বহু যুদ্ধের নায়ক তিনি। ডার্বিতে অপরাজিত তকমাও তাঁর নামের পাশে। ডগলাস দ্যা সিলভা নাম এখনো অনুরণন তোলে লাল হলুদ জনতার মনে। ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টারই ডার্বি দেখে রাগে ফুঁসছেন। বাংলাদেশ থেকে ফোনে বলে দিলেন, "ইস্টবেঙ্গলের বিদেশিরা কি এই ম্যাচের গুরুত্ব বোঝে, আমার ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে। ওদের বোধহয় বোঝানোই হয়নি এই ম্যাচের মাহাত্ম্য কতটা!"
কখনো হতাশ, কখনো বেদনার্ত! প্রিয় ক্লাবের লাঞ্ছনা দেখে চুপ থাকতে পারছেন না লাল হলুদ রক্ষণের একসময়ের বিশ্বস্ত প্রহরী। বাংলাদেশের ঢাকা আরামবাগ ক্লাবের দায়িত্ব নিয়েছেন কিছুদিন আগেই। ঢাকা থেকেই ফোনে পেলের দেশের তারকা জানালেন, "অনলাইনে লাইভ স্ট্রিমিং খুঁজে ম্যাচ দেখলাম। দুই দলের বিদেশিরা কেমন পারফর্ম করেন সেটাই দেখতে চেয়েছিলাম। আমাদের সময় যে কমিটমেন্ট নিয়ে খেলতাম, ইস্টবেঙ্গলের বতর্মান ফুটবলারের মধ্যে তার ছিঁটেফোঁটাও পেলাম না। এই ধরণের ম্যাচে প্লেয়ারদের মানসিক দৃঢ়তা, নিজের সেরাটা দেওয়ার আকুতি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। কোথায় কি! ভীষণ হতাশ হলাম ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখে।"
আরো পড়ুন: কোচ রবি ফাউলারকে চিনি না! ডার্বির আগে বিস্ফোরক বাগানের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান
ফতোরদা স্টেডিয়ামে ইস্টবেঙ্গল কার্যত দাঁড়াতেই পারেনি শুক্রবারের সন্ধ্যায়। রয় কৃষ্ণের লীলায় শেষ হয়ে গিয়েছে লাল হলুদ প্রতিরোধ। নিজে গোল করলেন, জোড়া গোল করালেন ফিজিয়ান তারকা। ডগলাস সেই ম্যাচের বিশ্লেষণ করতে বসে বলছেন, "ইস্টবেঙ্গল তিন ডিফেন্ডারের স্ট্র্যাটেজিতে খেলতে নেমেছিল হাবাসের মত। তবে ইস্টবেঙ্গল কেন হাই লাইন ডিফেন্স সাজালো, মাথায় ঢুকছে না। ফক্সরা যথেষ্ট শ্লথগতির। অন্যদিকে, এটিকেএমবির দলে রয় কৃষ্ণ, ডেভিড উইলিয়ামস, মার্সেলিনহো-র মত দ্রুতগতির ফুটবলার রয়েছে। এমন প্রতিপক্ষের সামনে হাই প্রেসিং ফুটবল খেললে যা হয়, সেটাই হয়েছে।"
উত্তেজিত গলায় ডগলাস বলেই চলেছিলেন, "মরশুমের শুরু থেকেই দেখছি ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডাররা প্রতিপক্ষের ফুটবলারদের নজরে রাখার বদলে বলকে মার্ক করছে। এটা তো পেশাদারি এপ্রোচই নয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ফুটবলে বিপক্ষ স্ট্রাইকারদের উপর নজর সরিয়ে বলের ওপর এক সেকেন্ডের জন্য মনোযোগ দিলে ম্যাচ হেরে বসতে হয়।"
হাবাসকে মাস্টার ট্যাকটিসিয়ান বলে দিয়ে ময়দানের আদরের ব্রাজিলীয় জানাচ্ছেন, "হাবাস ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণের এই ফাঁকফোকর সম্পর্কে ভালোই জানত। আর এই স্ট্র্যাটেজিতে বহুদিন কোচিং করছে। ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডাররা উঠে আসতেই লম্বা বল ফেলছিল এটিকে মোহনবাগান ফুটবলাররা। সেখানেই ম্যাচ শেষ হয়ে গিয়েছে।"
ব্রাইট নিষ্প্রভ হয়ে ওঠার দিনেই রাজার সিংহাসনে রয় কৃষ্ণ। ডগলাস বলে দিয়েছেন, "ব্রাইটকে সঠিক কম্বিনেশনে খেলাতে হবে। ওদের তো এই ম্যাচের গুরুত্ব সম্পর্কে আলাদা করে বোঝানোই হয়নি। ওদের জেনে রাখা উচিত এটা বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল ডার্বি। রবি ফাউলার মরশুম শুরুর পর থেকে দলের সঠিক কম্বিনেশন এখনো ঠিক করে উঠতে পারল না। রয় কৃষ্ণ-ডেভিড উইলিয়ামস আবার একসঙ্গে বহু বছর খেলছে। একে অন্যের চোখ দেখেই পড়ে ফেলতে পারে কী চাইছে বন্ধু। ওদের রসায়নই আলাদা। সঙ্গে যোগ হয়েছে মার্সেলিনহো যে খেলা তৈরি করে বল হোল্ড করে, স্ট্রাইকারদের গোলের পাস বাড়িয়ে।"
ফোন রাখার আগে তাঁর শেষ সংযোজন, "আমি সবসময় বলে থাকি, ডার্বি ম্যাচে কোনো দল ফেভারিট হয়না। তবে এই ম্যাচে আসলে মাঠে নামার আগেই হেরে বসেছিল ইস্টবেঙ্গল।"
কতটা দুঃখ পেয়েছেন ব্রাজিলীয়, বোঝা গেল? ফাউলার কি শুনতে পেলেন!
Read the full article in ENGLISH
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন