বাংলার তনয় পান্তি চললেন টি২০ বিশ্বকাপে (ছবি: উৎসব মন্ডল)
ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও তা পূরণ হয়নি। দিনমজুর বাবার ক্ষমতা ছিল না তনয়কে ক্রিকেটার তৈরি করার। সীমান্ত শহর বনগাঁর তিন নম্বর স্টেডিয়াম গেট এলাকার বাসিন্দা তনয় পান্তি। বাবা জীবন পান্তি দিনমুজুর, মা রেবা দেবী গৃহবধূ। দুই বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে মেজো তনয়। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলার 'প্রতিনিধি' তিনিই। ক্রিকেটার হওয়ার সাধ তিনি পূরণ করলেন অন্যভাবে। দুবাইয়ের মাটিতেই দেখা যাবে ৩২ বছরের তনয়ের হাতযশ। তবে ব্যাট কিংবা বল হাতে নয়। বিরাটদের রান কিংবা বুমরার উইকেট সংখ্যা জানা যাবে তনয়ের একটি ক্লিকেই।
Advertisment
তনয় পান্তি আসলে ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ডের স্কোরার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্কোরের হিসাব রাখার জন্য ডাক পেয়েছেন মরুদেশে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে অসমাপ্ত আইপিএলের ম্যাচেও মাঠে ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ডে স্কোরিং করবেন তনয়। সেপ্টেম্বরে শুরুতেই তাই দুবাই পাড়ি দিচ্ছেন তিনি। গত বছর আইপিএলে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে স্কোরিং করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে প্রথমবার ডাক পেয়েছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসরে।
আর্থিকভাবে একদমই সচ্ছল নয় তনয়ের পরিবার। ছোটবেলা থেকে তাই ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও তা পূরণ হয়নি। তবে ক্রিকেট মাঠের প্যাশন কোনদিনও ছাড়তে পারেননি তনয়। ব্যাট বল তুলে রেখে ১৪ বছর বয়সেই বনগাঁর মাঠে স্কোরিং-এর শুরু করেছিলেন তনয়। দীর্ঘদিন মহকুমা লেভেলে বিভিন্ন ক্রিকেট খেলায় স্কোরিং করে সংশ্লিস্ট মহলে নামডাক অর্জন করেন।
Advertisment
স্কোরার হিসাবে নিজের কীর্তির ছাপ রেখেছেন আইপিএলে (ছবি: উৎসব মন্ডল)
এভাবেই স্কোরিং করতে গিয়ে একদিন চোখে পড়ে যান সিএবি স্কোরার গৌতম রায়ের। তারপর বনগাঁ থেকে পাড়ি দেন কোলকাতায়। গৌতম রায়ের হাত ধরে সিএবি- তে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। পরবর্তীতে পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফল করে সিএবি স্কোরার হয়ে ওঠেন তনয়। ক্রিকেটার হতে না পারলেও ক্রিকেট মাঠের সঙ্গে সম্পর্ক পাকাপাকিভাবে একটা হিল্লে হয়।
সিএবি-র বিভিন্ন খেলায় স্কোরিং করতে করতে আইপিএলে স্কোরিং করা শুরু করেন। গত বছরই আইপিএলের সময় প্রথমবার বিদেশ যাওয়ার সুযোগ মেলে। সেখানে ভাল কাজের পুরস্কার হিসেবে তনয় ডাক পান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোরিং করানোর জন্য। ১৭-ই অক্টোবর থেকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে চলবে ১৫-ই নভেম্বর পর্যন্ত। সেখানে ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ডে স্কোরিং-এর দায়িত্ব থাকবে তনয়ের হাতে। তার আগে আইপিএল এ স্কোরিং-এর দায়িত্ব সামলাবেন তিনি। সেপ্টেম্বরে ৪ তারিখ বাড়ি থেকে দুবাইয়ে উদেশ্যে রওনা দেবেন তনয়। ইতিমধ্যেই বাক্সপত্তর গুছোতে শুরু করে দিয়েছেন তিনি।
তনয় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলছিলেন, "শৈশব থেকেই ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছে ছিল। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ার সেই স্বপ্ন পূরন হয়নি। ক্রিকেটার না হওয়ার দুঃখটা ভুলে থাকার জন্য স্কোরার হওয়া৷ পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা না থাকলে এতদূর পৌঁছতে পারতাম না।"
তনয়ের মা রেবা দেবী বলছিলেন, "আর্থিক অনটনে ছেলের স্বপ্ন পূরন করতে পারিনি। ওর নিজের ইচ্ছায় আজ এই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছে। ছেলে এত বড় টুর্নামেন্টে স্কোরিং করবে শুনে খুব ভালো লাগছে। ও যা করবে আমারা সব সময় ওর পাশে আছি।"
দরিদ্র পরিবার থেকে উত্থান তনয়ের (ছবি উৎসব মন্ডল)
বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টিতে স্কোরারের সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত তনয়। পেশার সূত্রে দেশি-বিদেশি তারকাদের সান্নিধ্য তাঁর নতুন কিছু নয়। তবে কাজের চাপে তাঁদের সঙ্গে ছবি তোলা বা কথা বলার সুযোগ সবসময় মেলে না। পেশার প্রতি এতটাই একনিষ্ঠ তিনি। গত আইপিএল-এ স্কোরিং করার সময় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় পিঠ চাপড়ে উৎসাহিত করেছিলেন। কিংবদন্তির উৎসাহে কাজের প্রতি আরও প্যাশনেট করে তুলেছে তনয়কে। এই আনন্দের মধ্যেও তাঁর মনে আশঙ্কার কালো মেঘও জমা হচ্ছে। কারণ, সিএবি-তে স্কোরিং করে বছরে লাখ খানেক টাকার বেশি উপার্জন হয় না। অতিমারী নির্ধারিত সেই কাজেও থাবা বসিয়েছে। এমন অবস্থায় ছয়জনের পেট চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের।
তনয়ের আপাতত পাখির চোখ বিসিসিআই-এর স্কোরার হওয়ার। তাই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে ফিরে ভারতীয় কন্ট্রোল স্কোরিং-এর পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে চাইছেন তিনি। বিসিসিআই বোর্ডের স্কোরার হতে পারলে পরিবারের হাল ফিরবে অনেকটাই। এসবের পাশাপাশি স্থায়ী চাকরির সন্ধানেও রয়েছেন বঙ্গসন্তান।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন