কেকেআর: ২০৮/৭
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ: ২০৪/৭
Kolkata Knight Riders vs Sunrisers Hyderabad IPL Third Match Highlights: আইপিএলের মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ। তাতেই ব্লকবাস্টার থ্রিলার। রাসেলের টর্নেডো, শাহরুখের হাততালি, ভরা ইডেন- সমস্ত কিছুই একসঙ্গে পণ্ড হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। হেনরিখ ক্ল্যাসেনের ক্ল্যাসিকে। সাত ছক্কার পাল্টা সাতটা ছয়। বিগ হিটের পাল্টা অবিশ্বাস্য পাওয়ার হিটিং। এতেই কেকেআরকে নিজেদের ঘরের মাঠে হারিয়ে দেওয়ার উপক্রম করেছিল হায়দরাবাদ।
খলনায়কের তকমা বসেই গিয়েছিল ২৪.৭৫ কোটির মিচেল স্টার্ক। ২০৯ রান চেজ করতে নেমে শেষ দুই ওভারে জয়ের জন্য ৩৯ রান দরকার ছিল হায়দরাবাদের। মিচেল স্টার্ককে ডেথ ওভারে রেখেছিলেন অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার। তবে সেই ওভারেই হেনরিখ ক্ল্যাসেনের তিনটে, শাহবাজ আহমেদের একটা ছক্কায় ২৬ রান বিলিয়ে দিয়েছিলেন স্টার্ক। ধরা ছোঁয়ার মধ্যে চলে আসা টার্গেট আরও সহজ হয়ে যায় হর্ষিত রানার শেষ ওভারের প্রথম বলেই ক্ল্যাসেন ছক্কা হাঁকিয়ে দেওয়ায়।
শেষ পাঁচ বলে দরকার সাত রান।।সেই অবস্থায় হায়দরাবাদ স্রেফ চাপের কাছে চোক করে গেল। প্রথমে হর্ষিত রানার লেন্থ বল হাঁকাতে গিয়ে শাহবাজ আহমেদ লং অনে শ্রেয়সের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নেওয়ার পরেই এলোমেলো হয়ে যায় রান চেজ। শেষ তিন বলে ছয় রান দরকার এমন পরিস্থিতিতে মার্কো জ্যানসেন চতুর্থ বলে নেন সিঙ্গল। পঞ্চম বলে হর্ষিত রানার স্লোয়ারে ঠকে গিয়ে আউট হন ক্ল্যাসেন। সুয়াশ শর্মা পিছনে দৌড়ে অসাধারণ ক্যাচ নেন। শেষ বলে ক্রিজে নামা কামিন্স ব্যাটে-বলেই করতে পারলেন না!
KKR vs SRH IPL Third Match Report 2024
তার আগে হায়দরাবাদের হয়ে শুরুটা দারুণ করে দিয়েছিলেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল (২১ বলে ৩২) এবং অভিষেক শর্মা (১৯ বলে ৩২)। দুজনে পাওয়ার প্লেতে ১০-এর ওপর গড় রেখে এগিয়ে দেন দলকে। তবে পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার মধ্যেই হায়দরাবাদ দুই ওপেনারকে হারিয়ে ফেলে। হর্ষিত রানা এই জুটিতে ভাঙন ধরানোর পর আন্দ্রে রাসেল আক্রমণে এসেই তুলে নেন অভিষেক শর্মাকে।
মাঝের ওভারে আইডেন মার্করাম এবং রাহুল ত্রিপাঠি অনেকটাই আটকে গিয়েছিলেন নারিন-বরুণ চক্রবর্তীর স্পিনের সামনে। উইকেট টু উইকেট টানা বল করে হায়দরাবাদ মিডল অর্ডারের ওপর টানা চাপ বজায় রেখে যান কেকেআরের দুই স্পিনার। রান তোলার গতি বাড়াতে গিয়েই আউট হয়ে যান দুজনে।
এরপরে হেনরিখ ক্ল্যাসেসের শোয়ে সব ওলট পালট হয়ে যায় একসময়। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থায় হেনরিখ ক্ল্যাসেন ৮ ছক্কায় ২৯ বলে ৬৩ করে একসময় কেকেআরের কাছ থেকে ম্যাচ প্রায় ছিনিয়েই নিয়েছিলেন। তবে হর্ষিত রানার শেষ ওভারের রোমাঞ্চে খুশি নিয়েই মাঠ ছাড়ে কেকেআর।
তার আগে কেকেআর ব্যাটিংয়ের পুরোটাই রাসেল-শো। ভরা ইডেনের বাড়তি পাওয়া হিসাবে হাজির ছিলেন শাহরুখ খান। ইডেনের দর্শকদের পয়সা উসুল মুহূর্ত উপহার দিলেন আন্দ্রে, দ্য জায়ান্ট। ছক্কায় ছক্কায় ঝড় তুলে মাত্র ২০ বলে ফিফটি করলেন।
ভিভিআইপি বক্সে থাকা শাহরুখকেও দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে বাধ্য করলেন ক্যারিবিয়ান সুপারস্টার। রাসেল নিজের ইনিংসে ২৫ বলে ৬৪ করেন। সাত-সাতটা পেল্লায় পেল্লায় ছক্কা হাঁকান। রাসেলের ব্যাটে ভর করেই কেকেআর চলতি সিজনের প্রথম দল হিসেবে ২০০ প্লাস রান খাড়া করেছিল।
রাসেলের পাওয়ার হিটিংয়ের আগে কেকেআরের অবস্থা কিন্তু মোটেই মখমলের ছিল না। ৮ ওভার খতম হতে না হতেই নাইটরা টপ অর্ডারের ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল। টি নটরাজনের সামনে ধসে গিয়েছিল কেকেআর। চতুর্থ ওভারে ভেঙ্কটেশ আইয়ার, শ্রেয়স আইয়ারকে পরপর ফিরিয়ে দেন তিনি। দ্বিতীয় ওভারেই রান আউট হয়ে গিয়েছিলেন সুনীল নারিন।
স্কোরবোর্ডে তখন রান মাত্র ৫১। এরপরে রাসেলের পাওয়ার হিটিংয়ের মঞ্চ গড়ে দেন রিঙ্কু সিং (১৭ বলে ৩৫) এবং রামনদীপ সিং (১৫ বলে ২৩)। ওপেন করতে নেমে হাফসেঞ্চুরি করে যাওয়া ফিল সল্ট-এর (৪১ বলে ৫৪) সঙ্গে জুটি বেঁধে রিঙ্কু ৫৪ রান যোগ করে দলের প্রাথমিক বিপর্যয় রোধ করেন।
এর পরে রাসেল-রিঙ্কু পার্টনারশিপেই উঠে যায় ৮১ রান। শেষ পাঁচ ওভারে রাসেলের তান্ডবে কেকেআরের খাতায় যোগ হয় ৭৫ রান। ১৪তম ওভার শেষে রাসেল ক্রিজে নেমেছিলেন। প্রথমে রাসেল-মাসলের ঝড়ের সামনে পড়ে যান মায়াঙ্ক মার্কণ্ডে। সেই ওভারে তিনটে ছক্কা হাঁকান। আইডেন মার্করাম বাউন্ডারি লাইনের ধারে নাইট তারকার ক্যাচ মিস না করলে হয়ত নন্দনকাননে ঝড় ওঠার আগেই স্তব্ধ হয়ে যেত সবকিছু। রাসেলের বল্লায় রক্ষা পাননি অভিজ্ঞ ভুবনেশ্বর কুমার-ও। ১৯তম ওভারে ভুবি ২৬ রান খরচ করেন। এর মধ্যে রাসেলের ব্যাট থেকেই আসে ২৫ রান!
হায়দরাবাদ বোলারদের মধ্যে সফলতম নটরাজন। ৪ ওভারে মাত্র ৩২ রান খরচ করে ৩ উইকেট তুলে নেন তিনি।