IPL, Mumbai Indians, Hardik Pandya, Rohit Sharma: মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এবার সাফল্যের চাকা ঘোরানোর জন্য রোহিতকে সরিয়ে নেতা হিসেবে এনেছে হার্দিক পান্ডিয়াকে। তারপরে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স-এর ওপর নজর পুরো আইপিএল দুনিয়ায়। এমনিতেই রোহিতকে সরিয়ে মুম্বই সমর্থককুলের একাংশকে চটিয়ে দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। এরপরে হার্দিকের নেতৃত্বে আইপিএলের সফলতম ফ্র্যাঞ্চাইজি কেমন পারফর্ম করে, তা দেখতে মুখিয়ে সকলে।
হার্দিক চোট-প্রবণ। বরাবর চোট আঘাত সঙ্গী হয়েছে তাঁর। তবে ফিট থাকলে তিনি যে দলের কাছে দুঃস্বপ্নের। ম্যাচের যে কোনও মুহূর্তে তিনি বল করতে পারেন। আবার ব্যাট হাতে তান্ডব চালিয়ে রং বদলে দিতে পারেন কে কোনও সময়।
২০২১-এর নিলামের হার্দিককে যখন রিলিজ করে দেওয়া হয়, সেই সময় বেশ কয়েক সিজন ধরেই হার্দিক বল করছিলেন না পিঠে ইনজুরির জন্য। স্রেফ ব্যাটার হিসাবে মুম্বই হার্দিককে রাখতে চাইছিল না। ব্যাট হাতেও নিজের চেনা ছন্দে ছিলেন না তারকা (গড় ১৪.১১ এবং স্ট্রাইক রেট ১১৩.২৯)।
আরও পড়ুন- গম্ভীরের বায়নাক্কা সহ্য করে নিয়েছেন শাহরুখ! IPL শুরুর আগেই নাইটদের সম্পর্কের সমীকরণ প্রকাশ্যে
হার্দিককে সেই সময় রিটেন না করা যেমন মুম্বইয়ের পক্ষে সহজতর অপশন হয়ে থাকে, তারকা অলরাউন্ডারের অভাব পূরণ করা আরও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল মুম্বইয়ের কাছে। হার্দিককে ছেড়ে দেওয়ার পর রোহিত ২০২২ সিজনে বোলিংয়ের জন্য ভরসা রাখছিলেন কায়রণ পোলার্ডের ওপর। তবে পঞ্চম বোলারের ভূমিকায় পোলার্ড নিজের মিডিয়াম পেস নিয়ে বিপক্ষ ব্যাটারদের কাছে মোটেই ভীতি সঞ্চার করতে পারেননি।
গত সিজনে মুম্বই এই কারণেই সই করিয়েছিল ক্যামেরন গ্রিনকে। বল তো বটেই ব্যাট হাতেও নজর কেড়েছেন গ্রিন। তবে গ্রিনকে খেলালে বিদেশি কম্বিনেশনে ধাক্কা খাচ্ছিল মুম্বই। (মিচেল জনসন-লাসিথ মালিঙ্গা, ম্যাকক্লিনাঘান-মালিঙ্গা, ট্রেন্ট বোল্ট-জেমস প্যাটিনসন/নাথান কুইলটার নাইল) দুই বিদেশি পেসার খেলানোর যে ট্র্যাডিশন বজায় রেখে মুম্বই বছরের পর বছর সাফল্য পেয়েছে, সেই রণনীতি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিল।
গ্রিন খেললে দুই বিদেশি সিমারের জায়গায় এক বিদেশি পেসার এবং দুই ভারতীয়কে রেখে পেস বিভাগ সাজাতে হচ্ছিল মুম্বইকে। মুম্বইকে বিপদে ফেলে গত সিজনে বুমরা এবং আর্চার দুজনই ইনজুরির কারণে গোটা সিজন মিস করে।
লিগের মাঝপথে আকাশ মাধওয়ালের উত্থান এবং বর্ষীয়ান পীযুষ চাওলার স্পিন অনেক ত্রুটি মেরামত করে দিয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজির। তবে তাতেও কোয়ালিফায়ারে গিলের ব্যাটের সামনে সমস্ত হোঁচট খাওয়া আটকানো যায়নি।
আরও পড়ুন: IPL শুরুর আগেই ICC-র ধাক্কা! নিষিদ্ধ সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিদেশি, ব্যাপক আনন্দ বাংলাদেশে
মুম্বই যখন হার্দিকের পরিবর্ত না পেয়ে রীতিমত পরের পর সিজন ব্যর্থ হচ্ছে, সেই সময়েই হার্দিক আবার নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি গুজরাট টাইটান্স-এ সাফল্যের নতুন নতুন কাহিনী তৈরি করছেন। প্ৰথম সিজনেই গুজরাট চ্যাম্পিয়ন, তারপরের সিজনে রানার্স আপ। মুম্বইয়ে ক্রমশ বিবর্ণ হতে থাকা হার্দিক যেন নিজেকে নতুন করে মেলে ধরে গুজরাটে। নতুন বলে যেমন উইকেট শিকার করছিলেন, তেমন ব্যাট হাতে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে চলেছিলেন।
এরপরেও রোহিতকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া মুম্বই ফ্র্যাঞ্চাইজির কাছে মোটেই সহজ সিদ্ধান্ত ছিল না। বিশেষ করে রোহিত যখন বর্তমান টিম ইন্ডিয়ার তিন ফরম্যাটেরই অধিনায়ক। আইপিএল সূচনা লগ্ন থেকে টিম ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন ফ্র্যাঞ্চাইজিতে নেতা নন, এমন দৃষ্টান্ত আগে দেখা যায়নি।
ঘটনাচক্রে, রোহিতের ব্যাটও আইপিএলে সেভাবে আগের মত আর জ্বলে উঠছে না। এমনকি রোহিতের ব্যাটিং পরিসংখ্যানই তাঁকে দলের প্রথম একাদশের বাইরে রাখার পক্ষে যথেষ্ট।
রোহিতকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে হার্দিককে অধিনায়ক করে আসলে সুনিপুনভাবে ঝুঁকি নিল মুম্বই। এই ঝুঁকি নেওয়ার জন্যই সিএসকের সঙ্গে আইপিএলের সফলতম ফ্র্যাঞ্চাইজি ইন্ডিয়ান্স শিবির।
আসন্ন সিজন হার্দিকের জন্য অগ্নিপরীক্ষা হতে চলেছে। মাঠে, মাঠেড বাইরে যে সিদ্ধান্তই তিনি নিন, তা কঠোর আতসকাঁচে ফেলে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হবে। নিজের পারফরম্যান্স দিয়েই হার্দিককে সমর্থকদের মন জয় করতে হবে। সেই কাজে সফল হবেন হার্দিক? সময়ই উত্তর দেবে।