ি বানানো। এবং এটার জন্যই আইপিএল হওয়া জরুরি, ভীষণ প্রয়োজন।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন