রাজস্থান রয়্যালস: ১৩০/৯
গুজরাট টাইটান্স: ১৩৩/৩
ইতিহাস বোধহয় এভাবেই ফিরে ফিরে আসে। মেগা নিলামের পর কেউই কার্যত কল্কে দেননি গুজরাট টাইটান্সকে। 'ব্যর্থদের ব্রিগেড' তকমা দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। টুর্নামেন্টের শেষে সেই লুজার্সরাই চ্যাম্পিয়ন। আবির্ভাবের মরশুমেই ফিরে এল ইতিহাস। যে দলকে হারিয়ে ট্রফিতে চুমু খেলেন হার্দিকরা, সেই দলও আইপিএলের প্ৰথম মরশুমের চ্যাম্পিয়ন।
জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছেন। ফিটনেস নিয়ে প্রতিদিন ঝাঁঝরা হতে হয়েছে। অসম্মানসূচকভাবে নিলামের আগে রিটেন করা হয়নি মুম্বইয়ের তরফে। হার্দিক পান্ডিয়া সমস্ত উপেক্ষা, বঞ্চনা, অপমানের জবাব দিলেন আইপিএলে। নেতা হিসেবে সামনে থেকে দলকে যেমন নেতৃত্ব দিলেন, তেমন বল হোক বা ব্যাটে গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে টেনে নিয়ে গেলেন। ফাইনালের মঞ্চেও হার্দিকের ক্যারিশমা না থাকলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া হত না গুজরাটের। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে মাতিয়ে দিলেন ফাইনালের মঞ্চ।
লক্ষ লক্ষ দর্শকের সামনে মোদি স্টেডিয়ামের স্লো পিচে বল হাতে প্ৰথমে বল হাতে রাজস্থানকে ১৩০-এর মধ্যে বেঁধে রাখলেন। পরে ব্যাট হাতে চাপের মুখে হার্দিক ৩০ বলে ৩৪ করে ম্যাচ অনেকটাই সহজ করে দিলেন। ১৩১ টার্গেট তাড়া করে হার্দিকরা উত্তেজনার প্রহর উপহার দিয়ে পেরোল ১১ বল বাকি থাকতে। হাতে ৭ উইকেট নিয়ে।
আরও পড়ুন: মোদির স্টেডিয়ামে গিনেস রেকর্ডে সৌরভের বোর্ড! IPL ফাইনাল গর্বিত করল ভারতীয়দের
টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে রাজস্থান থমকে গিয়েছিল হার্দিক পান্ডিয়ার সামনে। শুরুটা ভালোই করেছিল রয়্যালসরা। একলাখি দর্শকদের সামনে ওভার পিছু ৮ করে তুলছিলেন যশস্বী জয়সোয়াল এবং জস বাটলার। ১৬ বলে ২২ করে দারুণ সূচনা করেছিলেন যশস্বী জয়সোয়াল। তবে ইয়াশ দয়ালের বলে তিনি ফিরতেই সমস্যার সূত্রপাত। তারপরে পুরোটাই হার্দিক ম্যাজিক।
নিজের স্পেলের শুরুতেই তিনি ফেরান বিপক্ষ ক্যাপ্টেন সঞ্জু স্যামসনকে (১১ বলে ১৪)। সিম আপ ডেলিভারি কভার পয়েন্ট দিয়ে পাঞ্চ করার দরকার ছিল। সঞ্জু পুল করতে গেলেন। সাই কিশোরের হাতে তৎক্ষণাৎ ক্যাচ তুলে বিদায়।
এরপরে হার্দিকের শিকার ডেঞ্জারম্যান জস বাটলার। ইংরেজ তারকা ৩৫ বলে ৩৯ করে খেলা ধরে নিয়েছিলেন। তবে হার্দিক কানায় লাগাতে বাধ্য করলেন তারকাকে। টুর্নামেন্টে নিজের সেরা স্পেলে হার্দিক এরপরে আউট করে গেলেন বিগ হিটার শিমরন হেটমায়ারকেও।
আরও পড়ুন: গতিতে উমরানকে হারালেন ফার্গুসন! IPL ফাইনালের মঞ্চে দ্রুততমের রেকর্ড, রইল ঝড়ের ভিডিও
ক্যাপ্টেনের সঙ্গে দোসর হিসাবে আবির্ভূত হল ভাইস ক্যাপ্টেন রশিদ খানও। তিনি তুললেন দেবদূত পাড়িক্কল। ৯৮/৬ হয়ে যাওয়ার পরে বড় স্কোর খাড়া করা কার্যত সম্ভব ছিল না। তা হয়ওনি।
হার্দিক নিজের ৪ ওভারের স্পেলে মাত্র ১৭ রান খরচ করে তুললেন ৩ উইকেট। রশিদ খান খরচ করলেন ১৮ রান। সাই কিশোরও শেষদিকে দুই উইকেট দখল করলেন।
টাইটান্সের হেভিওয়েট ব্যাটিং লাইন আপের সামনে এই রান ডিফেন্ড করা সম্ভব নয়। তবুও রয়্যালসদের অলৌকিক জয়ের আশা দেখিয়েছিলেন বোল্ট, যুজবেন্দ্র চাহালরা। দ্বিতীয় ওভারেই প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ফিরিয়ে দেন ঋদ্ধিমান সাহাকে। এরপরে ম্যাথু ওয়েডও সাততাড়াতাড়ি আউট হয়ে যান। এমন চাপের সময়ে গুজরাটের নাভিশ্বাস তুলে দিচ্ছিল চাহাল, বোল্টের দম আটকানো স্পেল। স্কোরবোর্ডে হাফসেঞ্চুরি তুলতে ১০ ওভার লাগিয়ে ফেলেছিল গুজরাট।
তবে সেই চাপ আলগা হতেই গিল-পান্ডিয়া মিলে হাফসেঞ্চুরি পার্টনারশিপে দলকে রক্ষা করেন। হার্দিক ৩০ বলে ৩৪ করে আউট হয়ে গেলেও শুভমান গিল-মিলার মিলে দলকে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে যান। শুভমান গিল একপ্রান্ত আগলে ৪৩ বলে ৪৫ করেন। অন্যপ্রান্তে ১৯ বলে ৩২ রানের ঝড় তুলে ম্যাচ ফিনিশ করে দেন।