লখনৌ সুপার জায়ান্টস: ১৭৬/৮
কেকেআর: ১৭৪/৭
শাহরুখের সেই বিখ্যাত সংলাপ, 'হার কর জিতনে ওয়ালো কো বাজিগর কেহতে হ্যায়'। চলতি সিজনে রিঙ্কু যেন শাহরুখের কেকেআরের সেই বাজিগর। স্বপ্নের ফর্মে ঘোর-জাগানিয়া ইনিংস খেলে চলেছেন একের পর এক ম্যাচে। কখনও অবিশ্বাস্যভাবে নাইটরা খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থেকে জিতে যাচ্ছে। কখনও মন্ত্রমুগ্ধ ইনিংসেও হার আটকানো যাচ্ছে না।
ইডেনে কেকেআরের শেষবেলায় রোম্যান্স দেখিয়ে গেলেন রিঙ্কু সিং। যাকে হরভজন সিং সরাসরি বলে দিচ্ছেন নাইটদের বর্তমানে আন্দ্রে রাসেলের জায়গা নিয়ে নিয়েছেন রিঙ্কু সিং। সেই রিঙ্কু আবার-ও ৩৩ বলে ৬৭ রানের বাজিগর ইনিংস খেলে গেলেন।
প্লে অফের আশা আগেই ফুরিয়ে গিয়েছিল। ম্যাচেও কেকেআর মাঝের ওভারে হড়কে গিয়ে বিশ্ৰী হারের চিত্রনাট্য রচনা করে দিয়েছিল। তবে রিঙ্কু তখনও ছিলেন।
হেরে যাওয়া ম্যাচই একার হাতে নাইটদের জিতিয়ে দিয়েছিলেন প্রায়। শেষ তিন ওভারে কেকেআরের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৫২ রান। ক্রিজে রিঙ্কুর সঙ্গে কেকেআর ইনিংসের স্রেফ ল্যাজ বেঁচে ছিল। ইয়াশ ঠাকুরের ১৮তম ওভারে এক ছক্কা সমেত ১০ রান তুলে রুদ্ধশ্বাস রান চেজের ট্রেলার দেখিয়ে দিয়েছিলেন রিঙ্কু। ১৯ তম ওভারে নভিন উল হক বাউন্ডারির হ্যাটট্রিক হজম করেন। ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়াই দিয়ে ওভার বাউন্ডারি সমেত রিঙ্কু ১৯ তুলে দেন। শেষ ওভারে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২১ রান।
২০ তম ওভারে প্ৰথম ৩ বলে মাত্র ৩ রান খরচ করেন ইয়াশ ঠাকুর। শেষ তিন বলে টার্গেট দাঁড়ায় ১৮। তিন ছক্কা। রিঙ্কুর ব্যাট থেকে চতুর্থ, পঞ্চম এবং ষষ্ঠ বল থেকে এল ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা, লং অফ দিয়ে বাউন্ডারি এবং লং অনের ওপর দিয়ে ওভার বাউন্ডারি। রিঙ্কুর অবিশ্বাস্য ইনিংসে খামতি থেকে গেল মাত্র ২ রান!
আরও পড়ুন: ঝড় আর উঠবে না, KKR-এর x ফ্যাক্টর আর নন রাসেল! বিরাট মন্তব্যে বিষ্ফোরক হরভজন
খাতায় কলমে প্লে অফে পৌঁছনোর সুযোগ ছিল। কেকেআর জিন্দা ছিল। তবে প্লে অফের সম্ভবনা কোমায় চলে গিয়েছিল। ইডেনে শনিবার শেষ ম্যাচের পরেও প্লে অফের সম্ভবনা কেবল জয়-পরাজয়ের ওপরেই নির্ভর ছিল না। কোমা থেকে সিসিইউ-তেও পৌঁছতে হলে ৯০-১০০ রানের ব্যবধানে জিততে হত নাইটদের।
তবে গম্ভীরের লখনৌকে বাগে পেয়েও হারাতে পারল না কেকেআর। ইডেনে কেকেআর বিসর্জনের ঢাক বাজিয়েই ড্যাং ড্যাং করে সঞ্জীব গোয়েঙ্কা-গৌতম গম্ভীর দের লখনৌ শেষ চারে পৌঁছে গেল। সিএসকের সঙ্গে। সিএসকে দিল্লিকে ৭৭ রানে হারানোর পরেই জানা যায় স্রেফ প্লে অফ নয়, কোয়ালিফায়ার-ও নিশ্চিত করে ফেলেছেন ধোনিরা।
লখনৌ ১৫ পয়েন্টের নিরাপড কুশনে চেপে ইডেনে নেমেছিল। জিতলে প্লে অফ, হারলেও ছিটকে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। এমন অবস্থায় লখনৌ অলরাউন্ড পারফর্ম করে ছিটকে দিল কেকেআরকে।
কেকেআর ১৭৭ রানের টার্গেট চেজ করতে নেমে স্রেফ ধসে গেল লখনৌ স্পিনারদের ঘূর্ণিতে। মিডল ওভারে রান তোলার গতি বাড়ানোর জন্য টপ অর্ডারে বদল এনেছিল কেকেআর। গুরবাজের জায়গায় ভেঙ্কটেশ আইয়ারকে জেসন রয়ের ওপেনিং পার্টনার হিসাবে নামিয়ে দিয়েছিল কেকেআর থিঙ্কট্যাঙ্ক। পাওয়ার প্লে-তে টগবগিয়ে ছুটছিল আইয়ার-রয়ের পার্টনারশিপ। ওভার পিছু প্রায় ১০ করে তুলেছিল নাইটরা।
তবে নাইটদের এই চলন্ত গাড়ি হ্যাঁচকা মেরে থামিয়ে দেন রবি বিশ্নোই। মুম্বই ম্যাচে শেষ ওভারে মহসিন খানের যতই ব্লকবাস্টার পারফরম্যান্স থাকুক, মাঝের ওভারে বিশ্নোইয়ের মোড় ঘোরানো স্পেল না থাকলে মুম্বই ম্যাচ কখনই জেতে না।
শনিবার ইডেনে নাইটদের একইভাবে ঝলসে দিলেন রবি বিশ্নোই। প্রথমে নীতিশ রানাকে গুগলিতে বোকা বানিয়ে ফেরালেন। তারপর ম্যাচের মোক্ষম সময়ে রাসেলের উইকেট ভেঙে দিয়ে ম্যাচ একদম লখনৌয়ের দিকে ঠেলে দেন। ২৮ বলে ৪৫ করে নাইটদের আশা জাগিয়ে রাখা জেসন রয়কে আউট করলেন ক্যাপ্টেন পান্ডিয়া।
বিনা উইকেটে ৬০ থেকে একসময় কেকেআর ১৩৬/৭ হয়ে গিয়েছিল। তারপর পুরোটাই রিঙ্কুর রোমাঞ্চ এবং কোনও রকমে পা হড়কাতে হড়কাতে লখনৌয়ের শেষ চারের গন্ডি নিশ্চিত করা।
টসে জিতে কেকেআর প্রথমে ব্যাটিং নিয়েছিল। ঘরের মাঠে রান চেজ করার লক্ষ্য নিয়ে নামে নাইটরা। পাওয়ার প্লে-র শেষ দুই ওভার বাদ দিয়ে কেকেআর প্ৰথম থেকেই ম্যাচে দাপট দেখিয়ে শুরু করে। হর্ষিত রানা তৃতীয় ওভারেই করণ শর্মাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। প্রেরক মানকাড এবং কুইন্টন ডিকক প্রাথমিক ধাক্কা সামলে লখনৌকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
তবে পাওয়ার প্লে খতম হতেই ঝড়ের গতিতে উইকেট পড়তে থাকে লখনৌয়ের। মাত্র ১৮ রান তোলার ফাঁকে লখনৌ ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে। সপ্তম ওভারে বৈভব অরোরা ফিরিয়ে দেন ক্রিজে টিকে যাওয়া প্রেরক মানকাড (২০ বলে ২৬) এবং মার্কাস স্টোইনিসকে। এরপরে নারিন, বরুণ চক্রবর্তী পরপর ফিরিয়ে দেন ক্রুনাল পান্ডিয়া, ডিকককে (২৭ বলে ২৮)। ৭৩/৫ হয়ে গিয়ে লখনৌ একদম ঘেঁটে গিয়েছিল একটা পর্যায়ে। কেকেআর তখন অল্প রানে লখনৌকে থামিয়ে দেওয়ার স্বপ্নে বিভোর। নাইটদের সেই আধিপত্যই চুরমার হয়ে গেল নিকোলাস পুরান এবং আয়ুশ বাদোনির ৭৪ রানের পার্টনারশিপ। নিকোলাস পুরান ৩০ বলে ৫৮ রানের দুর্ধর্ষ হাফসেঞ্চুরি করে দলকে চ্যালেঞ্জিং স্কোরে পৌঁছে দিতে বড়সড় ভূমিকা নিলেন। আয়ুশ বাদোনি সেকেন্ড ফিডলের ভূমিকা নিয়ে ২১ বলে ২৫ রান করে যান।
ডেথ ওভারে পুরান-বাদোনি আউট হয়ে গেলেও কৃষ্ণাপ্পা গৌতমের ৪ বলে ১১ রানের ক্যামিও লখনৌকে ১৭৬/৮-এ পৌঁছে দেয়। কেকেআর ডেথ ওভারেই সামলাতে পারেনি লখনৌকে। শেষ ৩ ওভারে নাইট বোলাররা ৪৩ রান খরচ করে বসেন।