এখনও তিনি ফ্যান ফেভারিট। সমর্থকদের হৃদয়ে। দুই মরশুম আগে লাল হলুদ রক্ষণের সেনাপতি ছিলেন। বোরহা গোমেজ পেরেজের হৃদয়ে এখনও রক্তক্ষরণ হয় লাল হলুদ জার্সিধারীদের দুরবস্থা দেখলে।
মারিও রিভেরার হাতে এখন ইস্টবেঙ্গল সংসারের চাবিকাঠি। শনিবারের দামাল ডার্বির আগে তিনি পুরোনো ভিডিও দেখিয়ে দলকে চাঙ্গা করছেন। বোরহা-কোলাডো-অ্যাকোস্তাদের দুর্ধর্ষ ইস্টবেঙ্গল সেরার সেরা হয়ে উঠেছিল। সেই সময় আলেহান্দর সহকারী হিসাবে মারিও সমস্ত সুখ-দুঃখের সাক্ষী থেকেছেন।
তবে এখন জমানা বদলে গিয়েছে। তিনিই কোচের হটসিটে। হোটেলরুমে বসেই ফিরতি লেগের ডার্বিতে প্রতিশোধের অঙ্ক কষছেন, অনভিজ্ঞ, ধারে-ভারে অনেক পিছিয়ে থাকা দল নিয়ে। পেরসেভিচ-আদিল খানদের তাতানোর জন্য দেখাচ্ছেন পুরোনো কোয়েস জমানার ভিডিও।
মাদ্রিদে নিজের বাড়িতে বসেই ডার্বির আগে মারিওর এই ভিডিও-মোটিভেশনের খবর পৌঁছে গিয়েছে বোরহা গোমেজ পেরেজের কানে। তবে মারিওর পুরোনো ছাত্রের এতে গর্বিত হওয়া তো দূরের পাল্টা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বোরহা জানিয়ে দিচ্ছেন, "কত যে ভাল স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। এটা কী এমন ব্যাপার। এটা লজ্জার যে আমরা চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ের বাইরে।"
আরও পড়ুন: ডার্বিতে মনে হয় না ইস্টবেঙ্গল পারবে! মহাযুদ্ধের আগেই ভবিষ্যৎবাণী মানোলোর
মাদ্রিদে বসে সরাসরি ডার্বি খেলা দেখতে পারবেন না। তবে ইস্টবেঙ্গলের একসময়ের সৈনিক বলছিলেন, "যদি ইন্টারনেট ঘেঁটে স্ট্রিম লাইভ দেখতে পারি, ভাল! তবে মাদ্রিদ থেকে সরাসরি ম্যাচ দেখা একটু শক্ত।"
ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে যাওয়ার পরে আর মাঠে ফেরেননি। কোচিংয়ে মনোনিবেশ করেছেন। কোচিং কার্ড করিয়ে নতুন অধ্যায় শুরু করতে চান তিনি। তুমুল ব্যস্ততার মাঝেও পুরোনো দলের ফলাফলে নজর রাখতে ভুল করেননি।
তবে আহত হয়েছেন দলের খেলায়। বারবার হার-ড্র দেখে ক্ষিপ্ত হয়েছেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে মাদ্রিদের যুব দলে খেলা বোরহা বলছিলেন, "কোচ মানোলোকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। যদিও ওঁর অধীনে খেলা হয়নি। আর মারিও নতুনভাবে হেড কোচ নিযুক্ত হওয়ার পরে আমি শুভেচ্ছা জানিয়েছিলাম ওঁকে।"
"ভারত হোক বা অন্যত্র যেখানেই কোচিং করানো হোক না কেন, মোদ্দা কথা হল কোচ যেন সমস্ত বিদেশিদের ভালভাবে চেনেন, তাঁদের মান জানেন। বিদেশে খেলে স্রেফ ভাল সিভি থাকলেই যে সে ভারতে সফল হবে, এমনটা নয়। তাছাড়া আইলিগের থেকেও আইএসএল অনেক উঁচুদরের কম্পিটিশন। আর সবথেকে বড় বিষয় হল, দলগত সংহতি, ভারতীয়দের সঙ্গে বিদেশিদের মাঠে বোঝাপড়া গড়ে না উঠলে পারফর্ম করা মুশকিল।"
আরও পড়ুন: আবেগের ঢেউ এখনও ইস্টবেঙ্গলের দিকে, ডার্বির আগেই পদ্মাপাড়ে পিছুটানের গল্প কিংবদন্তি
প্ৰথম মরশুমেই নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছিলেন জনি অ্যাকোস্তার সঙ্গে রক্ষণে জুটি বেঁধে। রক্ষিত দাগার, মনোজ মহম্মদদের সঙ্গে ম্যাচ চলাকালীন চিৎকার করে যোগসূত্র রক্ষা করতেন। প্ৰথম মরশুমে দুরন্ত পারফর্ম করায় কোয়েসের জমানায় চুক্তি বাড়ানো হয়েছিল বোরহার।
ভয়ঙ্কর ট্র্যাজেডিতে ইস্টবেঙ্গল, কলকাতা ছাড়তে বাধ্য হন। কলকাতায় বসেই জানতে পারেন পুত্র মাউরোর মাথায় বাসা বেঁধেছে মারণ টিউমার। তড়িঘড়ি কলকাতাকে আলবিদা জানিয়ে স্পেনে পাড়ি দেন। বর্তমানে মাউরো অবশ্য অনেকটাই সুস্থ। তবে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
শনিবার সবকিছু ভুলে ডার্বিতে প্রিয় দলের জয় দেখতে মরিয়া স্প্যানিয়ার্ড। রঙ মশাল ছড়িয়ে জেগে থাকা স্মৃতি হাতড়ে সুপারস্টার ডিফেন্ডার বলছিলেন, "কলকাতায় সল্টলেক স্টেডিয়ামে ডার্বি হচ্ছে না। জেনেই খারাপ লাগছে। সমর্থক, পরিবেশ ডার্বির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এবার তো সেটাই হচ্ছে না।"
ডার্বিতে অনেকটাই এগিয়ে ফেরান্দোর এটিকে মোহনবাগান। মেনে নিচ্ছেন বোরহাও। জানাচ্ছেন, "এটিকে মোহনবাগান দলের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। ওঁদের বাজেট অনেক বেশি। দলে কোয়ালিটি ফুটবলারের সংখ্যাও বেশি। তবে ফুটবলে কখনই আগাম পরিকল্পনা করা যায় না।"
ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে গিয়েছেন। তবে পুরোনো অনেক বন্ধুর সঙ্গে এখনও হৃদ্যতা রয়ে গিয়েছে। বলছিলেন, "কোচ আলেহান্দ্র, হুয়ান মেরা, হাইমে কোলাডোদের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই কথা-বার্তা হয়।"
স্মৃতির ঝাঁপি উপুড় করে বসেন, বন্ধুরা। যে যোগসূত্র গড়ে দিয়েছে প্রিয় শহর কলকাতা। ফোন রাখার আগে বোরহা স্রেফ বলে যান, "একদিন না একদিন ইস্টবেঙ্গলে ফিরব, সমস্ত ভালবাসা উজাড় করে দেব সমর্থকদের।"
সেই সময় কবে আসবে, তিনি নিজেও কি জানেন!
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন