সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে শীতল মাঠের লড়াই দেখিয়েছেন বিরাট কোহলি। এবার কোহলির সঙ্গে মাঠে দ্বৈরথ গৌতম গম্ভীরের। মাঠেই লখনৌয়ের মেন্টর গম্ভীরের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়লেন কোহলি। যেভাবে সেই ঘটনা ঘটল দেখে নেওয়া যাক-
মাঠে সিরাজ-নবীন এবং কোহলির ঘটনা:
কোহলি এবং নবীনের স্লেজিং থেকে ঘটনার সূত্রপাত। ১৭তম ওভারের শেষ বলে সিরাজ আফগান তারকা নবীন উল হককে বাউন্সার দেন। সেই বল আম্পায়ার নো বল ঘোষণা করেন। ফ্রি হিটের সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেননি নবীন। তারপরেই নবীনকে রক্তচক্ষু দেখান সিরাজ। সেই সঙ্গে ব্যাটিং এন্ডে বল ছুঁড়ে দেন। তারপরেই নবীনকে দেখা যায় আরসিবি তারকার সঙ্গে কথা চালাতে। সেই সময় মিড অফে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন কোহলি। তিনি গোটা ঘটনায় হস্তক্ষেপ করে নবীনকে পাল্টা দেন। তবে কোহলিকে ছাড়েননি নবীন-ও।
তবে সেই সময় অমিত মিশ্র পুরো ঘটনায় হস্তক্ষেপ না করলে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যেত।
কোহলির আগ্রাসী উদযাপন:
১৮ রানে জয়ের পর কোহলি নিজের আবেগ সংবরণ করতে পারেননি। লখনৌ দর্শকদের দিকে মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ থাকার অঙ্গভঙ্গি করেন। এর আগে চিন্নাস্বামীতে জয়ের পর গম্ভীর যেভাবে আরসিবি দর্শককে মুখে আঙ্গুল দিয়ে থামিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত করেছিলেন। সেই ঘটনার-ই পাল্টা দিলেন কোহলি। ঘটনাচক্রে মাঠে আরসিবি দর্শকদের উপস্থিতিই বেশি ছিল। জস হ্যাজেলউড পর্যন্ত ম্যাচের পর বলে গেলেন, "মনে হচ্ছিল আমরা যেন চিন্নাস্বামীতে খেলছি।"
করমর্দনের সময় বিতর্ক:
টানটান লড়াইয়ের আঁচ গিয়ে পড়েছিল করমর্দনের সময়ও। সেই সময়েও কোহলি-নবীনকে আলাদা করতে হয় বিতর্ক এড়াতে। করমর্দনের সময় কোহলির হাত শক্ত করে ধরেন নবীন। তিনি স্পষ্টতই মাঠের ঘটনা সহজে ভুলতে পারছিলেন না। সেই সঙ্গে মহাতারকাকে কিছু একটা বলেন।
কোহলিকে পিছু হেঁটে নবীনকে পাল্টা কিছু বলতে শোনা যায়। এতে আরও তেতে যান আফগান পেসার। সেই সময় আবার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল পরিস্থিতি সামলান। তারপর অবশ্য কোহলি-নবীনের কোনও শারীরিক সংঘর্ষ ঘটেনি।
গম্ভীর মায়ের্সকে ধাক্কা দিয়ে কোহলির থেকে দূরে সরিয়ে দেন:
ম্যাচের পর গম্ভীরকে দেখা যায় আম্পায়ারদের সঙ্গে কথাবার্তা চালাতে। আরসিবি ক্রিকেটারদের ব্যবহারে তিনি যে সন্তুষ্ট ছিলেন না, সেই বিষয়েই তিনি অভিযোগ জানান। ম্যাচের পর সৌজন্য করমর্দনের সময় ক্যারিবিয়ান তারকা কাইল মায়ের্স সাধারণভাবে কথাবার্তা বলছিলেন কোহলির সঙ্গে। তবে গম্ভীর এসে মায়ের্সকে কোহলির কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেন।
গম্ভীর-কোহলির সংঘর্ষ:
কোহলি এবং গম্ভীরের লড়াইয়ের প্রেক্ষাপট তৈরিই ছিল। সেই চিত্রনাট্য মেনেই যেন কোহলির সঙ্গে মাঠে এরপরে ঝামেলায় জড়াতে দেখা যায় গম্ভীরকে। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছিল কোহলি গোটা বিতর্ক মিটিয়ে ফেলতে চাইছিলেন। গম্ভীরের কাঁধে হাত দিয়ে পুরো পরিস্থিতি বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি। তবে মুহূর্তের মধ্যেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। দুজনেই উত্তেজিতভাবে পরস্পরকে একহাত নেন। তারপর দুই দলের ক্রিকেটাররা একে অন্যকে পৃথক করেন। লখনৌ ক্যাপ্টেন কেএল রাহুল, আরসিবি ক্যাপ্টেন ফাফ দু প্লেসিসকে পরিস্থিতি শান্ত করতে নামতে হয়।
কেএল রাহুল-কোহলির চ্যাট:
কেএল রাহুল কোহলিকে ঝামেলা থেকে দূরে নিয়ে যান। তারপর জাতীয় দলের দুই তারকাকে একে অন্যের সঙ্গে আলোচনা সারতে দেখা যায়। সেই সময় কোহলি রাহুলকে মনে করিয়ে দেন গম্ভীর কীভাবে প্ৰথম লেগের ম্যাচে চিন্নাস্বামীতে বিতর্কিত কান্ড ঘটিয়েছিলেন। পুরো বিতর্কের অবসান ঘটাতে কোহলি-গম্ভীরের ম্যাচ ফির একশো শতাংশ জরিমানা করা হয়। আইপিএলের নিয়মভঙ্গের জন্য নবীন উল হকের ম্যাচ ফির পঞ্চাশ শতাংশ জরিমানা হয়।
কোহলি-গম্ভীরের দ্বন্দ্ব বহুদিনের:
দুই দিল্লি তারকা এই প্ৰথম মাঠে সংঘর্ষে জড়ালেন না। ঠিক বছর দশেক আগে কোহলি বনাম গম্ভীরের আগুনে বাদানুবাদ দেখেছিল চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে। সেই সময়ে কেকেআর নেতা গম্ভীরের সঙ্গে মাঠেই প্রকাশ্যে লেগে গিয়েছিল আরসিবির বিরাটের। প্যাভিলিয়নে যাওয়ার বদলে কোহলি এক্সট্রা শর্ট কভারের দিকে গিয়ে কিছু একটা মন্তব্য করেন সেই সময় যাতে পরিস্থিতি আরও লাগামছাড়া হয়ে ওঠে। তারপরেই গম্ভীরকে দেখা যায় তাঁর তৎকালীন জাতীয় দলের সতীর্থ বিরাট কোহলির দিকে আগ্রাসীভাবে এগিয়ে যেতে। সেই সময় পরিস্থিতি শান্ত করেন অন্য এক দিল্লি ক্রিকেটার রজত ভাটিয়া।
নবীন উল হক এবং এলপিএল পর্ব:
একইভাবে এই প্ৰথমবার আফগান তারকা নবীন উল হক মাঠের মধ্যে প্রকাশ্যে ঝামেলায় জড়ালেন না। এলপিএলে ম্যাচ ছিল ক্যান্ডি টাস্কার্স এবং গল গ্ল্যাডিয়েটর্স-এর মধ্যে। সেই লঙ্কান প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে নবীন উল হকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় মহম্মদ আমের এবং শাহিদ আফ্রিদির। সেই ম্যাচে নবীনের সঙ্গে মাঠে ঝামেলা হয় মহম্মদ আমেরের। ম্যাচ শেষে সৌজন্য করমর্দনের সময় আফ্রিদির সঙ্গেও একপ্রস্থ বিতর্কের মুহূর্ত তৈরি হয়।
Read teh full article in ENGLISH