Advertisment

কুম্বলে-গাভাসকার থেকে গম্ভীর-সৌরভ-যুবরাজ! কিংবদন্তিদের সঙ্গে বারবার কেন বিতর্কে কোহলি

বিদেশি ক্রিকেটার তো বটেই ভারতীয় সিনিয়র ক্রিকেটাররাও কোহলির রোষের মুখে পড়েছেন নিয়মিতভাবে

author-image
IE Bangla Sports Desk
New Update
NULL

বিরাট কোহলি মাঠ এবং মাঠের বাইরে এক চরিত্র। প্রতিপক্ষের কাছে সাক্ষাৎ এক মূর্তিমান আতঙ্ক। ব্যাটসম্যান কোহলি যেমন ভয়াবহ বাতাবরণের জন্ম দেয় বোলারদের মনে, তেমন ফিল্ডার-ক্যাপ্টেন কোহলি-ও ত্রাস। অন্তত ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রে। স্লেজিং, মানসিক চাপের খেলায় সিদ্ধহস্ত বিরাট। গত সোমবার এরকম এক চাপের খেলা খেলতে গিয়েছিলেন কিং কোহলি। পুঁজি মাত্র সামান্য রান। লখনৌয়ের একানা স্টেডিয়ামে সেই রান ডিফেন্ড করতে বোলারদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিপক্ষের নাভিশ্বাস তুলে দিলেন। মানসিক চাপের খেলা যা তাঁর অদৃশ্য অস্ত্র সেটাকেই হাতিয়ার করলেন। ছাড় দিলেন না বর্ষীয়ান অমিত মিশ্রকেও। তারপর নভিন উল হককে স্লেজিংয়ের পথে হাঁটতেই বিষয়টি পৌঁছে গেল অন্য উচ্চতায়। অন্য মাত্রায়।

Advertisment

যেখানে বরাবরের মত কোহলি বিতর্কের কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসাবে আবির্ভূত হলেন। গম্ভীর সরাসরি বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেন। ক্রিকেট সমাজ এক তামাশা চেটেপুটে উপভোগ করল।

গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে এই নিয়ে তিনবার সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হলেন কোহলি। অতীতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, অনিল কুম্বলে, সুনীল গাভাসকার এমনকি বীরেন্দ্র শেওয়াগের মত কিংবদন্তির সঙ্গেও খটাখটি লাগার ইতিবৃত্ত রয়েছে কোহলির। বিদেশিদের বিরুদ্ধে ক্রিকেট মাঠে আগ্রাসন দেখানো খুব সাধারণ একটা ব্যাপার কিন্তু দেশজ সিনিয়রদের সঙ্গে বারবার এই লড়াই, ইগোর যুদ্ধ কেন, দেখে নেওয়া যাক ইতিহাস-

বিরাট কোহলি বনাম অনিল কুম্বলে:
কোহলি-কুম্বলের দ্বৈরথের ইতিহাস ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন কিছু নয়। দুজনের সম্পর্ক এতটাই তলানিতে চলে যায় যে ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরে কুম্বলেকে জাতীয় দলের কোচিংয়ের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয়। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে হারের পরে হেড কোচ হিসাবে কুম্বলের সরে দাঁড়ানো, ভারতীয় ক্রিকেটে অন্যতম বিতর্কিত অধ্যায়। দায়িত্ব পাওয়ার মাত্র এক বছরের মধ্যেই সরে দাঁড়াতে হয় কুম্বলেকে। বিরাট কোহলির সঙ্গে তীব্র সংঘাতের আবহই যে কুম্বলেকে সরতে বাধ্য হয়, তা এখন ওপেন সিক্রেট। কুম্বলের পরে জাতীয় দলের কোচ হয়ে আসেন রবি শাস্ত্রী।

বিরাট কোহলি বনাম গৌতম গম্ভীর:
কোহলি বনাম গম্ভীর যুদ্ধ-ই আপাতত ক্রিকেট বিশ্বে ট্রেন্ডিং। তবে গত সোমবার লখনৌ বনাম আরসিবি ম্যাচের ধুন্ধুমার যুদ্ধের আগেও কোহলি-গম্ভীরের দ্বৈরথ দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। ২০১৩-য় আইপিএল চলাকালীন দুই তারকার মধ্যে হাতাহাতির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেই সময় গম্ভীর ছিলেন কেকেআরের ক্যাপ্টেন। অন্যদিকে আরসিবি নেতা ছিলেন কোহলি। সেই ম্যাচে দুজনের উত্তেজক পরিস্থিতি সামাল দেন দিল্লির-ই অন্য এক তারকা রজত ভাটিয়া। এবার যেমন দিল্লির অমিত মিশ্রকে থামাতে হয় যুযুধান দুই ক্রিকেটারকে।

বিরাট কোহলি বনাম যুবরাজ সিং:
সরাসরি বিরাট কোহলির সঙ্গে যুবরাজের সংঘাত প্রত্যক্ষ করেনি ক্রিকেট মহল। তবে যুবরাজের বাবা যোগরাজ সিং একবার দাবি করেছিলেন, যুবরাজের কেরিয়ার খতম করার পিছনে হাত রয়েছে কোহলি-ধোনির। যুবরাজ তো এক সাক্ষাৎকারে সরাসরি অভিমানী হয়ে বলে দেন, সৌরভের কাছ থেকে খেলোয়াড়ি জীবনে যে সমর্থন পেয়েছেন, তার ছিঁটেফোটাও পাননি ধোনি-কোহলির কাছ থেকে। সেই বিষ্ফোরক স্বীকারোক্তির পরেই যুবির পিতা যোগরাজ বলে দেন, "ধোনি-কোহলি কিংবা রোহিত অবসর নেবে, বোর্ডকে বলব যথাসম্ভব সম্মান দিতে কারণ ওঁরা জাতীয় দলকে অনেক কিছু দিয়েছে। যুবরাজকে অনেকে পিছন থেকে ছুরি মেরেছে, এটা যন্ত্রণাদায়ক।"

বিরাট কোহলি বনাম সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়:
বিরাট কোহলির সঙ্গে বর্তমানে কার্যত মুখ দেখাদেখি নেই সৌরভের। বোর্ডের তরফে কোহলিকে ওয়ানডে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকেই সম্পর্কের অবনতি তৎকালীন বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিরাট কোহলির। তার আগে কোহলি টি২০ দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। যদিও সৌরভ বলে দেন, কোহলিকে নেতৃত্ব ছাড়তে বারণ করা হয়েছিল। এরপরেই আগুনে ঘি ঢেলে প্রকাশ্যে সাংবাদিক সম্মেলনে কোহলি বলে দেন, বোর্ডের কাছ থেকে নেতৃত্ব ছাড়ার কোনও অনুরোধই আসেনি তার কাছে। তারপরেই বিরাটের ওয়ানডে নেতৃত্ব কেড়ে নেওয়া। চলতি আইপিএলে দুজন করমর্দন করতেও অস্বীকার করেছেন।

বিরাট কোহলি বনাম সুনীল গাভাসকার:
সরাসরি কোহলির সঙ্গে গাভাসকারের ঝঞ্ঝাটের ইতিহাস না থাকলেও গাভাসকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিলেন বিরাট-পত্নী অনুষ্কা শর্মা। যাতে পুরোদস্তুর সায় ছিল বিরাট কোহলির। লকডাউনের সময় ক্রিকেট দুনিয়া উত্তাল হয়ে গিয়েছিল গাভাসকারের সরস রসিকতায়। কিছুটা মজার ছলেই সানি বলেছিলেন, লকডাউনে অনুষ্কা শর্মা বল করেছেন কোহলিকে। এতেই ক্ষেপে যান অনুষ্কা। সরাসরি সোশ্যাল মিডিয়ায় গাভাসকারের বিরুদ্ধে কু-মন্তব্যের অভিযোগ জানান তিনি। ক্রিকেটাররা পাবলিক ফিগার, তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনকে সম্মান করার বিষয়ে লম্বা-চওড়া জ্ঞান-ও গাভাসকারের মত কিংবদন্তিকে দিয়ে বসেন বিরাট-পত্নী। গোটা পর্বে কোনও মন্তব্য করেননি কোহলি। তিনি চুপ থেকে আদতে অনুষ্কাকেই প্রশ্রয় দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠে গিয়েছিল।

বিরাট কোহলি বনাম সূর্যকুমার যাদব:
বছর দুয়েক আগে সূর্যকুমার যাদবের সঙ্গে আইপিএল ময়দানেই লেগে গিয়েছিল সূর্যকুমার যাদবের। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে সেই ম্যাচে আরসিবির বিপক্ষে সূর্যকুমার ৪৩ বলে দুর্ধর্ষ ৭৯ রানের ইনিংস খেলে যান। সেই ম্যাচেই কোহলি স্লেজিং করছিলেন মুম্বইয়ের তারকা ব্যাটারকে। একসময় লাল চোখ-ও দেখান তখনও জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়া স্কাইকে। তবে তিনি পাল্টা কিছু না বললেও কোহলির চোখে চোখ রেখেছিলেন। শরীরী আগ্রাসন না দেখালেও কোহলিকে তিনি যেন বুঝিয়ে দেন, স্লেজিং করে তাঁকে থামানো যাবে না।

কোহলি বনাম রোহিত শর্মা:
কোহলির সঙ্গে রোহিতের ইগোর সংঘাত বিচ্ছিন্ন কোনও বিষয় নয়। যদিও জাতীয় দলের দুই সতীর্থ মিডিয়ার এই জল্পনা বারবার উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে যা রটে তাঁর কিছুটা তো বটে! ২০১৯-এ সেমিফাইনালে ভারত নিউজিল্যান্ডের কাছে বিদায় নেওয়ার পরেই নাকি ভাঙন ধরেছিল টিম ইন্ডিয়ায়। টিম ইন্ডিয়ায় রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি দুটো শিবিরে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। সেকথা পরে স্বীকারও করে নেন শাস্ত্রী জমানায় ভারতের ফিল্ডিং কোচ আর শ্রীধর। তিনি নিজের বইয়ে লিখেছিলেন রোহিত-বিরাটের মধ্যে বিবাদের মীমাংসা করেন কোচ রবি শাস্ত্রী।

বিরাট কোহলি বনাম অমিত মিশ্র:
বর্ষীয়ান অমিত মিশ্র-ও রেহাই পাননি কোহলির অভ্যবতার হাত থেকে। চরম বিতর্কবিদ্ধ আরসিবি বনাম লখনৌ ম্যাচের সময়েই ঘটনা। লখনৌয়ের ব্যাটিং চলাকালীন সারাক্ষণই কোহলি ব্যাটসম্যানদের উত্যক্ত করছিলেন। নভিন উল হক, অমিত মিশ্রের ব্যাটিংয়ের সময়ে কোহলির স্লেজিংয়ের ঝাঁঝ বাড়ে। একটা সময়ে অমিত মিশ্র আম্পায়ারের কাছে কোহলির নামে অভিযোগ-ও জানান।

Virat Kohli Sourav Ganguly Yuvraj Singh Gautam Gambhir Rohit Sharma Anil Kumble
Advertisment