অভিজাত জীবন যাপনে বিশ্বাস করতেন। পাঁচতারা হোটেল, দুর্মূল্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র দৈনন্দিন জীবনে তাঁর অঙ্গ হয়ে গিয়েছিল। তবে স্ব-উপার্জিত অর্থ নয়, বরং প্রতারণার মাধ্যমেই সংগৃহীত অর্থেই লাক্সারি জীবনযাপন করতেন বছরের পর বছর। বান্ধবী, তাজ হোটেলের মত প্রিমিয়াম হোটেল হোক বা ঋষভ পন্থ- তাঁর প্রতারণার চক্করে পড়েননি এমন খুব কম ব্যক্তি রয়েছেন।
তবে এবার খেল খতম। হরিয়ানা থেকে গ্রেফতার করা হল মাস্টারমাইন্ড মৃণাঙ্ক সিংকে। চাণক্যপুরি থানার পুলিশ আধিকারিকদের জালে পড়লেন হরিয়ানার হয়ে অনুর্ধ্ব-১৯ খেলা তারকা। এমনকি আইপিএল দলের সঙ্গেও সংস্রব ছিল তাঁর।
ক্রিকেটার থেকে জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া সেই মৃণাঙ্ক বহু লাক্সারি হোটেলে জালিয়াতি করেছেন। এমনকি সুপারস্টার ঋষভ পন্থ-ও তাঁর শিকার হয়েছিলেন।
কীভাবে জালিয়াতি চালাতেন?
নিজেকে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স-এর প্রাক্তন ক্রিকেটার হিষ5 পরিচয় দিতেন। এমন ভাবমূর্তি তৈরি করতেন যেন তিনি ভীষণ-ই জনপ্রিয় ক্রিকেট সার্কিটে। তাঁর এই ফাঁদেই পা দিতেন মহিলারা। তাঁদের সঙ্গে অভিজাত লাক্সারি হোটেল বা ফাইন-ডাইন'এ নৈশভোজ সারা হোক বা থাকা সবই করতেন। কোনওরকম পেমেন্ট না করেই।
২০২২-এর ঘটনা। দিল্লির তাজ প্যালেসের মত হোটেলে ছিলেন টানা একসপ্তাহ। বিল হয়েছিল ৫.৫৩ লক্ষ। হোটেল কর্তৃপক্ষকে তিনি জানান, তিনি একজন ক্রিকেটার এবং এডিডাস তাঁর বিল পরিশোধ করবে। পরে হোটেলের তরফে তাঁর কাছে বিলের পরিমাণ ইমেল করা হয়। তিনি ভুয়ো অর্থপ্রদানের বিল পাঠান হোটেল কর্তৃপক্ষকে। তবে হোটেলের একাউন্টে সেই অর্থ জমা না পড়ায় সঙ্গেসঙ্গেই হোটেলের তরফে চাণক্যপুরি থানায় যোগাযোগ করা হয়। দায়ের হয় এফআইআর।
২০২০/২১ সিজনে পন্থকেও নিজের ফাঁদে ফেলেছিলেন তিনি। ১.৬৩ কোটি টাকা লুটে নেন পন্থের পকেট থেকে। সেই সময় অভিযুক্ত মৃণাঙ্ক পন্থকে বোঝান তিনি দামি জুয়েলারি, ঘড়ি ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত। বিশ্বাস করেই পন্থ তাঁকে নিজের ঘড়ি দেন। সেই সময় মৃণাঙ্ক ১.৬ কোটি টাকার এক চেক দেন। যে বাউন্স করে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের অভিজাত লাইফস্টাইলের কারণে বেশ জনপ্রিয় তিনি। সেই কারণে রয়েছে ইনস্টাগ্রামে ৪০ হাজারের বেশি ফলোয়ার। সকলেই কাছেই নিজের বিত্তশালী জীবন যাপনের চিত্র তুলে ধরতেন। ফাঁদে ফেলতেন বাকিদেরও। তিনি আবার কর্ণাটকের আইপিএস অফিসারের পরিচয়ও দিতেন।
তদন্তে জানা গিয়েছে, মৃণাঙ্ক দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। পরবর্তীতে রাজস্থানের এক প্রতিষ্ঠান থেকে এমবিএ করেন। তাঁর বক্তব্য, তিনি হরিয়ানার যুব দল এবং মুম্বই ইন্ডিয়ান্স-এ পাঁচ বছর খেলেছেন। যদিও তাঁর সমস্ত দাবি খতিয়ে দেখছেন পুলিশ আধিকারিকর।
অন্য এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, তিনি অনেককেই বলতেন, তাঁর পিতা আশির দশকের জাতীয় দলের এক নামি ক্রিকেটার। বর্তমানে যিনি এয়ার ইন্ডিয়ায় কর্মরত। এছাড়াও তাঁর কাছ থেকে বেশ কিছু আপত্তিজনক ছবি উদ্ধার করা হয়েছে। একাধিক মডেলের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।