ইস্টবেঙ্গল: ১ (সিডোয়েল)
এটিকে মোহনবাগান: ৩ (কিয়ান-হ্যাটট্রিক)
একসময় মাঠ মাতাতেন বাবা জামশেদ নাসিরি। বন্ধু মাজিদ বিশকরের সঙ্গে সবুজ গালিচায় ইরানের মৌতাত এনে হাজির করতেন। জামশেদ নাসিরির ছেলেই যে মান্ডবির তীরে রাতারাতি প্রচারের পাদপ্রদীমে এসে হাজির হবেন, কে জানত! হ্যাটট্রিক করে যে একের পর এক নজির গড়ে ফেলবেন, ভাবতেও পারেননি দুই দলের স্প্যানিশ কোচ।
আইএসএল-এর ফিরতি লেগের ডার্বিতে অঘটনের অপেক্ষায় উন্মুখ ছিলেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। তবে ম্যাচ শেষে ১-৩ হার নিয়ে টিভি বন্ধ করতে হচ্ছে লাল হলুদ সমর্থকদের।
ম্যাচের শেষ দিকে মাত্র তিন মিনিটের ঝড়ে নাসিরি পুত্র ছারখার কর দিলেন বাবার প্রাক্তন ক্লাব ইস্টবেঙ্গলকে। বিরতির পর কর্ণার থেকে ভেসে আসা বলে দারুণ গোলে লাল হলুদকে এগিয়ে দিয়েছিলেন সিডোয়েল। এরপরই কিয়ান-ম্যাজিক গোয়ায়। ৬৪ মিনিটে কিয়ান সমতা ফেরানোর পরে দ্বিতীয়ার্ধের সংযোজিত সময়ে মাত্র এক মিনিটের ব্যবধানে জোড়া গোল করে নায়ক হয়ে ওঠেন।
প্রায় ৭০ শতাংশ বল পজেশন নিয়েও যে এটিকে মোহনবাগান যে আটকে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গলের কাছে, তার অন্যতম কারণ রয় কৃষ্ণের অনুপস্থিতি। কৃষ্ণের বদলে ডার্বি নায়ক হওয়ার অভাবিত সুযোগ এসে গিয়েছিল ডেভিড উইলিয়ামসের কাছে। তবে দল ম্যাচ জিতলেও খলনায়ক তিনি। অজি স্ট্রাইকার বারবার যেমন আটকে গেলেন হীরা মন্ডল-প্রেসিদের সামনে, তেমন ম্যাচের মোক্ষম সময়ে পেনাল্টি 'ছক্কা' মেরে উড়িয়ে দিলেন।
আরও পড়ুন: আবেগের ঢেউ এখনও ইস্টবেঙ্গলের দিকে, ডার্বির আগেই পদ্মাপাড়ে পিছুটানের গল্প কিংবদন্তি
হীরা মন্ডল গোটা টুর্নামেন্টের মতই ডার্বিতে অনবদ্য। অসাধারণ গোললাইন সেভ করলেন। সারাক্ষণ রক্ষণের ইঞ্জিন হয়ে ধরা দিলেন বিপক্ষের প্রেসিং ফুটবলের সামনে। আর পেরসেভি প্রথমার্ধে জ্বলে উঠলেও বিরতির পর অনেকটাই হারিয়ে গেলেন।
দুই দলই অতি সতর্ক ভঙ্গিতে ম্যাচ শুরু করেছিল। বিরতির পর সেরা সুযোগ পেয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গলের মার্সেলো রিবেইরো। সবুজ মেরুন রক্ষণকে বেকায়দায় পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবে ওয়ান টু ওয়ান পজিশনেও বল বাইরে মেরে বসেন ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার। প্রথমার্ধে লিস্টন কোলাসো এবং শুভাশিস বোসও গোলের সুযোগ পান।
এটিকে মোহনবাগান বেশি বল পজেশন নিলেও প্রথমার্ধে গোল করতে পারেননি কোনও সবুজ মেরুন তারকাই। সিডোয়েলের গোলে লাল হলুদ এগিয়ে যাওয়ার পরে ফেরান্দো মাস্টারস্ট্রোক দেন কিয়ান নাসিরিকে নামিয়ে। যা ম্যাচের গেমচেঞ্জার হয়ে দাঁড়ায়। চলতি আইএসএলে মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচে নেমেছিলেন। আর নেমেই হিরো। আইএসএলের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ হ্যাটট্রিককারী আপাতত তাঁর নামের পাশে।
আরও পড়ুন: ইস্টবেঙ্গল চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে নেই, এটাই লজ্জার! মাদ্রিদ বসেই রক্তাক্ত বোরহা
প্ৰথমে সমতা সূচক গোল আসে তাঁর পা থেকে। এরপরে ডেভিড উইলিয়ামসের গোল মিস এবং হিরা মন্ডলের গোললাইন সেভে মনে হচ্ছিল ম্যাচ অমীমাংসিত রেখে মারিও রিভেরার দল মাঠ ছাড়বে।
তবে ইরানি রক্ত যে এরপরে ভেলকি দেখাবে, তা আগে বোঝা যায়নি।
এটিকে মোহনবাগান: অমরিন্দর, তিরি, কার্ল ম্যাকহিউ, ডেভিড উইলিয়ামস, হুগো বৌমাস, মনবীর সিং, শুভাশিস বোস, লিস্টন কোলাসো, প্রীতম কোটাল, দীপক টাংরি, প্রবীর দাস
ইস্টবেঙ্গল: অরিন্দম, অঙ্কিত, আদিল, ফ্রান প্রেসি, হীরা মন্ডল, মহেশ, সৌরভ, আঙ্গুসানা, সিডোয়েল, মার্সেলো, পেরসেভিচ
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন