ম্যাচে মনে রাখার মত কোনও পারফরম্যান্স নেই। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যেরও ব্যাপার নেই। সেই ম্যাচই কিনা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বিরাট কোহলি, নভিন উল হক এবং গৌতম গম্ভীরের সৌজন্যে আরসিবি বনাম লখনৌ ম্যাচ এখন ট্রেন্ডিং। ফুটবল ম্যাচের ধাঁচে মাঠের মধ্যেই প্রায় হাতাহাতি, উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়, জুতো দেখানো- সবই ঘটল কুৎসিতভাবে।
তারপরের দিন সকাল দেখল একের পর এক মিম, ভাইরাল ভিডিও এবং ম্যাচ নিয়ে অন্তহীন আলোচনা। এই ঘটনার কেন্দ্রীয় চরিত্র বিরাট কোহলি, নভিন উল হক এবং গৌতম গম্ভীর। কোহলি-গম্ভীরের উত্তপ্ত বাদানুবাদ এই প্রথম দেখল না ক্রিকেট বিশ্ব। দুজনেই একের ওর এক বিতর্কে দীর্ণ। অন্যদিকে, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের ভবঘুরে নভিন উল হকের ইতিহাস-ও খুব একটা সুপ্রসিদ্ধ নয়। এর আগে লঙ্কান প্রিমিতার লিগে শাহিদ আফ্রিদি, মহম্মদ আমেরদের মত সুপারস্টারদের সঙ্গে কেলেঙ্কারি বাঁধিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: জরিমানায় কাজ হবে না, নিষিদ্ধ করা হোক কোহলিকে! বিরাটকে ‘অওকাত’ বুঝিয়ে দিলেন এবার গাভাসকার
সোমবার শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য কোহলি এবং গম্ভীরের ম্যাচ ফি-র একশো শতাংশ জরিমানা করা হল। নভিন উল হকের জরিমানার অঙ্ক পঞ্চাশ শতাংশ। ঘটনা হল, কোহলি মাঠের লড়াই মাঠেই সীমাবদ্ধ রাখলেন না। নিয়ে গেলেন মাঠের বাইরে। ম্যাচের পর আরসিবি ভিডিওয় কোহলিকে বলতে শোনা গিয়েছে, "মধুর জয়। যদি তুমি এত দিতে পার। তাহলে হজম-ও করতে হবে। নাহলে দিও না।" কোহলির ক্ষোভের উদ্দেশ্য কে, তা বোঝার জন্য রকেট সায়েন্টিস্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই। নভিন-ও ম্যাচের পর পাল্টা দিয়েছেন, "তুমি এটারই যোগ্য। এটাই হওয়া উচিত এবং এভাবেই এটা হয়ে থাকে।"
ম্যাচের পর একের পর এক যে ট্রেন্ডিং ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়া চেয়ে থাকল, তাঁর মধ্যে একটিতে দেখা যাচ্ছে, কেএল রাহুল বিরাট কোহলির সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন। কোহলি সম্ভবত তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, কী ঘটেছে মাঠের মধ্যে। পুরো ঘটনা মীমাংসা করার জন্য রাহুল এরপরে লখনৌ সতীর্থ নভিন উল হককে ডাকেন। সকলকে অবাক করে আফগান তারকা সরাসরি বলে দেন, কোহলির সঙ্গে কথা বলার মত মুডে নেই তিনি। কোহলি এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। বেশ কিছু অপশব্দও প্রয়োগ করেন পুনরায়। অবাক হয়ে রাহুল দেখেন বোতলে জল পান করতে করতে চলে যাচ্ছেন নভিন উল হক। পরে তিনি এক লখনৌ সতীর্থকে বলে দেন, "আইপিএলে খেলতে এসেছি। গালিগালাজ হজম করতে নয়। আত্মসম্মান আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কোহলি আমাকে জুতো দেখিয়েছিল। আমিও ওঁকে ওঁর লেভেল দেখিয়ে দিয়েছি।"
আরও পড়ুন: তখনও এরকম মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়নি! ইডেনে কোহলিকে টাকা, মোবাইল ফোন দিয়ে দিয়েছিলেন গম্ভীর
কোহলি এবং নবীনের স্লেজিং থেকে ঘটনার সূত্রপাত। ১৭তম ওভারের শেষ বলে সিরাজ আফগান তারকা নবীন উল হককে বাউন্সার দেন। সেই বল আম্পায়ার নো বল ঘোষণা করেন। ফ্রি হিটের সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেননি নবীন। তারপরেই নবীনকে রক্তচক্ষু দেখান সিরাজ। সেই সঙ্গে ব্যাটিং এন্ডে বল ছুঁড়ে দেন। তারপরেই নবীনকে দেখা যায় আরসিবি তারকার সঙ্গে কথা চালাতে। সেই সময় মিড অফে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন কোহলি। তিনি গোটা ঘটনায় হস্তক্ষেপ করে নবীনকে পাল্টা দেন। তবে কোহলিকে ছাড়েননি নবীন-ও।
কোহলি-নভিনের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের এক পর্যায়ে কোহলি নাকি সটান নিজের জুতো দেখিয়ে দেন নভিনকে। বলে দেন, "তুই আমার জুতোর ধুলোর যোগ্য-ও নোস।"
সেই সময় পরিস্থিতি সামলান নন স্ট্রাইকার এন্ডে ব্যাটিং করা অমিত মিশ্র। যিনি ম্যাচের সময়ে কোহলির কটুক্তির শিকার হচ্ছিলেন। সেই ঘটনারই রেশ বয়ে থাকে সৌজন্য করমর্দনের সময়। পুনরায় নভিনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান কোহলি। এবার থামান ম্যাক্সওয়েল। ম্যাচের পর সৌজন্য করমর্দনের সময় ক্যারিবিয়ান তারকা কাইল মায়ের্স সাধারণভাবে কথাবার্তা বলছিলেন কোহলির সঙ্গে। তবে গম্ভীর এসে মায়ের্সকে কোহলির কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেন।
আরও পড়ুন: কোহলিকে IPL-এ নিষিদ্ধ করার দাবি! শাস্ত্রী বললেন… আমি মীমাংসা করতে প্রস্তুত
এর কিছুক্ষণ পরেই লেগে যায় কোহলি-গম্ভীরের। দশকের পুরোনো তিক্ত স্মৃতি উস্কে দিয়ে। সেখানেই শেষ নয় বোর্ডের তরফে জরিমানা ঘোষিত হওয়ার পরও কোহলি সোশ্যাল মিডিয়ায় যুদ্ধের উত্তাপ ছড়িয়ে দিয়ে লিখলেন, "আমরা যা শুনি, তা পুরো ঘটনা নয়, একটা মতামত মাত্র। যা দেখি তা স্রেফ একটা দৃষ্টিভঙ্গি। সত্যিটা নয়।"