Indian cricket's new challenge: ঈশান কিষান-শ্রেয়স আইয়ার ইস্যুতে কড়া অবস্থান নিয়েছে বিসিসিআই। ঘরোয়া ক্রিকেট না খেলার 'অপরাধে' কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ দিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি বোর্ড, নিজস্ব নিয়মেরও সংশোধন করেছে বিসিসিআই। জাতীয় দলের তারকাদের আন্তর্জাতিক সূচি না থাকলে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলাকে বাধ্যতামূলক করেছে জয় শাহের বিসিসিআই। গত মাসে সরকারি বিবৃতি দিয়ে বোর্ড সমস্ত ক্রিকেটারকে সতর্ক বার্তা দিয়ে রেখেছে, কোনওভাবেই ঘরোয়া ক্রিকেটকে (রঞ্জি) পিছনের সারিতে ফেলে আইপিএলকে অগ্রাধিকার দেওয়া যাবে না।
আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরেই আইপিএলের অনুষ্ঠানিক বোধন শুরু হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর নিজস্ব বিশ্লেষণে উঠে আসছে ভয়ঙ্কর তথ্য। জানা গিয়েছে, আইপিএলে সমস্ত ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ভারতীয় ক্রিকেটারের সংখ্যা ১৬৫ জন। এর মধ্যে ৫৬ জন রঞ্জিতে কোনও ম্যাচ না খেলেই আইপিএলে নামবেন।
Ranji trophy 2024
জানা যাচ্ছে, চার দিনের রঞ্জিতে খেললে চোট-আঘাতের সম্ভবনা বাড়ার সুযোগ থাকে। সেক্ষেত্রে চার ঘন্টার আইপিএল ম্যাচের চুক্তিতে তা প্রভাব ফেলতে পারে। এই কারণেই আইপিএলে ইনজুরি-ফ্রি থাকতে ক্রিকেটাররা রঞ্জি থেকে মুখ সরিয়ে নিচ্ছেন। তবে এর জন্য কি ক্রিকেটাররা একমাত্র দোষের ভাগিদার?
এক রাজ্য ক্রিকেটের আধিকারিক বলেছেন, "বিসিসিআই-ই ক্রিকেটারদের পরোক্ষে মদত দিয়ে চলেছে।" সেই কর্তার ব্যাখ্যা, "বোর্ডের ফিটনেস নীতি নিয়ে স্পষ্ট কোনও নির্দেশিকা নেই। তাই আইপিএল-এ চুক্তিবদ্ধ তারকাদের ওপর চাইলেও ব্যবস্থা নেওয়ার সংস্থান নেই রাজ্য ক্রিকেট সংস্থাগুলির।"
আরও পড়ুন- KKR-এর ওপর চটে লাল রাসেল! ভিডিও দেখানো নিয়ে তুঙ্গে তরজা, IPL শুরুর আগেই অশান্তি
একের পর এক দৃষ্টান্তেই গোটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে যাবে। জলজ্যান্ত প্রমাণ রয়েছে হাতের সামনেই। কীভাবে….
সদ্য আইপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজি বদলে নেতা হয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া। তাঁর ভাই ক্রুনাল পান্ডিয়া খেলেন লখনৌ সুপার জায়ান্টস দলের হয়ে। দুজনে সদ্য সমাপ্ত রঞ্জিতে বরোদা রাজ্য দলের হয়ে একটি ম্যাচেও অংশ নেননি। হার্দিক রঞ্জিতে শেষবার খেলেছিলেন শেষবার সেই ২০১৮-য়।
বরোদা ক্রিকেট সংস্থার সচিব জয়ন্ত লেলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, "পান্ডিয়া ভাই দুজনেই আমাদের কোনও কারণ ব্যাখ্যা করেননি। নিজেরা খেলতে চাইলে সংস্থার চেয়ারম্যান অথবা কোচের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন। তবে বহুদিন দুজনে রঞ্জি খেলেননি। ক্রুনাল সীমিত ওভারের ফরম্যাটে বরোদার হয়ে খেলেছেন, তবে হার্দিক ইনজুরি থেকে আপাতত রিকভারিতে ব্যস্ত।"
উমরান মালিক ১৫০ কিমি গতিতে নিয়মিত বোলিং করে আলোচনায় উঠে এসেছিলেন। তারপর জম্মু কাশ্মীরের আরও দুই পেসার রাসিক সালাম দার এবং যুধবীর সিং চরক আইপিএলে কন্ট্র্যাক্ট পেয়েছেন। তবে দুজনেই রঞ্জিতে অনুপস্থিত থেকেছেন।
জম্মু কাশ্মীর ক্রিকেট সংস্থার আধিকারিক ব্রিগেডিয়ার অনিল গুপ্তা বলেছেন, "রাসিক আমাদের ক্যাম্পে টেন্ডনে চোট পেয়েছিল। আর যুধবীর লখনৌ শিবির থেকে মেডিক্যাল শংসাপত্র হাজির করে যেখানে বলা হয়েছে, ওঁর কাঁধে ইনজুরি রয়েছে। তবে দুজনকে আমাদের ফিজিও আলাদা করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেনি। উমরান রঞ্জিতে খেলতে চায়না।"
রাহুল দ্রাবিড় বারবার নির্দেশ দিয়েছেন, জাতীয় দলের বিবেচনায় আসার জন্য ঈশানকে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে ফিরতে হবে। তবে ঝাড়খন্ড ক্রিকেট সংস্থার সচিব সঞ্জয় সহায় বলেছেন, "ও কখনই রঞ্জিতে খেলার জন্য নিজের সম্ভাব্যতা জানায়নি আমাদের। বোর্ডের কোচ, নির্বাচকদের তরফে আমাদের স্পষ্ট গাইডলাইনক মেলেনি।"
বিদর্ভ-এর হয়ে একসময় নিয়মিত রঞ্জিতে খেলতেন জিতেশ শর্মা। এরপরে ২০২২-এ আইপিএল চুক্তি পেয়ে যান তারকা উইকেটকিপার ব্যাটার। তারপর জাতীয় দলের হয়েও আফগানিস্তান সিরিজে সুযোগ পেয়ে যান। এরপরে রঞ্জিতে তিনি খেলেছেন মাত্র একটা ম্যাচ। ফাইনাল সহ গোটা টুর্নামেন্ট মিস করেছেন।
বিদর্ভর নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান সুহাস ফুলকর বলেছেন, "আমাদের কাছে সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী, জিতেশ কুঁচকিতে চোটের এক রিপোর্ট জমা দিয়েছিল। তারপর নিজের ফিটনেস আপডেট আমাদের ব্যক্ত করেনি।
চাহার ভাইয়েরা খেলেন রাজস্থান-এর হয়ে। তবে এই সিজনে রাহুল চাহার খেলেছেন মাত্র এক ম্যাচ। অন্যদিকে, দীপক চাহার সরিয়ে নিয়েছেন নিজেকে গোটা রঞ্জি থেকেই। রাজস্থান ক্রিকেট সংস্থার বিরক্ত এক কর্তা বলেছেন, "ওঁরা নিজেদের ইচ্ছামত ম্যাচ খেলে নাহয় সংশ্লিষ্ট ফ্র্যাঞ্চাইজির মেডিক্যাল রিপোর্ট জমা দিয়ে নিজেদের ম্যাচ থেকে বিরত রাখে। বছরের পর বছর ধরে এমন ঘটনা হয়েই চলেছে।"
মহারাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থার সদ্য বিদায়ী সচিব শুভেন্দ্র ভান্ডারেকর জানালেন, "হাঙ্গারেকর এবং মুকেশ বহুদিন চোট পেয়েছেন। কবে ফিট হবে আমাদের কাছে কোনও আপডেট নেই। চোটের কারণ দেখিয়ে ওঁরা গোটা রঞ্জিতে খেলেনি। আমাদের ফিজিওর পর্যবেক্ষণে রয়েছে ওঁরা।"
ঘটনাচক্রে আইপিএল নিলামের আগে সমস্ত ফ্র্যাঞ্চাইজিদের নজরে থাকে সীমিত ওভারের ঘরোয়া ক্রিকেটের ফরম্যাট সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি, বিজয় হাজারে ট্রফি। সেই ট্রফি খেলার জন্য সকলেই উন্মুখ থাকেন। যাতে সেই টুর্নামেন্ট ঘরোয়া স্তরের উঠতি ক্রিকেটারদের আইপিএল চুক্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়। যদিও সিএসকে সিইও কাশি বিশ্বনাথন জানালেন, তাঁরা বরাবরই ক্রিকেটারদের দীর্ঘতম ফরম্যাট খেলার জন্য উৎসাহ দেন।" বাস্তবের ঘটনা কিন্তু অন্য।
ভারতীয় ক্রিকেটের দিকপাল দিলীপ বেঙ্গসরকার স্পষ্ট ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, "ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, ১৯ বছরের নিচে ক্রিকেটারদের টি২০ ফরম্যাটে খেলতে দেওয়াই উচিত নয়। তবে এখন স্কুল পর্যায়ের ক্রিকেটেও টি২০ খেলা হয়। লম্বা ফরম্যাট ক্রিকেটারদের মানসিকভাবে যেমন শক্তিশালী করে তোলে, তেমন টেম্পারমেন্ট বাড়াতে সাহায্য করে। এতে লম্বা ফরম্যাট তো বটেই টি২০ ফরম্যাটেই ভালো করতে পারেন সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটার।"
জয় শাহের বোর্ড এত কিছুর পর নড়েচড়ে বসায় আশার আলো দেখছেন উত্তরাখণ্ডের রঞ্জি কোচ মনীশ ঝা। "বোর্ডের কড়া অবস্থান রঞ্জিকে বাঁচাতে সাহায্য করবে। কারণ কেউই আর রঞ্জিতে খেলতে চাইছে না। আইপিএল আসার পর ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে ভারসাম্য ঘেঁটে গিয়েছে।"