প্রথম টি২০ ম্যাচেই হাইস্কোরিং দ্বন্দযুদ্ধে নজর কেড়েছেন মুকেশ কুমার। বাংলার এই পেসারই হয়ত পরবর্তী মহম্মদ শামি। এমনটাই বলে দিচ্ছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে বঙ্গ পেসারকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত অশ্বিন জানিয়ে দিয়েছেন, "প্ৰথমে ভেবেছিলাম মহম্মদ সিরাজ হয়ত জুনিয়র মহম্মদ সিরাজ হতে চলেছে। এখন আমার মনে হচ্ছে, শামির উত্তরসূরি মুকেশ কুমার। শামিকে লালা বলে ডাকা হয়। বিখ্যাত অভিনেতা মোহনলালকে সম্মান জানিয়ে আমিও শামিকে লালেটটান বলি।
তারকা স্পিনার আরও বলেছেন, "মুকেশ কুমারের শারীরিক গঠন, উচ্চতা, রিস্ট পজিশন একই ধরণের। ব্যাক স্পিনে বলের নিয়ন্ত্রণ অসাধারণ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে ও দারুণ বল করেছিল। ওঁর বলের সিম পজিশন একদম সোজা। বার্বাডোজে অনুশীলন ম্যাচে দারুণ খেলেছিল ও।"
বাংলায় কীভাবে প্রতিভা অন্বেষণের ক্যাম্পে মুকেশ কুমারকে শনাক্ত করা হয়েছিল, তা নিয়েও অজানা তথ্য শেয়ার করলেন দক্ষিণী স্পিনার। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন মুকেশ কুমারের উত্থানের নেপথ্যে। প্রশাসক হিসাবে তাঁর ভূমিকা বদলে দিয়েছে বাংলার ক্রিকেটকে। সেই দিকেই ইঙ্গিত করে রবিচন্দ্রন অশ্বিন বলেছেন, "ওঁর গল্পটা অসাধারণ। অসম্ভব মার্জিত ব্যবহার। সৌরভ সিএবির দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্যালেন্ট হান্ট ক্যাম্পের আয়োজন করেন। যেখানে তিনি নতুন প্রতিভা তুলে আনার দায়িত্ব দেন মুথাইয়া মুরলিধরণ, ওয়াকার ইউনিস, ভিভিএস লক্ষ্মণদের। কলকাতায় কাজের খোঁজে আসা মুকেশ কুমার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে সেই ট্যালেন্ট হান্টে যোগ দেয়।"
"ওঁর কলারে একটা বিব দেওয়া হয়েছিল। যেখানে ওঁর পদবী লেখা ছিল। ওঁর নাম ডাকা হলেই বল করবে, এমনটাই ঠিক ছিল। তবে সেই সময়ে ও টয়লেটে গিয়েছিল। জাস্ট ভেবে দেখ, তোমাকে বিখ্যাত ওয়াকার ইউনিসের সামনে বোলিং করতে হবে। এবং তুমি টয়লেটে ঢুকে বসে আছো। ওঁর নাম ডাকা হলেও বল করতে আসেনি। ও ফেরার পর আরও ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে। ওঁকে বলা হয়, ওঁর নাম ডাকা হয়নি।"
"ওয়াকার ইউনিসও বেরিয়ে জেতেন। তবে তিনি মুকেশ কুমারকে শেষে কয়েকটা বল করতে বলেন। সেই দুটো বলই ওঁর ভাগ্য বদলে দেয়। এখন ও জাতীয় দলের হয়ে খেলছে। ওয়াকার ওঁর বল দেখেই বলেছিল, এই ছেলেটার মধ্যে প্রতিভা রয়েছে। অনেকটা পথ পাড়ি দিতে পারে। এর পরে মুকেশ ভিভিএস রামনের কোচিংয়ে রঞ্জি ট্রফি খেলে।"
কলকাতায় ট্যাক্সির ব্যবসা ছিল মুকেশ কুমারের বাবার। তবে আর্থিক লোকসানের মুখে পড়ায় বাবাকে সাহায্য করতে কলকাতায় চলে আসেন মুকেশ কুমার। বাবার ইচ্ছার কিছুটা অমতেই মুকেশ কুমার স্থানীয় লিগ ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন ম্যাচ পিছু ৪০০/৫০০ টাকায়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে মুকেশ কুমার বলে দিয়েছিলেন, "বাবা আমাকে একবছর সময় দিয়েছিলেন। এই সময়ের মধ্যে যদি কিছু করতে না পারি, তাহলে ঠিক ছিল আমি বাবার সঙ্গে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ব। ভারতীয় আর্মিতে সুযোগ না পাওয়ার পর আমি যে ক্রিকেটে ঝুঁকে, সেটা উনি ভালোই বুঝতেন। উনিই আমাকে পরামর্শ দেন, কলকাতায় এসে ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি ওঁকেও যেন সাহায্য করতে পারি।"
আইপিএলে প্ৰথম কয়েকটি ম্যাচে মোটেই সুবিধা করতে পারছিলেন না। তবে মহম্মদ শামি-ই তাঁর ত্রাতা হয়েছিলেন। শামির পরামর্শ কী ছিল মুকেশ কুমারকে? "আইপিএলে রান হজম করতেই হবে। স্রেফ প্রতিদিন প্রার্থনা করে যাও। এবং এমন মানসিকভাবে তৈরি হয়ে যাও, যে তোমাকে হয়ত চার ওভারে ৬০ রান খরচ করতে হতে পারে।" "আমি প্ৰথমে হেসেছিলাম। তবে সত্যি কথা বলতে এই পরামর্শ কাজে এসেছিল। আমার মধ্যে থেকে ব্যর্থতার ভয় একদম কেটে গিয়েছিল।" বলেছেন মুকেশ কুমার।