Advertisment

আম্বানির মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে দিতে হবে ১০০ কোটি! IPL-এর গোপন ট্রান্সফারের বিরাট খবর ফাঁস

আইপিএলে হার্দিক ইস্যুতে নয়া মোড়

author-image
IE Bangla Sports Desk
New Update
hardik-ambani

হার্দিক পান্ডিয়া এবং মুম্বই মালকিন নীতা আম্বানি (টুইটার)

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ ব্যস্ত রয়েছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। গত জুনেই নাকি রোহিতকে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স-এর তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, ফ্র্যাঞ্চাইজি তাঁকে পেরিয়ে ভাবছে। নভেম্বরের ঘটনাবহুল সময়ে হার্দিক পান্ডিয়াকে অল-ক্যাশ ডিলে মুম্বই ফিরিয়েছে। আর ডিসেম্বরেই বোমা ফাটানো সেই ঘোষণা ভেসে এসেছে- রোহিতকে সরিয়ে ক্যাপ্টেন হচ্ছেন হার্দিক। এরপরে একগুচ্ছ ঘটনা প্রবাহ- হৃদয়ভাঙা, প্রবঞ্চনা, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আইপিএল দুনিয়াকে আছড়ে ফেলেছে।

Advertisment

রোহিত সামনে থেকে বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিয়ে জাতীয় দলকে ফাইনালে পৌঁছে দিয়েছেন। এমন আবহে মুম্বইয়ের এই ঘোষণা বিস্ময় উদ্রেক করেছে ক্রিকেট বিশ্বে। এমনকি গুজরাট টাইটান্সও কীভাবে জাতীয় দলের ভাবী অধিনায়ককে ছেড়ে দিল, সেই প্রশ্ন-ও উঠে গিয়েছে।

আসলে ফ্র্যাঞ্চাইজি জগতের সিদ্ধান্ত, সাধারণ ক্রিকেটীয় বিচার বুদ্ধির মাপকাঠিতে যাচাই করতে গেলেই মুশকিল। টি২০ ক্রিকেট জগৎ অনেকটা অর্থনীতির সঙ্গে তালমিলিয়ে চলে। যেখানে ব্যালান্স শিট এবং স্কোরশিটকে পাশাপাশি রাখা হয়। ছাঁটাই এবং অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বিবেচ্য হয় ব্র্যান্ডিং এবং বাজারের আর্থিক মুল্যায়ন।

দেশীয় ক্রিকেট সমর্থককুলে সাম্প্রতিক সময়ে দোটানা হাজির করে দিয়েছে এই অবিরত জাতীয় দল বনাম আইপিএল সংঘাত। আর হার্দিক-রোহিত ইস্যুতে মুম্বই কেন এমন অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হল?

মুম্বই কেন হার্দিককে নিল?
বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, হার্দিককে নেওয়ার পিছনে যে ফ্যাক্টর সবথেকে জোরালো ছিল, তা হল, আইপিএলের রিটেনশন নিয়ম। ২০২৪-এ মেগা নিলামের সার্কেলের শেষ বছর। মেগা নিলামের আসর প্রত্যেক তিন বছর অন্তর হওয়ার কথা। ২০২৫-এ পুনরায় হবে মেগা নিলাম। সেই নিলামের আগেই ঠিক হয়ে যাবে, ২০২৮ পর্যন্ত কোন কোন তারকাদের ফ্র্যাঞ্চাইজিরা রিটেনশন করবে।

২০২০-তে আইপিএল জয়ের পর মুম্বইয়ের পারফরম্যান্স নিম্নমুখী। তারপরের তিন বছর মুম্বই ফিনিশ করেছে পঞ্চম, দশম এবং চতুর্থ স্থানে। ২০২৫-এর মেগা নিলামের আগে ৩৬ বছরের রোহিতকে রিটেন করা অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। এমনটা ভাবা হয়েছে।

হ্যাঁ, রোহিত অবশ্যই টি২০ ক্রিকেটার হিসেবে ফুরিয়ে যাননি। এখনও যে কোনও টি২০ দলের সম্পদ তিনি। দলের মগজাস্ত্র হয়ে উঠতে পারেন তিনি। মুম্বই চেয়েছে রিলে রানারদের মত রোহিত যেন নিজের ব্যাটন সমর্পণ করেন ভাবী নেতা হার্দিককে।

মুম্বই ইন্ডিয়ান্স কঠোর কর্পোরেট সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী। সবসময় প্ল্যান-বি ধরে চলায় বিশ্বাসী পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্র্যাঞ্চাইজি। মুম্বই এবং হার্দিকের সম্পর্ক বহুদিনের। ৩০ বছরের হার্দিক এই মুহূর্তেই দারুণ সময়ে রয়েছেন। কেরিয়ারের সবথেকে ছন্দময় সময় উপহার দিতে পারেন আগামী কয়েক বছর ধরে। এই সময়েই হার্দিককে ফিরিয়ে আনলে নিজের সেরা সময় মুম্বইয়ের জার্সিতে মেলে ধরতে পারেন। যে কাজ অতীতে করেছেন রোহিত-ও। রোহিত ২৪ বছরে মুম্বইয়ে যোগ দেন। ২৬ বছরে অধিনায়ক হন। তারপর দলের হয়ে পাঁচবারের ট্রফি জেতেন।

তবে প্রশ্ন অন্যত্র। চোটপ্রবণ হার্দিককে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা কষে কি কিছুটা গড়বড় করার ফেলল মুম্বই? ঘটনা হল, হার্দিককে নিয়ে এই জুয়া খেলার আগে এই ফ্যাক্টর নিয়েই রীতিমত গবেষণা হয়েছে মুম্বইয়েরর অন্দরমহলে। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে হার্দিকের চোট, তাঁর ফিটনেস বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এমনকি চোট-প্রবণ জসপ্রীত বুমরাকে যেভাবে ম্যানেজ করে সেরাটা বের করে আনতে সমর্থ হয়েছে মুম্বই, সেই বিশ্বাসেই বলীয়ান হয়ে হার্দিককে নিয়ে আনা হয়েছে বাণিজ্য নগরীর ফ্র্যাঞ্চাইজিতে।

রোহিত শর্মাকে সরিয়ে দেওয়া ঠিক হয়েছে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, তবে বিতর্কিত এই সিদ্ধান্তের টাইমিং নিয়ে কারোর কোনও সংশয়-ই নেই। মুম্বই যখন হার্দিককে পাওয়ার জন্য গুজরাটের সঙ্গে কথাবার্তা চালাচ্ছিল, সেই সময় ভারত বিশ্বকাপে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছিল। রোহিত নিঃস্বার্থ নেতা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন।

তবে অন্য জটিলতা অব্যাহত ছিল। ঘটনাচক্রে, মুম্বই যখন হার্দিককে নেতা হিসেবে ঘোষণা করে, সেই সময় টি২০ ওয়ার্ল্ড কাপের নেতৃত্ব দিয়ে বোর্ডে পরস্পরবিরোধী মতামত চালু হয়ে গিয়েছে। মুম্বইয়ে হার্দিককে নেতা হিসেবে প্রোজেক্ট করায় স্রেফ রোহিত-ই নন, আরও দুই অধিনায়কত্বের দাবিদার যাঁরা ছিলেন সেই সূর্যকুমার যাদব, জসপ্রীত বুমরা-ও হতাশ হন। আর হার্দিক ফেরার পর হতাশা গোপন রাখেননি সূর্যকুমার যাদব। বুমরা-সূর্যকুমার দুজনেই যে জাতীয় দলে নেতৃত্ব দিয়েছেন অতীতে।

এই রাগ পুষিয়ে কীভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে সমঝোতা করলেন তারকারা?
আইপিএল সার্কিটে প্রত্যেক ক্রিকেটারের স্বপ্নই থাকে মুম্বইয়ের জার্সিতে খেলার। ভারতীয় ক্রিকেটের সবথেকে প্রভাব সম্পন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি ধরা হয় মুম্বইকে। যেভাবে তরুণ ক্রিকেটারদের গ্রুম করে জাতীয় দলের জন্য উপযুক্ত করে তোলা হয়, তাতে বিশ্ব ক্রিকেটের এক চালু ধারণা হয়ে গিয়েছে, জাতীয় দলের রাস্তা আসলে মুম্বইয়ের ওপর দিয়েই গিয়েছে।

ভারতের সবথেকে নামি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স। আর সেই প্রতিষ্ঠানের ওয়ার্ক ফোর্স মুম্বই ফ্র্যাঞ্চাইজিকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে, যেখানে অন্য কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি স্রেফ পাত্তাই পাবে না। মুম্বইয়ে খেলার প্যাকেজ লটারি জেতার মত- মুম্বইয়ের অত্যাধুনিক হাসপাতালের সুযোগ সুবিধা সারা বছর ধরে, আধুনিক পরিকাঠামো ব্যবহার, প্রায়-ই বিদেশ সফর! হার্দিক ইস্যুতেই ক্রিকেটাররা তাই ট্যা ফু করতে চাইলেও পারবেন না।

গুজরাট টাইটান্স কেন হার্দিককে ছেড়ে দিল?
মুম্বইয়ের ফ্র্যাঞ্চাইজির দর্শন থেকে আহমেদাবাদ ফ্র্যাঞ্চাইজির দর্শন সম্পূর্ণ আলাদা। দুই দলের মতাদর্শ একদমই আলাদা। ২০২১-এ সিভিসি ক্যাপিটালস আইপিএলে অংশ হওয়ার জন্য ৫৬২৫ কোটি টাকা খরচ করেছিল। মুম্বই ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা যেখানে এক বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, সেখানে সিভিসি ক্যাপিটালস ৪০ ম্যানেজিং পার্টনার সহ গ্লোবাল নেটওয়ার্ক রয়েছে ২৯ অফিস সহ।

হার্দিককে বিক্রি করে গুজরাট ১৫ কোটি টাকা সেভ করেছে। সেই সঙ্গে অপ্রকাশিত ট্রান্সফার ফি রয়েছে। সেই অঙ্ক কত? সেটা কেবলমাত্র আইপিএল-ই জানবে, প্রকাশ পাবে না। সেই অংকের পরিমাণ নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা তুঙ্গে। অনেকেই বলছেন, এই অঙ্ক একশো কোটি।

হার্দিকের ট্রান্সফারে পাওয়া এই অর্থ সন্ধান পাওয়া যাবে সিভিসি ক্যাপিটালসের বর্ষ শেষের ব্যালান্স শিটে। এতে মার্কেটে কোম্পানির ভ্যালুয়েশন-ও বাড়বে। কোনও ইনভেস্টমেন্ট ফার্মের কাছে আইপিএল ট্রফি জেতা এবং সম্পদ কেনা-বেচা একই বিষয়।

পরবর্তীতে যদি গুজরাট টাইটান্স নিজেদের শেয়ার বিক্রি করে দেয়, তাহলে বড় অর্থ প্রাপ্তির সম্ভবনা রয়েছে। গুজরাটের ভাঁড়ারে রয়েছে শুভমান গিলের মত প্রতিভা। গোকুলে বেড়ে উঠছে। শুভমানকেও ফর্মের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিতে বিরাট ট্রান্সফার ফি-র বিনিময়ে ট্রেড করে দেওয়ার সম্ভবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

ফুটবল বিশ্বে এই অর্থনীতি মেনেই নিজেদের সেরা তারকাকে ট্রান্সফার করে দেওয়ার রেওয়াজ চালু রয়েছে। বেনফিকা এবং আতলেতিকো মাদ্রিদের মত ক্লাব ম্যান সিটি, রিয়েল মাদ্রিদের মত আর্থিকভাবে পুষ্ট ক্লাবে ফুটবলার বিক্রি করে লাভ করেছে ৮৭২৩ কোটি টাকা। মুম্বইয়ের দর্শন ঐতিহ্য গড়ে তোলায়। সম্পদ কেনা-বেচায় মুম্বই কোনওদিন-ই আগ্রহী নয়। অন্যদিকে, গুজরাটের দর্শনই হচ্ছে নিজেদের শেয়ার বিক্রি করা।

Mumbai Indians Hardik Pandya Rohit Sharma IPL Gujarat Titans
Advertisment