মুম্বই ইন্ডিয়ানস (এমআই) নির্মমভাবে রোহিত শর্মাকে ক্যাপ্টেন্সি থেকে সরিয়েছে। চেন্নাই সুপার কিংস (সিএসকে) কিন্তু আজও মহেন্দ্র সিং ধোনি ছাড়া কাউকে অধিনায়ক হিসেবে ভাবতেই পারে না। আজও গোড়ার দিনের মতই চেন্নাই সুপার কিংসের সমর্থকরা ধোনিকে 'থালা' বলে ডাকেন। তামিল ভাষায় 'থালা' শব্দের অর্থ হল নেতা। আবার, যে সে নেতা নয়। প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে সাফল্য এনে দিয়েছেন, এমন নেতা। সেই নেতা, যিনি সরলতার জন্যও সকলের শ্রদ্ধেয়। এত সব গুণ ধোনির মধ্যে খুঁজে পেয়েছে চেন্নাই। সেই কারণেই তিনি চেন্নাই সমর্থকদের কাছে, 'থালা' ধোনি। রোহিতও অবশ্য কিছু কম যান না। তাঁকে মুম্বই ইন্ডিয়ানস সমর্থকরা ঠিক কতটা ভালোবাসেন, তা অপসারণের পর এমআইয়ের ফ্যানবেস-এ ফাটল থেকেই স্পষ্ট।
আগেই জানানো হয়েছিল রোহিতকে
আর, এসব নিয়েই মুম্বই ইন্ডিয়ানস ইদানিং ব্যাপক ব্যস্ত। জুনেই ফ্র্যাঞ্চাইজির শীর্ষকর্তারা নাকি রোহিত শর্মাকে বলে দিয়েছিলেন, তাঁরা নতুন কিছু ভাবছেন। নভেম্বরে গুজরাত টাইটানসের আইপিএল-জয়ী অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া তাঁর পুরোনো দল এমআইতে ফেরেন। ডিসেম্বরে, রোহিতকে সরিয়ে পান্ডিয়াকে নেতা করার কথা জানায় এমআই। যা নিয়ে আইপিএল দুনিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন পড়ে যায়। গুজব, ষড়যন্ত্রের অভিযোগ, অস্বীকারের মত নানা বিষয় এমআইকে ঘিরে ধরে। সমর্থকরা তো আছেনই।
বিশ্বকাপের দুর্দান্ত অধিনায়ক
বিশেষজ্ঞদেরও অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, কিছুদিন আগেই তো একদিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপ হয়ে গেল। এই রোহিত শর্মাই ক্যাপ্টেন ছিলেন। ফাইনালে হারলেও তার আগে পর্যন্ত অপরাজিত ছিল টিম ইন্ডিয়া। শুধু অপরাজিত বললে কম হবে। খেলা দেখে মনে হয়েছে, ভারত আসলে ক্রিকেট দৈত্য। আর, বাকি এ টু জেড, স্রেফ নবিস। এমন পারফরম্যান্স, একাধিকবার বিশ্বকাপজয়ী ভারতের মধ্যে এতদিন পর্যন্ত দেখেননি সমর্থকরা। সেই দলের নেতাকে কীভাবে বদলানোর কথা ভাবতে পারে মুম্বই ইন্ডিয়ানস? এটা ভেবেই বহু এমআই সমর্থক তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন!
পালটা প্রশ্ন
অনেকে আবার প্রশ্ন তোলেন, হার্দিক যদি এতই অমূল্য, গুজরাত টাইটানস তাঁকে ছাড়ছে কেন? কোথায়, ধোনিকে তো চেন্নাই সুপার কিংস এত বছর পরও নেতার পদ থেকে সরাচ্ছে না? ধোনির বয়স তো আরও বেশি! অনেকে পালটা বলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু, সত্যি কথা বলতে গেলে এসব ধন্দ কোনও ক্রিকেটীয় জ্ঞানই পরিষ্কার করতে পারেননি। তা সে ভারতীয় ক্রিকেটের আইকন গাভাসকরই হোন না-কেন, সমর্থকরা উত্তরে সন্তুষ্ট হননি। এটা নয় যে তাঁদের মতের সঙ্গে মেলেনি বলে, তাঁরা সন্তুষ্ট হননি। সমর্থকদের ক্ষোভের কারণ, তাঁদের কোনও উত্তরই নিখুঁত যুক্তিগ্রাহ্য মনে হয়নি।
খেলোয়াড় ধরে রাখার নিয়ম
তবে, ফ্র্যাঞ্চাইজি একবগ্গা। কারণ, ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্ব- ব্যালেন্স শিট, স্কোরশিটকে সমান গুরুত্ব দেয়। এই ক্রিকেট বিশ্ব যেন ভিন্ন একটা নিয়মে চলে। যে নিয়ম ঠিক করে দেয় নিলাম, দলে ধরে রাখার সিদ্ধান্ত, ব্র্যান্ডিং, মূল্যায়ন, বরখাস্ত, স্বাক্ষর করানো- সব কিছুই। কী সেই নিয়ম? সূত্রের খবর, তা হল আইপিএলের অনন্য খেলোয়াড় ধরে রাখার নিয়ম। এই নিয়ম তিন বছর কার্যকর থাকে। ২০২৫-এ ফের তা কার্যকর হবে। তার আগে ২০২৪ ছিল প্রস্তুতিবর্ষ। যেখান থেকে, মুম্বই ভবিষ্যতের ঘুঁটি সাজানো শুরু করেছে। তিন বছরের হিসেবে এই অনন্য নিয়মে ফ্রাঞ্চাইজি ২০২৮ পর্যন্ত কোনও নির্দিষ্ট খেলোয়াড়কে ধরে রাখতে পারবে।
তিন বছর জেতেনি
২০২০ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ানস পঞ্চমবার আইপিএল খেতাব জিতেছে। তারপর থেকে- ২০২১, ২০২২ এবং ২০২৩ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ানস সাফল্যের মুখ দেখেনি। এই তিন বছরে আইপিএলে এমআইয়ের স্থান ৫ম, ১০ম এবং ৪র্থ। এই পরিস্থিতিতে ৩৬ বছরের রোহিতকে পরবর্তী তিন বছর ধরে রাখা মুম্বই ইন্ডিয়ানসের কাছে বড় ঝুঁকি হয়ে যাবে। সেই জন্যই ফ্র্যাঞ্চাইজি নতুন করে ভেবেছে। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি এখনও রোহিতকে ছাড়তে নারাজ। কারণ, তাঁর ব্যাট সচল। পাশাপাশি, পোড়খাওয়া নেতা হিসেবে দলের মস্তিষ্কের অংশ হতে পারেন। তাই যতক্ষণ রোহিতের সক্ষমতা আছে, ততক্ষণ দলে থাকুন। এটাই চায় মুম্বই ইন্ডিয়ানস।
মুম্বইয়ের দৃষ্টিভঙ্গি
মুম্বই ইন্ডিয়ানস তাদের মালিকদের ভাবনা অনুযায়ী, সব সময় একটা স্বচ্ছ কর্পোরেট দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলায় বিশ্বাসী। রোহিত যখন এমআইতে এসেছিলেন, তখন তিনি ছিলেন ২৪। তার দুই বছর পর, অর্থাৎ ২৬ বছর বয়সে অধিনায়ক হন। দলকে পাঁচটি ট্রফি দিয়েছেন। আর, হার্দিক এখন ৩০। তাঁকে কয়েক বছর অধিনায়ক রাখলে, হার্দিকের সেরা ক্রিকেট বছরগুলোও এমআই পাবে। এক্ষেত্রে পালটা প্রশ্ন উঠেছে যে হার্দিক তো চোটপ্রবণ। তাঁকে এতবড় গুরুদায়িত্ব দেওয়াটা কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে? এক্ষেত্রে এমআই-এর যুক্তি, তারা জসপ্রিত বুমরাহর মত চোটপ্রবণ খেলোয়াড়কেও সামলাচ্ছে। তাই, হার্দিককে সামলাতে তাদের কোনও অসুবিধাই হবে না।
আরও পড়ুন- কিংবদন্তি রোহিতকে একসময় ‘অপমান-ই’ করেছিল KKR! এখনও হাত কামড়ায় শাহরুখের ফ্র্যাঞ্চাইজি
হার্দিককে ছাড়াই রোহিত সফল
যাঁরা রোহিতের পক্ষে, তাঁদের বক্তব্য হল, হার্দিককে ছাড়াই টিম ইন্ডিয়া একদিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপে অভাবনীয় খেলেছে। এমনকী, দল বিশ্বকাপ জিতে নজিরও গড়তে পারত। আর, সেই সময়ই কি না রোহিতকে সরানোর জন্য গুজরাত টাইটানসের সঙ্গে শলা করেছে মুম্বই ইন্ডিয়ানস। তাছাড়া এমআই যখন হার্দিককে নেতা ঘোষণা করেছে, বিসিসিআই তখনও টি২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নেতা বাছাই করেনি। সেক্ষেত্রে মুম্বইয়ের নেতাই দেশের টি২০ নেতা, এমনটা না-ও হতে পারে। শুধু কি তাই? এমআই স্কোয়াডের দুই অধিনায়ক পদপ্রার্থী সূর্যকুমার যাদব ও জসপ্রিত বুমরাহ ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। দু'জনেরই উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকতেই পারে। কারণ, ইতিমধ্যেই তাঁরাও দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাই, হার্দিককে নেওয়া সিদ্ধান্তটা বড় তাড়াতাড়ি হয়ে গেল বলেই মুম্বই সমর্থকদের একাংশের ধারণা।