সানরাইজার্স হায়দরাবাদ: ২৭৭/৩
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স: ২৪৬/৫
Sunrisers Hyderabad vs Mumbai Indians IPL 8th Match Highlights: রানের হলকা। বোলারদের বধ্যভূমি। নির্বিচারে বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারি। রেকর্ড রানের পাহাড়ে চেপে বসা বুধবার সানরাইজার্স বনাম হায়দরাবাদ ম্যাচের বোলারদের হৃদকম্প হিসাবে রেকর্ড বইয়ে জায়গা পেয়ে গেল। প্রথমে ব্যাটিং করে হায়দরাবাদ ২৭৭ রান করে আইপিএলের ইতিহাসে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ল।
বিরাট রানের পুঁজি নিয়েও হায়দরাবাদ শেষ ওভার পর্যন্ত স্বস্তিতে থাকতে পারল না। ট্র্যাভিস হেড, অভিষেক শর্মা, হেনরিখ ক্ল্যাসেন, আইডেন মার্করামদের আগুনে ইনিংসের পাল্টা এল রোহিত শর্মা, ঈশান কিষান, টিম ডেভিড, তিলক ভার্মা, নমন ধীরদের ছোটখাটো সুনামি ইনিংসে। তবে তাতে অবশ্য শেষ রক্ষা হল না। হায়দারবাদ প্ৰথম ম্যাচে কেকেআরের বিরুদ্ধে যেভাবে একদম শেষ মুহূর্তে চোক করে গিয়েছিল। সেই কাণ্ড অবশ্য এবার হল না। মুম্বই রেকর্ড রান চেজ করতে নেমে থামল ২৪৬/৫-এ। হায়দরাবাদ চলতি লিগে প্ৰথম জয় পেল ৩১ রানে।
SRH vs MI IPL 8th Match Report 2024
বিশাল রানের পাহাড়। রোহিত-ঈশানের ব্যাট পাওয়ার প্লেতেই ঝড় তুলেছিল। তবে রোহিত (১২ বলে ২৬), ঈশান কিষান (১৩ বলে ৩৪), নমন ধীর (১৪ বলে ৩০)-কেউই নিজেদের স্কোর বড় রানে টেনে নিয়ে যেতে পারেননি। তিলক ভার্মা শুরুর জড়তা কাটিয়ে ৩৪ বলে ৬৪ করে যান। শেষদিকে ওভার পিছু ১৬ রানের বেশি আস্কিং রেট নিয়ে ব্যাট করতে নেমে টিম ডেভিডের ব্যাট ঝলসে উঠল ২২ বলে ৪২ করে। হার্দিক আউট হওয়ার পর ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে নামানো হয় রোমারিও শেফার্ডকে। তিনিও ৬ বলে ১৫ করে যান।
হার্দিক পান্ডিয়া বলের মতই ব্যাট হাতে শোচনীয়। ২০ বল খেলে অবদান মাত্র ২৪। তাঁর ব্যাটিংই এই রান চেজ করতে নেমে ফারাক গড়ে দিল।
আরও পড়ুন- ছক্কার ঝড়ে ‘দ্রুততম’ রেকর্ড চূর্ণ ২৪ মিনিটেই! হেড থেকে মুকুট কাড়ল অভিষেকের বিস্ফোরণ
তার আগে প্ৰথমে ব্যাট করতে নেমে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ তাণ্ডব শুরু করেছিল। রেকর্ডের পর রেকর্ডের বন্যা বয়ে গিয়েছিল রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসে। শুরুটা হয়েছিল ট্র্যাভিস হেডের ব্যাটে। শেষটা হল হেনরিখ ক্ল্যাসেনের পাশবিক ব্যাটিংয়ে। মাঝে ব্যাটিং বিক্রম দেখিয়ে গেলেন অভিষেক শর্মা, আইডেন মার্করাম। ছক্কার ফুলঝুরি উঠল। যাতে ধ্বংস হয়ে গেল মুম্বইয়ের বোলিং লাইন আপ।
রেকর্ড এদিক-ওদিক হয়ে গেল একই দিনে, মাত্র ২৪ মিনিটের ব্যবধানে। এতদিন হায়দরাবাদের হয়ে দ্রুততম ফিফটি করার রেকর্ড ছিল ডেভিড ওয়ার্নারের। ২০ বলে হাফসেঞ্চুরি করে শীর্ষে ছিলেন অজি তারকা। বুধবার ম্যাচের আগে দিল্লি ক্যাপিটালস-এ থাকা ওয়ার্নার কি কস্মিনকালেও ভাবতে পেরেছিলেন তাঁর রেকর্ড এভাবে ধুলোয় গড়াগড়ি খাবে একবার নয় দু-দুবার।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ট্র্যাভিস হেডের ব্যাটে ঝড় তুলেছিল সানরাইজার্স। মায়াঙ্ক আগারওয়াল আউট হয়ে গেলেও ছক্কার ফুলঝুরি ছুটিয়ে মাত্র ১৮ বলে ফিফটি করে যান বিশ্বকাপ ফাইনালের নায়ক। ওয়ার্নারকে সরিয়ে হায়দরাবাদের হয়ে আইপিএলে দ্রুততম হাফসেঞ্চুরির মালিক হয়ে যান তিনি। জেরাল্ড কোয়েটজের বলে আউট হয়ে ফিরে যাওয়ার আগে হেড ২৪ বলে ৬২ করে যান।
তাঁর সঙ্গে ক্রিজের অন্যপ্রান্তে থাকা অভিষেক শর্মার হাতেই যে মাত্র ২৪ মিনিটের মধ্যে হেডের এই রেকর্ড চূর্ণ হয়ে যাবে, সেটাও ভাবা যায়নি। হেড ফিরে যাওয়ার পর অভিষেক শর্মা ব্যাটে ছক্কার সাইক্লোন তুলে হাফসেঞ্চুরি করলেন মাত্র ১৬ বলে। ২৩ বলে ৬৩ করে শেষমেশ পীযুষ চাওলার বলে আউট হয়ে যান। হেড এবং অভিষেক শর্মার স্ট্রাইক রেট যথাক্রমে ২৫৮.৩৩ এবং ২৭৩.৯১।হেড-অভিষেক দুজনে মিলে ছক্কা হাঁকালেন ১০ টা। সম্মিলিত বাউন্ডারি ১২ টা।
দুজনে ফিরে যাওয়ার পর হায়দরাবাদের মোমেন্টাম ধরে রাখেন ক্ল্যাসেন-মার্করাম জুটি। হেড-অভিষেক যেখানে থেমেছিলেন। সেখান থেকেই অতিমানবীয় ব্যাটিং চালিয়ে যান দুই প্রোটিয়াজ তারকা। ক্ল্যাসেন ৩৪ বলে ৮০ করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকলেন ৭ ছক্কা হাঁকিয়ে। মার্করাম করলেন ২৮ বলে ৪২।
সম্মিলিত এবং ব্যাটিং বিস্ফোরণে হায়দরাবাদ আরসিবিকে ছাপিয়ে আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান করার রেকর্ডও তুলে নিয়েছিল। আরসিবির হয়ে পুনে ওয়ারিয়র্স-এই বিপক্ষে গেইল দানবীয় ব্যাটিং করে গিয়েছিলেন। এদিন হায়দরাবাদ ব্যাটিং লাইনআপেড সকলেই ধুমধাড়াক্কা চালিয়ে গিয়েছেন।
আর এই ব্যাটিং বিস্ফোরণ-এ ত্রাহি ত্রাহি দশা মুম্বই শিবিরে। লিউক উডকে বসিয়ে মুম্বই এদিন প্রথম একাদশে সুযোগ দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে যুব বিশ্বকাপে দুরন্ত পারফর্ম করা মাফাকাকে। তবে যুব পর্যায়ের ক্রিকেট এবং সিনিয়র ক্রিকেটের মধ্যে ফারাক ভালোই বুঝে গেলেন তিনি।
অভিষেক-ট্র্যাভিস হেডের সামনে ৪ ওভারে ১৮ বছরের তরুণ খরচ করলেন ৬৬ রান। মাফাকার স্বদেশীয় জেরাল্ড কোয়েটজেরক নাভিশ্বাস উঠে গেল বুধবার। নিজের কোটা পূরণ করার আগে ৫৬ রান বিলিয়ে দিলেন তিনি। ক্যাপ্টেন পান্ডিয়া বল হাতে রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে দিলেন। ৪ ওভার বল করে ১ উইকেটের বিনিময়ে দিলেন ৪৬ রান। একমাত্র স্পেশালিস্ট স্পিনার হিসাবে খেলছিলেন পীযুষ চাওলা। ২ ওভারে ৩৪ খরচ করার পর হার্দিক তাঁকে এই আক্রমণে আনতেই সাহস পাননি। শামস মুলানিও ২ ওভারে ৩৩ দিয়ে যান।
ছক্কার এই কার্নিভালের মধ্যেও স্বতন্ত্র জসপ্রীত বুমরা। ৪ ওভারে মাত্র দিলেন ৩৬ রান। হায়দরাবাদের ক্যাপ্টেন প্যাট কামিন্স ৪ ওভারে ৩৫ দিয়ে তুললেন ২ উইকেট।