বহুদিন সাক্ষাৎ নেই। কথাও হয়না। আইনি জটিলতায় আটকে পড়েছে দম্পতির সম্পর্ক। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে রবিবার নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে থাকতে পারতেন হাসিন জাহান। স্বামী মহম্মদ শামিকে সমর্থন করার জন্য।
ট্রফি জয়ের পরে ক্যাপ্টেন হার্দিক পান্ডিয়াকে আলিঙ্গনে ভরিয়ে দিয়েছিলেন স্ত্রী নাতাশা স্ট্যানকোভিচ। হাজার অপমানিত তারকার প্রত্যাবর্তন মঞ্চে আবেগঘন পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছিলেন নাতাশা। সেরকম আবেগী দৃশ্যের অবতারণা ঘটতেই পারত মহম্মদ শামি-হাসিন জাহানকে ঘিরে।
কিন্তু সেই সম্পর্ক যে এখন কাঁটাতারের খোঁচায় দীর্ণ। গুজরাট টাইটান্সের ট্রফি জয়ের অন্যতম কারিগর বঙ্গ পেসার। তবে স্বামীর খেলা আর দেখেন না হাসিন জাহান। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে অভিমানী গলায় হাসিন বলছিলেন, "ক্রিকেট খেলায় আমার কোনওদিনই উৎসাহ ছিল না। এখন তো খেলা দেখাই ছেড়ে দিয়েছি। কবে আইপিএল ফাইনাল ছিল, সেটাই জানি না।"
আরও পড়ুন: বিবাহিত মহিলাদের বিয়ে করে শিরোনামে যাঁরা! এক ক্রিকেটার আবার জড়ান পরকীয়াতেও
অভিমান, নিপাট দূরত্ব বাড়িয়ে নেওয়া পুরোনো সম্পর্ক থেকে। সেই রেশ, আক্ষেপ যেন ঝরে পড়তে থাকে হাসিনের গলায়। ইডেনে একসময় যাঁর উপস্থিতি স্টেডিয়ামের গ্ল্যামার একঝটকায় বাড়িয়ে দিত, তিনি নাকি ক্রিকেট খেলাই দেখেন না!
স্বামী যে খেলায় ডুবে থাকেন দিন রাত, সেই খেলার সঙ্গে সম্পর্ক চোকাতে তাই দু-বার ভাবেননি। বাস্তবের কর্কশ মাটিতে দাঁড়িয়ে হাসিন বলতে থাকেন, "পেট চালাতে হবে। তাই ক্রিকেট খেলা দেখার সময় কোথায়। শামি তো নিজের প্রিয় বেবো-রই (কন্যা) খোঁজ রাখে না। ওঁর মধ্যে মেয়ের জন্য যদি এতটুকু টান থাকত, তাহলে তো সম্পর্কের এই দুর্ঘটনাই ঘটত না। গত জন্মদিনে বেবো কতবার বাবাকে মেসেজ করল, ফোন করার জন্য। সেই ফোন তো আজও এল না।"
মেয়েকে বড় করার ব্রত আগলে দিন কাটছে হাসিনের (হাসিন জাহান)
আইপিএল ফাইনালের সময় কী করছিলেন? হাসিনের সটান জবাব, "অন্যদিনের মতই কাটিয়েছি। মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছি। জিমে ছিলাম যথারীতি।"
আপাতত প্রবল আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম এই ওয়্যাগের। আদালতের চলছে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা। সেই মামলার খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন একাকী এই কন্যে। এখনও খোরপোষ দেওয়ার নির্দেশ আসেনি। তাই শামি নাকি তাঁকে অর্থ পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। এমনটাই অভিযোগ করেছেন তাঁর বিচ্ছিনা স্ত্রী। বলছেন, "বেবোর জন্য অল্প টাকা পাঠায়, তাতে খরচ পুরোপুরি কুলোয় না। বাড়ির সমস্ত জিনিস বিক্রি করে সংসার চলছে। গয়নাগাটি বিক্রি করে দিয়েছি। বেবো-কে মানুষ করতে হবে তো!"
সংসারের দায়িত্ব সামলাতে মডেলিংয়ে ফিরে গিয়েছেন হাসিন (হাসিন জাহান)
একবুক অসহায়তা নিয়ে বলে চলেছিলেন নিঃসঙ্গ সুন্দরী। শামির সঙ্গে পরিচয়ের আগে ছিলেন পুরোদস্তুর মডেল। আপাতত সংসারের জোয়াল টানতে হাসিন ফিরে গিয়েছেন পুরোনো পেশায়। শহরের যাবতীয় মনখারাপ নিয়ে বলে চলেছিলেন, "গয়না বন্ধক রেখে সংসার চলছে। সেই গয়না তো ছাড়াতে হবে বলুন!"
অনিশ্চিত ভবিষ্যতে নিয়ে জীবন-সংসারে সাঁতার কেটে চলেছেন হাসিন। সমস্ত প্রতিকুলতা নিয়ে হেঁটে চলেছেন মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে। মেয়ে বেবোর নাচের ক্লাস, পড়াশুনা- সবকিছুই একার হাতে সামলাচ্ছেন তিনি।
মহম্মদ শামি কোটি কোটি টাকার চুক্তিতে আলোর সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়েছেন নিজের জীবন। সেই আলোর পিছনেই যে এত অন্ধকার, তা কি দেখতে পাচ্ছেন আইপিএল চ্যাম্পিয়ন পেসার?