ক্লাবকে আইলিগ চ্যাম্পিয়ন করতে সাহায্য করেছিলেন। বদলে জুটেছে উপেক্ষার মালা। বঞ্চনা আর অবহেলা সয়ে পাড়ি জমিয়েছেন অন্য শহরে। প্রিয় ক্লাবের পরিচিতিও পাল্টে গিয়েছে।
ফ্রান গঞ্জালেজ তবুও এখনো 'মেরিনার'। একজন আদ্যন্ত মোহনবাগানি পরিচয়ের সুবাস ঘিরে ধরে তাঁকে আজও। ডার্বির ২৪ ঘন্টা আগে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে কথা বলার সময় ফ্রানের গলায় উত্তেজনা, "ডার্বি আমার ফুটবল কেরিয়ারে বরাবর এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। সমর্থকদের উন্মাদনাই ডার্বির আমেজে আলাদা মাত্রা দেয়। শেষ যে ডার্বিতে আমি অংশ নিয়েছিলাম, সেই ম্যাচ ২-১ ব্যবধানে জিতি আমরা। অসাধারণ সেই অভিজ্ঞতা।"
আরো পড়ুন: সোনার বিদেশি, ডার্বির বাঙালি নায়ক! দলবদলের সেরা চমক দিতে চলেছে মহামেডান
কলকাতা পরিচয় মুছে তাঁর ঠিকানা এখনো বেঙ্গালুরু এফসি। গোয়ায় নিজের হোটেলের রুমে বসে শুক্রবার অবশ্য চোখ রাখবেন মহারণে। প্রাক্তন মোহনবাগানি জানিয়ে দিয়েছেন, "ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করে এটিকে মোহনবাগান কার্যত অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। যে কোনো পজিশনে ওদের কোয়ালিটি ফুটবলার রয়েছে। সেই কারণেই ওরা এখন লিগ টেবিলের শীর্ষে। অন্যদিকে, ইস্টবেঙ্গল আমাদের মতোই কঠিন একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছে। তবে ওদের দলেও কোয়ালিটি রয়েছে। যদি ওঁরা ঠিকমত পারফর্ম করতে পারে তাহলে কিন্তু কড়া টক্কর দেবে এটিকে মোহনবাগানকে।"
এটিকে মোহনবাগানের সংযুক্তি ঘটেছে। আর আইলিগ চ্যাম্পিয়ন দলের স্কোয়াড থেকে ব্রাত্য করে দেওয়া হয়েছে ফ্রানকে। কোচ কিবুর ঠিকানা হয়েছে কেরালায়। ফ্রান যদিও পুরোনো সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা স্মরণে রাখতে চান না। বরং এটিকে মোহনবাগানের জন্য সম্ভ্রম জড়িয়ে থাকে তাঁর গলায়, "আগেও বলেছি। আবার বলছি এটিকে মোহনবাগান চলতি টুর্নামেন্টের সবথেকে কম্প্যাক্ট এবং শক্তিশালী টিম। ওদের দলে বেশ কিছু এমন ফুটবলার রয়েছে যাঁরা একক দক্ষতায় ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। দল হিসেবে ভালো বোঝাপড়াও গড়ে উঠেছে। প্রথমার্ধে না পারলেও ম্যাচের শেষদিকে গোল করে পয়েন্ট ছিনিয়ে নিচ্ছে ওরা।"
আরো পড়ুন: EXCLUSIVE: ক্লাবের গাফিলতি, সংঘাতেই আইএসএলে কোচিং করানো হল না! আক্ষেপ আলেহান্দ্রোর
কোচ হাবাস নাকি কোচ ফাউলার, ডার্বি ডুয়েলে মগজাস্ত্রের লড়াই! ইংরেজ নাকি স্প্যানিশ স্টাইল- ভারতীয় ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই গোয়ার ময়দানে। কোচ হিসেবে ফাউলারকে অবশ্য কোনো নম্বরই দিতে রাজি নন মোহনবাগানের একসময়ের প্রাণভ্রমরা ফ্রান। সাফ বলে দিয়েছেন, "কোচ ফাউলারকে সেভাবে চিনি-ই না আমি।"
আইলিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেয়েছেন। আবার তার মরশুমে ব্যর্থতাও দেখে ফেলেছেন ভারতীয় ফুটবলে। সুনীল ছেত্রীদের দল এই মুহূর্তে একদমই ফর্মে নেই। হার, আর ড্রয়ের আবর্তে তলিয়ে গিয়েছে উদ্যাণ নগরীর ফ্র্যাঞ্চাইজি। ১৮ ম্যাচে ২২ পয়েন্ট নিয়ে বেঙ্গালুরু আপাতত ষষ্ঠ স্থানে। টুর্নামেন্টের মাঝপথেই কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতকে ছাঁটাই হতে হয়েছে।
ফ্রান জানাচ্ছেন, "বেশ কিছু কারণে আমরা এবার প্রত্যাশিত ফলাফল করতে পারিনি। এটা ফুটবলে হয়ে থাকে। সেরা দলকেও ব্যর্থতা সহ্য করতে হয় কখনো কখনো। দল হিসেবে আমরা নিজেদের মেলে ধরতে পারিনি। চোট আঘাতের ধাক্কাও হজম করতে হয়েছে। এই সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময়েও আমাদের প্লে অফে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে অংকের হিসাবে। শেষ কয়েকটা ম্যাচে কিন্তু আমরা ভালোই খেলেছি।"
এরপরে তার সংযোজন, "কার্লেস দলের সঙ্গে পাঁচ বছর যুক্ত ছিলেন। টিম ম্যানেজমেন্ট নতুনভাবে শুরু করতে চাইছিল। পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছিল, তাতে তরুণদের আরো ভালোভাবে পারফর্ম করতে হত। আমি আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে যততা পারি তরুণদের সাহায্য করছি।"
বেঙ্গালুরুর ঠিকানা হলেও অন্তরে রয়ে গিয়েছে কেবল মোহনবাগানই। ফ্রান পুরোনো দিনের স্মৃতি হাতড়ে বলতে থাকেন, "গত মরশুমে মোহনবাগানে খেলার অভিজ্ঞতা আমার কেরিয়ারের অন্যতম সেরা। শহর, ক্লাব, সমর্থক- ওদের উপচে পড়া ভালোবাসায় ভেসে গিয়েছি। সমর্থকরা আমাকে ভালোবেসে ক্লাবে স্বাগত জানিয়েছিল। ওই মরশুমে একজন ফুটবলার কেরিয়ারে যা চান- সব অর্জন করেছি। কলকাতা আমার হৃদয়ে সবসময় থাকবে।"
আবার কি শহর কলকাতা ঠিকানা হতে পারে না ফ্রানের? সম্ভবনা একেবারে উড়িয়ে না দিয়ে তারকা মিডফিল্ডার বলে দিলেন, "এই মুহূর্তে আমার লক্ষ্য বেঙ্গালুরুকে সেরা পজিশনে অর্জন করানো। তারপর এসব নিয়ে ভাবব।"
Read the full article in ENGLISH
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন