লখনৌ সুপার জায়ান্টস: ২১০/০
কেকেআর: ২০৮/৮
হওয়ার কথা ছিল না। দল আগেই কোমায় চলে গিয়েছিল। অসম্ভব সমীকরণের পাহাড় ডিঙিয়ে নাইট রাইডার্স প্লে অফে পৌঁছবে, এমন আশা অতিবড় সমর্থকও করেননি। গ্রুপের শেষ ম্যাচ লখনৌয়ের বিরুদ্ধে বুধবার পাকাপাকিভাবে কেকেআরের ডেথ সার্টিফিকেট লেখা হয়ে গেল ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে।
রিঙ্কু সিং-সুনীল নারিনের অবিশ্বাস্য ৫৮ রানের সাইক্লোন পার্টনারশিপ দলকে জয়ের হ্যান্ডশেক দূরত্বে নিয়ে গেলেও শেষরক্ষা হল না। ২১১ তাড়া করতে নেমে কেকেআর টুর্নামেন্টের রুদ্ধশ্বাস পরিসমাপ্তি ঘটালো মাত্র ২ রানে হেরে। গুজরাটের পর লখনৌ চলতি আইপিএলের।দ্বিতীয় দল হিসেবে প্লে অফে পৌঁছে গেল।
ম্যাচের ১৭ তম ওভার পর্যন্তও ধরে নেওয়া হয়েছিল কেকেআর বড়সড় ব্যবধানে হারতে চলেছে। গোটা টপ অর্ডার তো বটেই স্যাম বিলিংস, আন্দ্রে রাসেলরাও ফিরে গিয়েছেন।
আরও পড়ুন: টিম ইন্ডিয়ার কোচ হচ্ছেন লক্ষ্মণ! শীঘ্রই বিশাল আপডেট ঘোষণা করতে চলেছে বোর্ড
কেকেআরের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট লেখাও শুরু হয়ে গিয়েছিল। তবে শেষ তিন ওভারেই ঝড় উঠল ডিওয়াই পাতিলে। রিঙ্কু সিং (১৫ বলে ৪০) এবং সুনীল নারিন (৭ বলে ২১) নাইটদের রূপকথার জয়ের দরজায় এগিয়ে দিয়েছিলেন। রাসেল আউট হওয়ার পরে ১৮ এবং ১৯ তম ওভারে আবেশ খান এবং জেসন হোল্ডারের ওভারে রিঙ্কু-সুনীল মিলে স্কোরবোর্ডে ৩৪ রান যোগ করে দিয়ে হঠাৎ করে ম্যাচে কেকেআরকে ফিরিয়ে এনেছিলেন।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য ইকুয়েশন দাঁড়ায় ২১ রানের। প্ৰথম চার বলে ৪,৬,৬-এর পরে শেষ তিন বলে জয়ের জন্য হিসাব দাঁড়ায় মাত্র ৫ রানের। তবে স্টোয়িনিসের ওভারে পঞ্চম বলে রিঙ্কু আউট হতে যবনিকাপাত। শেষ বলে আর বাউন্ডারি হাঁকাতে পারেননি উমেশ যাদব।
লখনৌকে বড় ব্যবধানে হারাতে হত। সেই সঙ্গে আরসিবি এবং দিল্লিকে নিজেদের শেষ ম্যাচে হারতে হত। তবে সেই সমস্ত সমীকরণের অঙ্ক হিসাবের বাইরে রেখে কেকেআরের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায় ম্যাচের প্রথমার্ধেই। কেএল রাহুল এবং কুইন্টন ডিককের ইতিহাস গড়া ওপেনিং পার্টনারশিপরের পরেই কার্যত ঠিক হয়ে যায় কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে ইংল্যান্ড ঠিক সময়েই পৌঁছে যাবেন বেন স্টোকসদের কোচিং করানোর জন্য। প্লে অফের জন্য দেরি হওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।
কুইন্টন ডিককের মত তারকাকে মুম্বইয়ের ছেড়ে দেওয়া যে কত বড় ভুল, তা চলতি আইপিএল দেখিয়ে যাচ্ছে। কেকেআরকে একাই ধ্বংস করে দিলেন প্রোটিয়াজ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। ৭০ বলে ১৪০ করলেন ২০০ স্ট্রাইক রেটে। ১০ টা করে ছক্কা এবং বাউন্ডারি বেরোল তাঁর ব্যাট থেকে। ক্যাপ্টেন রাহুল অন্যপ্রান্তে ৫১ বলে ৬৮ করলেন। কোনও উইকেটই ফেলতে পারলেন না নাইট বোলাররা। স্কোরবোর্ডে ২১০ উঠে যাওয়ার পরে আর কিছু করারও ছিল না।
কেকেআরে প্যাট কামিন্স নেই। বৈচিত্র্য আমদানির জন্য বারবার একাধিক তারকাকে খেলানো হলেও বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার মহম্মদ নবিকে ডাগ আউটে বসেই কাটাতে হল। কেন, উত্তর নেই। সুনীল নারিন বলের ধার অনেকটাই হারিয়েছেন। চলতি সিজনে মোটামুটি রান আটকে রাখার কাজ করলেও উইকেট তুলতে পারছেন না। বরুণ চক্রবর্তীর কথা যত কম বলা যায়, ততই ভালো। এমন অবস্থায় নবিকে একটা ম্যাচেও খেলাবে না কেকেআর?
টিম সাউদি এবং আন্দ্রে রাসেল- দুই বোলারের ওপরেই এদিন চড়াও হলেন ডিকক। রাসেল ৩ ওভারে ৪৫ বিলিয়ে গেলেন। সাউদি ৪ ওভারের কোটায় খরচ করলেন ৫৭ রান।
আরও পড়ুন: ক্রিকেটার না হলে উকিল হতেন! এমন তারকাকেই লখনৌ ম্যাচে নামিয়ে চমক KKR-এর
এরপরেও রান তাড়া করতে।নেমে কেকেআর যে ভালমত লড়াই চালাল, তার প্ল্যাটফর্ম দিয়ে গিয়েছিলেন নীতিশ রানা (২২ বলে ৪২) এবং শ্রেয়স আইয়ার (২৯ বলে ৫০)। দুই ওপেনার অভিজিৎ তোমার এবং ভেঙ্কটেশ আইয়ার মহসিন খানের শিকার হয়ে ফেরার পরে কেকেআর প্ৰথম তিন ওভারের মধ্যেই ৯/২ হয়ে যায়। সেখান থেকে নাইটদের বাঁচার অক্সিজেন দেয় রানা-আইয়ারের ৫৬ রানের পার্টনারশিপ। স্যাম বিলিংসও ২৪ বলে ৩৬ করে যান।
মাঝে ১৯ রানের মধ্যে পরপর তিন উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল কেকেআর। তারপরেই রিঙ্কু-নারিনের বিক্রম। যাতে ম্যাচ প্রায় বেরিয়ে গিয়েছিল। যদিও জিতলেও হয়ত শেষরক্ষা হত না।