একদশকের বেশি সময় ধরে কেকেআর একাদশে জায়গা পাকা ছিল সুনীল নারিনের। তবে সোমবার পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে ক্যারিবীয় স্পিনারকে প্ৰথম একাদশে রেখে নাইটরা দল সাজাবে, এমনটা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। ত্রিনিদাদের রহস্য স্পিনার কেকেআরের জার্সিতে ১২ সিজন খেলেছেন। ১৫৯ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ১০৩৯ রান-ও করেছেন চারটে হাফসেঞ্চুরি সমেত।
চলতি সিজনেই প্রকট যে নারিন নিজের রহস্য অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছেন। ব্যাটসম্যান তাঁকে পড়ে ফেলছেন অবলীলায়। ২০১২ এবং ২০১৪-য় কেকেআরের চ্যাম্পিয়ন করার অন্যতম নেপথ্য নায়ক ছিলেন নারিন। দুই সিজনে তাঁর নামের পাশে ছিল যথাক্রমে ২৪ এবং ২১ উইকেট। তবে এটা স্বীকার করতেই হবে গত দুই-তিন সিজন ধরেই তিনি পারফরম্যান্স নয় স্রেফ নামের জোরে খেলে গিয়েছেন। কেকেআরের ভেঙ্কি মাইশোর এবং সহকারী কোচ অভিষেক নায়ারের আস্থা সবসময়ই তিনি পেয়ে এসেছেন।
তবে এবার কেকেআর আরও একবার প্লে অফের আগেই ছিটকে যাওয়ার মুখে। ১০ ম্যাচে মাত্র ৪ জয় নিয়ে কেকেআর এখন নিচের দিকে। শেষ চার ম্যাচের চারটিতেই জিততে হবে। প্রশ্ন হল, কেকেআর কি এখনও এমন মরণ-বাঁচন মুহূর্তে নারিনকে নিয়ে খেলতে নামবে? চলতি সিজনে ১০ ম্যাচে নারিনের নামের পাশে মাত্র ৭ উইকেট। ইকোনমি রেট ৮.৭৬ এবং স্ট্রাইক রেট ৮০-র সামান্য নিচে। কেকেআর কী সোমবার কড়া সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, সোমবারের ইডেন সেই জবাব-ই দেবে।
আগের ম্যাচে মুম্বইয়ের কাছে হেরে বসা পাঞ্জাব কিংস এমনিতে কেকেআরের থেকে দুই পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছে পয়েন্ট তালিকায়। তবে দুই দলই আইপিএলের লাস্ট ল্যাপে বেশ অস্বস্তিতে। কেকেআরের কাছে শেষ চার ম্যাচ-ই কার্যত ডু অর ডাই। একই পরিস্থিতির সামনে পাঞ্জাব-ও। ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রচুর অভিজ্ঞ ট্যাকটিশিয়ান চন্দ্রকান্ত পন্ডিতের কাছে চ্যালেঞ্জ আপাতত নারিন-রাসেলের কাছ থেকে সেরাটা বের করে নেওয়া। না হলে দুই ক্যারিবীয় তারকার বাইরে দলকে ভাবা।
ঘটনা হল, এখনও নাইটরা দুই ক্যারিবীয় তারকাকে দলের অপরিহার্য অংশ বলে মনে করছে। কয়েকদিন আগেই সাংবাদিকদের সামনে মুখোমুখি হয়ে কেকেআর সিইও ভেঙ্কি মাইশোর বলে গিয়েছিলেন, "রাসেল এখনও টি২০-র সেরা অলরাউন্ডার। নারিনকে নিয়ে তো বলার কিছু নেই।"
নারিন নিয়মিত খেলায় একজন বিদেশির কোটা কার্যত নষ্ট করছে। অভিযোগ উঠছে ক্রিকেট মহলে। স্পিডস্টার লকি ফার্গুসন এবং ডেভিড ওয়াইজের মত একজন প্রকৃত সিম বোলিং অলরাউন্ডারকে বাইরে দিনের পর দিন কাটাতে হচ্ছে। যিনি ব্যাট হাতেও শেষদিকে মূল্যবান রান যোগ করতে পারেন।
চলতি সিজনে কেকেআরের স্পিন পুরোটাই বরুণ চক্রবর্তী নির্ভর। ২০.১৪ গড়ে বরুণ চলতি মরশুমে দখল করেছেন ১৪ উইকেট। ৯০-৯৫ কিমিতে দ্রুতগতিতে স্পিন বোলিং বরুণের ট্রেডমার্ক স্টাইল। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে শেষ ওভারে মাত্র নয় রান ডিফেন্ড করে দলকে জিতিয়েছেন তিনি। এতে কেকেআর ম্যানেজমেন্টকে ভাবতে হবে, রাসেল, নারিনের বাইরে ভাবার সময় এসেছে।
রাসেলকে খেলাতে হলে ব্যাটিং অর্ডারে ক্যারিবীয় তারকাকে প্রমোট করতে হবে। যাতে তিনি আরও বেশি ওভার ক্রিজে কাটাতে থাকেন। জামাইকান বিগ হিটার মাত্র ১৬৬ রান করেছেন ১৪৮ স্ট্রাইক রেট সমেত। যদিও বল হাতে নিয়মিত নজর কাড়ছেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নিয়ম করে ব্রেক থ্রু দিচ্ছেন। ইতিমধ্যেই রাসেল ৭ উইকেট নিয়ে ফেলেছেন। বোলিং গড় ২০.১৪।
কেকেআরকে শেষ চারটে ম্যাচের তিনটিই খেলতে হবে ঘরের মাঠ ইডেনে। বাইরের ম্যাচ একটাই। চিপকে ধোনির সিএসকের বিপক্ষে। প্লে অফের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে ঘরের মাঠের পুরো ফায়দা তুলতে হবে কেকেআরকে। হায়দরাবাদ ম্যাচে নাইটরা দারুণ বোলিং করেছিলেন। পাঞ্জাব ম্যাচেও কেকেআর ব্যাটসম্যানদের দায়িত্ব নিতে হবে এমন এক দলের বোলারদের বিপক্ষে যে দলের বোলারদের মুম্বই ম্যাচে ঝড়ের সামনে পড়ে আত্মবিশ্বাস অনেকটাই টলোমলো। কেকেআর ব্যাটারদের বিপক্ষে আর্শদীপ সিং, স্যাম কুরান, নাথান এলিসরা কতটা জ্বলে উঠতে পারবেন, সেদিকেও নজর থাকবে।
কেকেআর সম্ভাব্য প্ৰথম একাদশ: জেসন রয়, রহমনুল্লাহ গুরবাজ, ভেঙ্কটেশ আইয়ার, নীতিশ রানা, আন্দ্রে রাসেল, রিঙ্কু সিং, সুনীল নারিন/লকি ফার্গুসন, শার্দূল ঠাকুর, বৈভব অরোরা, হর্ষিত রানা, বরুণ চক্রবর্তী
ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার: সুয়াশ শর্মা
Read the full article in ENGLISH