লিজেন্ডস লিগ ক্রিকেটে শ্রীসন্থ বনাম গম্ভীর দ্বন্দ্বে উত্তাল ক্রিকেট। গোটা দেশের ক্রিকেট মহলকেই আড়াআড়িভাবে দু-ভাগ করে দিয়েছে গম্ভীর-শ্রীসন্থ ঝামেলা। লিজেন্ডস লিগ ক্রিকেট লিগে গুজরাট জায়ান্টস বনাম ইন্ডিয়া ক্যাপিটালস ম্যাচ চলাকালীন ঘটে যায় অপ্রীতিকর ঘটনা। তারপরেই শ্রীসন্থের তরফে ভিডিও পোস্ট করে বিষ্ফোরকভাবে বলা হয়, তাঁকে নাকি বারবার ফিক্সার বলে সম্বোধন করছিলেন গম্ভীর।
আর গোটা বিতর্কে এবার মুখ খুললেন লিজেন্ডস লিগ ক্রিকেটের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির প্রধান সৈয়দ কিরমানি। বলে দিলেন, পুরো ঘটনার তদন্ত করা হবে।
লিজেন্ডস লিগ ক্রিকেটের তরফে কী বলা হল?
ঘটনার পরেই লিগ কর্তৃপক্ষের তরফে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারিভাবে প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়, "লিজেন্ডস লিগ ক্রিকেট এবং ক্রীড়ামহলের স্পিরিট সঠিকভাবে ধরে রাখতে সচেষ্ট। আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত করা হবে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম সহ মাঠের বাইরে এবং মাঠের বাইরে যে কোনও অসদাচরণ ঘটলে কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে। আচরণবিধিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, লিগে অংশগ্রহণকারী ক্রিকেটার এবং দলকে অসম্মানিত করা হলে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা আমাদের অবস্থানে সুদৃঢ় রয়েছি। এই খেলা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে ছড়িয়ে দিতেও আমরা বদ্ধপরিকর।"
ম্যাচে কী ঘটেছিল?
লিগের এলিমিনেটরের ম্যাচ ছিল গুজরাট জায়ান্টস বনাম ইন্ডিয়া ক্যাপিটালসের মধ্যে। সেই ম্যাচেই গম্ভীর-শ্রীসন্থের দ্বন্দ্বযুদ্ধের অবতারণা ঘটে দ্বিতীয় ওভার চলাকালীন। সেই ওভারে শ্রীসন্থকে পরপর দু-বলে বাউন্ডারিজ ওভার বাউন্ডারি হাঁকান। পরের বলে গম্ভীরের শট সরাসরি ফিল্ডারের হাতে জমা হয়। এরপরই শ্রীসন্থকে কিছু বলতে শোনা হয়। পাল্টা দেন গম্ভীর-ও।
গম্ভীরের বক্তব্য কী?
শ্রীসন্থ যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় জোড়া ভিডিও পোস্ট করে তোলপাড় ফেলে দিয়েছেন। সেই সময়েই গম্ভীর কিছুটা চুপচাপ থেকেছেন। তবে বৃহস্পতিবার তারকা ওপেনার একটি ইঙ্গিতবাহী টুইট করেন। নিজের হাসি মুখের ভিডিও পোস্ট করে গম্ভীর লেখেন, "হাসতে থাকো, যখন গোটা দুনিয়া স্রেফ মনোযোগ আকর্ষণের।"
গম্ভীরের পাশে ইরফান পাঠান:
গম্ভীরের এই সংযত বার্তার পাশে দাঁড়িয়েছেন ইরফান পাঠান। তিনি গম্ভীরকে রিপ্লাই দেন, "হাসিই সেরা উপহার, ভাই আমার।"
শ্রীসন্থ কী বলেছিলেন?
শ্রীসন্থ বিতর্কিত ঘটনার পরেই বুধবার একটি ভিডিও পোস্ট করেন। বৃহস্পতিবার পোস্ট করেন আরও একটা। বৃহস্পতিবার পোস্ট করা ভিডিওয় বিতর্কিত পেসার লিখেছেন, "প্রতারক, প্রতারক, তুই একটা প্রতারক। দূর হ.. গম্ভীর এমনটা বলেই চলেছিল আমাকে। টিভিতে লাইভ ম্যাচের সময় উইকেটের মাঝে দাঁড়িয়ে এরকম কন্টিনিউ করছিল গম্ভীর। লাইভ টিভিতে এই ভাষাতেই কথা বলছিল ও। এমনকি আম্পায়াররা ওঁকে শান্ত করতে গেলেও ও একই কথা বলে চলেছিল। ওঁকে আমি একটাও খারাপ শব্দ, গালিগালাজ করিনি। আমি স্রেফ বলছিলাম, কী বলছ কী তুমি? তারপর শ্লেষ মেশানো হাসি উপহার দি।"
কেন গম্ভীর শ্রীসন্থকে ফিক্সার বলেছিলেন?
যদি শ্রীসন্থের অভিযোগ সত্যি হয়। তাহলে গম্ভীর সম্ভবত ২০১৩-র ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। যে বছরে আইপিএলকে স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারি উপরে ফেলেছিল।
২০১৩ সালে, দিল্লি পুলিশ স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগে তিন ক্রিকেটার, শ্রীসন্থ, অজিত চান্ডিলা এবং অঙ্কিত চবনকে গ্রেপ্তার করেছিল। শ্রীসন্থকে তাঁর বন্ধুর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। তিনজনই সেই সময়ে রাজস্থান রয়্যালস ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে খেলছিলেন। তারপরেই বিসিসিআই শ্রীসন্থকে যেকোনও ধরনের ক্রিকেট খেলা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
অভিনেতা বিন্দু দারা সিংকে গ্রেফতার করার পরে গোটা ঘটনা আরও বৃহত্তর রূপ নেয়। তারপরে, তাঁর সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে গুরুনাথ ময়াপ্পান, যিনি চেন্নাই সুপার কিংসের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, এবং রাজস্থান রয়্যালসের সহ-মালিক রাজ কুন্দ্রাকে এই মামলায় জড়িয়ে পড়েম। পুরো বিতর্কের কারণে, আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুক্লা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এবং এন শ্রীনিবাসনও তার দায়িত্ব ছেড়ে দেন। যদিও সাময়িকভাবে।
দিল্লি পুলিশের অভিযোগ ছিল যে তিনজন ক্রিকেটার মাঠে পূর্ব-নির্ধারিত অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে বুকিদের সংকেত দিচ্ছিলেন। পুলিশের তদন্তে মোহালিতে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব বনাম রাজস্থান রয়্যালস ম্যাচের ঘটনা উঠে আসে। সেই ম্যাচে যেখানে শ্রীসন্থ তাঁর ট্রাউজারের কোমরে বাঁধা একটি তোয়ালে রেখে একটি ওভার সমাপ্ত করেন। পুলিশ জানায়, এই তোয়ালের মাধ্যমে তিনি বুকিদের জন্য একটি সংকেত পাঠাচ্ছিলেন। (পুলিশ উল্লেখ করে, তিনি তোয়ালে ছাড়াই আগের ওভারটি বল করেছিলেন।) শ্রীসন্থ সেই বিতর্কিত ওভারে ১৪ রানের বেশি খরচ করেন।
স্পট ফিক্সিংয়ে দোষী হয়েও কীভাবে ক্রিকেটে ফিরলেন শ্রীসন্থ?
২০১৫-এ জুলাইয়ে পাতিয়ালা হাউস আদালত ২০১৩-র আইপিএল স্পট-ফিক্সিং মামলায় শ্রীসন্থ, চান্দিলা এবং চ্যাভানের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ প্রত্যাহার করে। বলা হয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে MCOCA-এর অধীনে কোনও প্রাথমিক মামলা দায়ের করা হয়নি৷
তারপর, ২০১৯-এর মার্চ-এ সুপ্রিম কোর্ট শ্রীসন্থের উপর থেকে আজীবন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। সর্বোচ্চ আদালত বিসিসিআইকে শাস্তির পরিমাণ পুনর্বিবেচনার নির্দেশও দেয়।