Advertisment

স্টার্ক-কামিন্স এত পেল, ভারতীয়রা কি বানের জলে ভেসে এল! নিলামের মঞ্চে অসম্মানিত কোহলি-রোহিতরা

ভারতীয় তারকাদের সঙ্গে ব্যাপক বঞ্চনা করা হয়েছে বলে অভিযোগ

author-image
IE Bangla Sports Desk
New Update
ind-aus

কোহলি-রোহিতদের থেকে অনেক বেশি অর্থ পাবেন অস্ট্রেলিয়ানরা (টুইটার)

দিনটা মঙ্গলবার। দুবাইতে তখন আইপিএল নিলাম চলছে। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে নিজের বাড়িতে বসে মিচেল স্টার্ক। তার মধ্যেই খবর এল, অস্ট্রেলিায় অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে আইপিএল দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ কিনেছে রেকর্ড ২০.৫০ কোটি টাকায়। অমনি অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ভরে যেতে লাগল কামিন্সকে জানানো অভিনন্দন বার্তায়। স্টার্ক আবার তার মধ্যেই কামিন্সকে জিজ্ঞাসা করে বসলেন, গ্রুপের সবাইকে ডিনার পার্টিটা রাতে কামিন্স কোন রেস্তোরাঁয় দেবেন? এভাবেই অস্ট্রেলিয়ান টেস্ট দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটি ক্রমশ মেসেজ আর কামিন্সকে নিয়ে নানা কথায় ভরে যাচ্ছিল। তার কারণও আছে। এমনিতেই আইপিএল প্লেয়ার নিলাম, প্রতিবছরই বিশ্বব্যাপী ইতিহাস তৈরি করে। কিন্তু, এই প্রথমবার কোনও খেলোয়াড়ের দর ২০ কোটি টাকার ওপর উঠল।

Advertisment

কামিন্সকে নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যখন এই সব কথাবার্তা চলছে, তখন স্টার্ক আর বাকিরা জানতেন না, এই দরের রেকর্ডটা ক্ষণস্থায়ী হবে। কামিন্সের এক সতীর্থ বাঁহাতি পেসারই এক ঘণ্টার মধ্যে সেই রেকর্ড ভেঙে দেবেন। আর, তিনিই হয়ে উঠবেন আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়। তিনি আর কেউ নন, মিচেল স্টার্ক। যাঁকে মঙ্গলবার নিলামে ২৪.৭৫ কোটি টাকায় কিনে নিল কলকাতা নাইট রাইডার্স।

একমাস আগেই ভারতের মাটিতে একদিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া দল দুর্দান্ত পারফরম করেছে। আহমেদাবাদের ফাইনালে ভারতের স্ট্যান্ডার্ড ব্যাটিং লাইন আপকে ধরাশায়ী করেছেন অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা। সেই জন্য আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো নিলামে অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের দিকে ঝুঁকবে, এটা প্রত্যাশিতই ছিল। ইতিহাস বলছে, এই ধরনের পারফরমেন্সের পর নিলামে খেলোয়াড়দের দামে ভালোই প্রভাব পড়ে। ভালো পারফরম করা খেলোয়াড়দের দর একটু বেশিই হয়। কিন্তু, তাই বলে এত?

দামটাই আসলে সবার চোয়াল ঝুলিয়ে দিয়েছে। কারণ, প্রতিবছর আইপিএল জয়ী দল পায় ২০ কোটি টাকা। কিন্তু, মিচেল স্টার্ক আর প্যাট কামিন্সকে কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর) আর হায়দরাবাদ সাইরাইজার্স (এসআরএইচ) যে দামে কিনেছে, তাতে প্রতিটি ম্যাচে স্টার্ক আর কামিন্স পাবেন এক কোটি টাকারও বেশি। দুই মাসের আইপিএল খেলে, এই দুই অস্ট্রেলীয় তারকা যে অর্থ বাড়ি নিয়ে যাবেন, তা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে করা বার্ষিক চুক্তি থেকে হওয়া আয়ের চেয়েও বেশি। এই নিলামে মুম্বই ইন্ডিয়ানসের টেবিলে ছিলেন অম্বানিরা। তাঁরাও স্টার্ক ও কামিন্সের জন্য এত টাকা দর হাঁকাতে সাহস পাননি।

নিলামে কামিন্সের দাম যখন ২০ কোটি টাকার কিছু বেশিতে গিয়ে থামল, সেই সময় নিলাম ঘরের চারপাশে এক রাউন্ড করতালি চলল বেশ কিছুক্ষণ ধরে। তার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই যখন স্টার্কের দাম ২৪.৭৫ কোটি টাকায় পৌঁছল, তখন কিন্তু করতালি নয়। উপস্থিত অনেকেরই মধ্যে ছিল অবাক হওয়ার ভাব। স্টার্ককে দলে চেয়েছিলেন গুজরাট টাইটানসের বিক্রম সোলাঙ্কিও। কিন্তু, তিনি নিলামে হেরে যান।

তিনি নিজের পরাজয়কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, 'যতটুকু দাম দেওয়া যেত, তার বেশি উঠতে চাইনি।' আর যে দল রেকর্ড অর্থ স্টার্ককে কিনেছে, সেই কেকেআরের সিইও ভেঙ্কি মাইসোর বলেন, 'নিলামে ১০টি দল ১০০ কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি গিয়েছে। প্রতিটি দল আলাদাভাবে ঠিক করেছে, কীভাবে ওই অর্থ খরচ করবে। সেটা প্রতিটি দলের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি। শেষ পর্যন্ত আমরা সব দলগুলোই একই পরিমাণ অর্থই নিলামে ব্যয় করেছি।' মাইসোর একথা বললেও পাঁচ বছর আগে এই স্টার্ককেই ৯.৪০ কোটি টাকায় কেকেআর প্রায় নিয়েই ফেলেছিল। শেষ মুহূর্তে গিয়ে মত বদলায়।

ফ্র্যাঞ্চাইজিরা যাই বলুন, এত দাম দিয়ে বিদেশি খেলোয়াড়দের আইপিএলে কেনায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আর, সেই প্রশ্ন তুলছেন ভারতীয় খেলোয়াড়রাই। ফ্র্যাঞ্চাইজিরা ভারতীয় তারকা খেলোয়াড়দের মুক্তি দিতে রাজি না-হওয়ায় তাদের দাম বাড়েনি। কাগজে কলমে- রোহিত শর্মা, এমএস ধোনি, রবীন্দ্র জাদেজা, বিরাট কোহলি, ঋষভ পন্থ ১৬ কোটি টাকা করে পান। জসপ্রিত বুমরাহ ১২ কোটি টাকা, সূর্যকুমার যাদব ৮ কোটি টাকা, মহম্মদ সিরাজ ৭ কোটি টাকায় এবারের আইপিএল খেলবেন। ফ্র্যাঞ্চাইজিরা তাঁদের অতিরিক্ত অর্থ দিলে বা চুক্তির অর্থের সঙ্গে প্যাকেজ যোগ করলেও সেই টাকার পরিমাণ হবে নিলামে কেনা বিদেশি খেলোয়াড়দের দামের চেয়ে কম। তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে এনিয়ে বলার সময় ভারতীয় খেলোয়াড় রবিচন্দ্রন অশ্বিন অভিযোগ করেন, নিলামে অস্ট্রেলিয়ানদের সবসময় বেশি দাম দিয়ে কেনা হয়! আর, প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক কুম্বলে কটাক্ষের সুরে বলেন, 'আইপিএলে বিদেশি খেলোয়াড়দের জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিদের আলাদা অর্থের থলে রাখা উচিত!'

আরও পড়ুন- সৌরভের বাঙালি বুদ্ধিতে বাজিমাত দিল্লির! ‘নতুন ধোনি’ খেলবেন ক্যাপিটালস-এর জার্সিতেই

জিও সিনেমায় অনিল কুম্বলে বলেন, '২৫ খেলোয়াড়ের দলে বিদেশি আট জন। সেই হিসেবে বিদেশি খেলোয়াড়দের জন্য বরাদ্দ অর্থও মোট অর্থের এক-তৃতীয়াংশ হওয়া উচিত। সেটা না-হওয়ায় বৈষম্য হচ্ছে। পেসারদের কিনতেই ফ্র্য়াঞ্চাইজিরা সব অর্থ ঢেলে দিচ্ছেন। স্পিনারদের জন্য বরাদ্দ কমে যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কার অলরাউন্ডার কাম লেগ স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে হায়দরাবাদ মাত্র ১.৫০ কোটি টাকায় কিনেছে। ভারতের শার্দুল ঠাকুরকে কিনেছে ৪ কোটি টাকায়। রচিন রবীন্দ্রকে কিনেছে মাত্র ১.৮০ কোটি টাকায়।'

Cricket Australia Australia IPL ipl auction Australia Cricket Team Pat Cummins
Advertisment