Delhi Capitals vs Chennai Super Kings IPL 13th Match:
দ্য মাহি ওয়ে…
ভাইজ্যাগে ২০ রানে হার হজম করেছে সিএসকে। তবে ম্যাচ পরবর্তী দৃশ্য অনেক মুহূর্তের জন্ম দিয়ে গিয়েছে। ক্যামেরা যখন গোটা স্টেডিয়ামকে ধরল, তখন আনন্দে ভেসে যেতে দেখা গিয়েছে সিএসকে সমর্থকদের। আসলে চল্লিশোর্ধ্ব সেই ব্যক্তিই ঘড়ির কাঁটা যেন ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। অবশেষে থালা-দর্শন হল।
ধোনির ছক্কার বন্যায় একটা শট বাকিদের থেকে আলাদা তাৎপর্য নিয়ে এল। নকিয়ার ডেলিভারি ফুলটস ছিল। তবে যে গতিতে প্রোটিয়াজ তারকা বল করেন, তাতে পুল করা মোটেই সহজ ছিল না। তবে ধোনি নিজের বল্লা ঘোরালেন। ব্যাটের গতিতে এক হাত সরে গেল। বল সোজা বিদ্যুৎগতিতে বাউন্ডারির বাইরে আছড়ে পড়ল।
২০০৫-এর সেই এপ্রিলেই লম্বা চুলের ধোনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঝড় তোলা ১৪৮ করে গিয়েছিলেন। প্রায় ১৯ বছর পর একইভাবে ধোনি দর্শকদের মনোরঞ্জন করে গেলেন। সেই লম্বা চুল, সেই শহর, সেই পাওয়ার হিটিং, সেই দ্যুতি- সময়ই কেবল এগিয়ে গিয়েছে। ধোনি রয়ে গিয়েছেন আগের মতই। এটাই মাহি ওয়ে…
ফিরলেন পৃথ্বী, দলের জয়ে অবদান-ও রইল:
নিলামের আগে পৃথ্বী শ-কে দিল্লি রিটেন করেছিল। এতে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। এমনকি লিগের প্ৰথম দুই ম্যাচে শুরুর একাদশেও রাখা হয়নি। কয়েকজনের চোট-আঘাতে সিএসকের বিরুদ্ধে জায়গা পেয়েও গিয়েছিলেন। তুষার দেশপান্ডের ওয়াইড বলে যেভাবে বল্লা ঘোরালেন, বুঝিয়ে দিলেন একসময় কেন তাঁকে দেশের সবথেকে প্রতিশ্রুতিমান তারকার মর্যাদা দেওয়া হত।
মোস্তাফিজুর রহমানের ওভার থেকেই পৃথ্বী স্বমূর্তি ধরেন। লেগ স্ট্যাম্পের ইয়র্কার ফ্লিক করে শর্ট ফাইন লেগের বাউন্ডারি পার করে দেওয়া হোক বা একই নিশানায় লেন্থ বলকে সীমানার বাইরে পাঠানো। তবে বাউন্ডারির হ্যাটট্রিকের তৃতীয় ছিল সবথেকে দৃষ্টিনন্দন বিষয়- কভার দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকালেন ব্যাক ফুট পাঞ্চে। রবীন্দ্র জাদেজাকে লং অন দিয়েও সুইপ করে বাউন্ডারি হাঁকালেন। অতীতে বারবার বিতর্কে জড়িয়েছেন। অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছেন। এবার শুরুটা হল সাড়া জাগানো। পৃথ্বী কি এরকম ধারাবাহিক হতে পারবেন?
দুর্ধর্ষ সেই ঝাঁপ:
মুস্তাফিজুর রহমানের বলে ঠিকঠাক রিভার্স সুইপ হাঁকাতে গিয়ে ব্যাটে-বলের কানেকশন হয়নি। তবে মনে হয়েছিল শর্ট ফাইন লেগের ফিল্ডারকে ফাঁকি দিতে সমর্থ হবে সেই শট। দাঁড়িয়ে থাকা পাথিরানা একটু দেরিতেই রিয়াক্ট করেন। মনে হয়েছিল লঙ্কান তারকার মাথার ওপর দিয়েই বল পেরিয়ে যাবে।
তবে সেরকম মোটেও হয়নি। হাওয়ায় থাকার সময়েই ক্যাচ তালুবন্দি করেন। তারপর মাটিতে ল্যান্ডও করেন মসৃণ গতিতে। এত সাবলীল ল্যান্ডিং চোখ কপালে তুলে দিয়েছে ক্রিকেট মহলের। ওয়ার্নারের যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না, এই ক্যাচ ঠিকমত পাকড়েছেন প্রতিপক্ষ ফিল্ডার। নিজের ক্রিকেট কেরিয়ারে বহুবার অবিশ্বাস্য ফিল্ডিংয়ের মুখে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসতে হয়েছে অজিকে। তবে এবারের বিষয়টি আলাদা। যেভাবে আপাত-প্রচেষ্টা ছাড়াই ক্যাচ ধরলেন পাথিরানা, সেটাই তাঁকে বিস্ময়ে হতবাক করে দিয়েছে। এই ক্যাচের পর ধোনির হাসি যেন দুরন্ত ক্যাচের প্রশংসার ইঙ্গিতসূচক। সেই সময় সিএসকের একটা ব্রেক থ্রুর প্রয়োজন ছিল। বল হাতে ঝলক দেখানোর আগে পাথিরানার এই ক্যাচ যেন দলকেও চাগিয়ে দেয়।
হলুদ রাজ্যে পন্থের জন্য ভালবাসা:
খাতায় কলমে হোম ম্যাচ ছিল দিল্লির। তবে টসের সময়েই রুতুরাজ গায়কোয়াডকে হলুদ স্রোত ঘিরে ধরল। যে আবেগে বিহ্বল হয়ে রুতুরাজ বলে দিলেন, "এটা আমাদেরই হোম ম্যাচ।" দিল্লি নিজেদের প্ৰথম কয়েকটা হোম ম্যাচ খেলেছে ভাইজ্যাগে। তবে দিল্লি তুলনায় ভাইজ্যাগ চেন্নাইয়ের অনেকটাই কাছে। গ্যালারিতে যেন সেটারই ইঙ্গিত পাওয়া গেল।
চেন্নাইয়ের দর্শকে ঠাসা গ্যালারিতে অবশ্য পন্থের জন্যও ভালবাসা কম বরাদ্দ ছিল না। হলুদ জার্সি পরিহিত গ্যালারিতেই যেমন এক দর্শক পন্থের ছবি সমেত লিখে দিলেন, "তুমি কখনই একা নও।" পন্থও সেই ভালবাসার প্রতিদান দিলেন কামব্যাকের পর প্ৰথম অর্ধশতরান হাঁকিয়ে।