Advertisment

আইপিএল নিলাম: কে কোথায় দাঁড়িয়ে

আইপিএল নিলাম হয়ে গেল জয়পুরে। মুদ্রার ঝন​ৎকার প্রতিবারের মত এবারও শোনা গেল অনেক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন দল কেমন হল, সেই আসল প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেন ক্রিকেটো​ৎসাহী তপোব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
ipl-trophy-759

কোন দল কেমন হল

গত ১৮ই ডিসেম্বরের নিলামের মধ্যে দিয়েই ২০১৯ সালের আইপিএলের ঢাকে কাঠি পড়ে গেল। ভারতের জাতীয় নির্বাচনের কারণে পরবর্তী আইপিএলের কিছুটা অংশ হয়তো ভারতের বাইরে হবে। যদিও বোর্ড এখনো ভারতের পরিবর্তে কোথায় খেলা হবে তা ঘোষণা করেনি, তবে বিশ্বস্ত সূত্রের খবর যে তাদের প্রথম পছন্দ দক্ষিণ আফ্রিকা। দু-একটি দলের খেলোয়াড় চয়ন দেখে মনে হয় তারা বোধহয় দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলার কথা ভেবেই দল সাজাচ্ছে।

Advertisment

চেন্নাই সুপার কিংস

গতবারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই দলে ছিলেন গত বছর থেকে। গত বছরের নিলামের সময়ই দেখা গিয়েছিল, চেন্নাইয়ের টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁদের সাসপেনশন হওয়ার আগের দলের যতজন সম্ভব খেলোয়াড়কে ফিরিয়ে নিতে চান। এবছরে মোহিত শর্মাকে দলে নেওয়া সেই দিকেই আর একটি পদক্ষেপ। এখনকার ভারতীয় দলের অংশ না হলেও মোহিতের স্লোয়ার বল ও অন্যান্য বৈচিত্রের জন্য বলাই যায় যে চেন্নাইয়ের এই পদক্ষেপ মন্দ হবে না।

সানরাইজার্স হায়দরাবাদ

বর্তমানে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ দলের খেলোয়াড়দের নামের ওপর চোখ বোঝালেই বোঝা যায় যে এটি একটি চমৎকার ভারসাম্যময় দল, বিশেষ করে বোলিং বিকল্পের দিক দিয়ে। নিলামের আগেই তারা শিখর ধাওয়ানের বিনিময়ে বিজয় শংকর, অভিষেক শর্মা এবং শাহবাজ নাদিমকে দলে নিয়েছিল। দলের নিচের দিকের ব্যাটিং এবং স্পিন বোলিংকে আরো শক্তিশালী করেছে তাদের এই সিদ্ধান্ত। তাই নিলামে মূলত ব্যাটসম্যান এবং উইকেট কিপার নেওয়ার দিকেই লক্ষ্য ছিল তাঁদের। সে কারণেই তারা ২ কোটি ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে তুলে নিয়েছে ইংল্যান্ডের আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান এবং উইকেটকিপার জনি বেয়ারস্টোকে। এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাট বেয়ারস্টো এই প্রথম আইপিএলে সুযোগ পেলেন এবং বিশ্বকাপ প্রস্তুতির জন্য মাঝপথে চলে যেতে হলেও  যেটুকু সময় থাকবেন সেই সময়ে সানরাইজার্সের হয়ে বেশ কিছু ভালো ইনিংস খেলবেন বলেই টিম ম্যানেজমেন্ট আশা করবে। এছাড়াও তারা তুলেছে টি-২০ ক্রিকেটের আর এক সেরা ব্যাটসম্যান নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গুপ্টিলকে। এছাড়া ঋদ্ধিমান সাহাকে ছেড়ে দিয়ে আবার ১.২০ কোটি দিয়ে তুলে নেওয়াও তাদের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।

কলকাতা নাইট রাইডার্স

কলকাতা নাইট রাইডার্স প্রত্যেক নিলামের সময়েই তাদের কিছু বিশেষ পছন্দের পেছনে ছুটে বাকিদের চমকে দেয়। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নাইটদের প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল দলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের ভালো বিকল্প তৈরি করা। সেই কারণে আন্দ্রে রাসেলের ফিটনেসের কথা মাথায় রেখে কেকেআর কার্লোস বার্থওয়েটের পেছনে যায় এবং কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের সঙ্গে চরম দরাদরির পরে শেষ পর্যন্ত ৫ কোটি টাকায় কার্লোসকে নিজেদের ঘরে তোলে। দামটা বেশী হয়ে গেল কিনা সেটা সময় বলবে, তবে গত টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালের শেষ ওভারে ইডেনে কার্লোসের মারা চার ছক্কার কথা মাথায় রাখলে বলা যায় দামটা বোধহয় খুব বেশী নয়। এছাড়া কলকাতা চেষ্টা করেছে বিদেশি ফাস্ট বোলার তোলার। লকি ফার্গুসন, অ্যানরিক নোরজে এবং হ্যারি গার্নের মত তিনজন ফাস্ট বোলারকে তুলে নিয়েছে তারা। নিখিল নায়েক ও পৃথ্বীরাজ ইয়ারার মত কিছু দেশি তরুণ খেলোয়াড় ছাড়াও কলকাতার একজন উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড় হলেন ইংল্যান্ডের জো ডেনলি। সাম্প্রতিককালে ডেনলি টি-২০তে নিজেকে একজন অলরাউন্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং ইংল্যান্ডের বাইরেও বিবিএল এবং পিএসএলেও বেশ কিছু মনে রাখার মত ইনিংস খেলেছেন। চোট-আঘাতপ্রবণ ক্রিস লিনের বদলি হিসেবে জো ডেনলি কিন্তু মন্দ হবেন না।

আরও পড়ুন, বিরাট কি সত্যিই অসভ্য?

রাজস্থান রয়্যালস

রাজস্থান রয়্যালস প্রতি বছরই তাঁদের অনামী ভারতীয় খেলোয়াড়দের ওপর নির্ভর করে। এ বছরেও তারা তুলে নিয়েছে রিয়ান পরাগ, মনন ভোরার মত কিছু তরুণ ভারতীয় খেলোয়াড়দের। তার সঙ্গে জয়দেব উনাদকটকে ফিরিয়ে নিয়েছে ৮.৪ কোটি দিয়ে এবং বাঁচিয়েছে ৩.১ কোটি টাকা। তাঁর সঙ্গেই দলে নিয়েছেন আর এক ফাস্ট বোলার বরুণ অ্যারনকে। তবে রাজস্থানের অধিকাংশ বিদেশি খেলোয়াড়ই বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য মাঝপথে চলে যেতে পারেন কিন্তু তাঁদের বিকল্প হিসেবে অ্যাস্টন টার্নার বা লিয়াম লিভিংস্টোনের মত স্বল্পখ্যাত বিদেশি কতটা কাজে লাগেন সেটাই দেখার।

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স

লাসিথ মালিঙ্গা তাঁর বেস প্রাইস ২ কোটি টাকার বিনিময়ে ফিরে গেছেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স দলে। দেখা যাক তিনি তাঁর পুরনো ম্যাজিক ফিরিয়ে আনতে পারেন কিনা। এর সঙ্গে মুম্বাই তুলে নিয়েছে আর এক প্রাক্তন ভারতীয় ফাস্ট বোলার বারিন্দার স্রান এবং আনমোলপ্রীত সিংয়ের মত তরুণ খেলোয়াড়দের। প্রথমবার অবিক্রিত থাকলেও দ্বিতীয়বার যুবরাজ সিংকে তুলে নিয়েছে মুম্বাই। যুবরাজের ফর্ম আগের মত না হলেও দলের ব্যাটিংকে অনেকটাই ভরসা যোগাবেন তিনি এবং তার সঙ্গেই নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে সাহায্য করতে পারবেন দলের তরুণ খেলোয়াড়দের। তবে মুম্বাইয়ের স্পিন বোলার বলতে আছেন শুধুই ক্রুনাল পাণ্ডিয়া, ময়াঙ্ক মারকণ্ডে এবং রাহুল চাহার। ময়াঙ্ক গতবার আইপিলে দারুণ খেললেও মুম্বাইয়ের উচিত ছিল অক্ষর প্যাটেলের মত অভিজ্ঞ কাউকে তুলে রাখা।

কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব

কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব আবার তাদের দলে আপাদমস্তক পরিবর্তনের পথে হেঁটেছে। এবার নিলামে সর্বাধিক ১৩ জন খেলোয়াড় তুলে নিয়েছে তারা। তাদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পছন্দ অবশ্যই তামিলনাড়ুর ‘মিস্ট্রি’ স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী। তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগ খেলে নজরে আসা এই স্পিনারের জন্য তাঁর বেস প্রাইস ২০ লাখ টাকার বেয়াল্লিশগুণ ৮.৪ কোটি টাকা দিয়ে তাঁকে দলে নিয়েছে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। এর আগে কারিয়াপ্পা বা মুরুগন অশ্বিনের মত ‘মিস্ট্রি’ স্পিনাররা আইপিএলে সেভাবে দাগ না কাটলেও দেখা যাক বরুণ অন্য কোন ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারেন কিনা। এছাড়া লোয়ার অর্ডার ব্যাটিংকে শক্তিশালী করতে তারা দলে নিয়েছে তিন বিদেশি নিকলাস পুরান, মোজেস হেনরিকেস এবং ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে নজরকাড়া স্যাম কুরান। দলের পেসবিভাগে মহম্মদ শামির অন্তর্ভুক্তিও উল্লেখযোগ্য।

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর

প্রতিবারই শক্তিশালী দল গঠন করেও আইপিএল ট্রফি অধরাই থেকে গেছে ব্যাঙ্গালোরের কাছে। তাই আবার নিজেদের দলের ফাঁকফোকর ভরানোর দিকে নজর দিয়েছে তারা। বিরাট কোহলি এবং এবি ডি ভিলিয়ার্সের টপ অর্ডারের পর লোয়ার-মিডল অর্ডারে ভালো ব্যাটসম্যানের অভাব আগে ভুগিয়েছে তাদের। সে কথা মাথায় রেখে তারা তুলে নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নজরকাড়া খেলোয়াড় সিমরন হেটমেয়ার, দক্ষিণ আফ্রিকার হেনরিক ক্লাসেন এবং মুম্বাইয়ের প্রতিভাবন তরুণ খেলোয়াড় শিভম দুবেকে। ডেথ ওভারে দলের রানরেট বাড়ানো বা যেকোন টার্গেট তাড়া করে জেতানোয় এঁরা সিদ্ধহস্ত। বাংলার ১৫ বছরের লেগ স্পিনার প্রয়াস রায় বর্মণের নেওয়ার জন্য দেড় কোটি টাকা খরচা করেছে ব্যাঙ্গালোর, তবে একজন ভালো ডেথ বোলারের অভাব ভোগাতে পারে তাদের।

দিল্লি ক্যাপিটালস

গত কয়েক বছরের নিলামের মত দিল্লি ক্যাপিটালসের টেবিল এবছরেও ব্যস্ত ছিল। নিলামে ১০ জন খেলোয়াড় তুলেছে তারা। নিলামের আগেই তারা ঘরের ছেলে শিখর ধাওয়ানকে ফিরিয়ে নিয়েছিল। এবারে নিলামে তারা তুলে নিল  দিল্লির আর এক অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ইশান্ত শর্মাকে। শিখর, পৃথ্বী শ, শ্রেয়স আইয়ারদের মত খেলোয়াড়রা আগে থেকে দলে ছিলেন তাই টিম ম্যানেজমেন্ট নজর দিয়েছিল অলরাউন্ডারদের দিকে। সে জন্যই অক্ষর প্যাটেল, জলজ সাক্সেনা, কলিন ইংগ্রাম এবং কিমো পলের মত দেশি-বিদেশি অলরাউন্ডারদের দলে নেওয়া হয়েছে। গত কয়েক বছরের অষ্টম স্থানে শেষ করার হতাশা কাটিয়ে এবারের আইপিএলে ভালো পারফর্ম করতে বদ্ধপরিকর তারা।

গত বেশ কয়েক বছর ধরেই দেখা গেছে যে আইপিএলে সফল দলগুলির সাফল্যের রূপরেখা লেখা হয়েছে নিলামের টেবিল থেকেই। এ বছরেও বিভিন্ন দল এসেছিল তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা নিয়ে। তাতে তারা কতটা সফল, তা বোঝা যাবে এপ্রিল-মে মাসে, আইপিএল শুরু হলে।

IPL
Advertisment