দল লিগের শেষ স্থানে। অথচ লাল-হলুদ জার্সিতে একা লাইমলাইট ছিনিয়ে নিয়েছেন এক বঙ্গসন্তান। ধারাবাহিকভাবে নজরকাড়া পারফরম্যান্সে হীরার দ্যুতি ঝলসে দিয়েছে প্রতিপক্ষকে। কড়া ট্যাকল হোক বা বিপক্ষের স্ট্রাইকারকে মার্কিং, গোললাইন সেভ- হীরা যেন ওয়ান ম্যান আর্মি গোটা টুর্নামেন্ট জুড়েই।
তা সত্ত্বেও হীরা উপেক্ষিত। কিছুদিন আগেই বাহরিন।এবং বেলারুশের বিরুদ্ধে পরপর দুটো ফ্রেন্ডলি ম্যাচের দল ঘোষণা করেছে ফেডারেশন। ৩৮ জনের স্কোয়াডেও জায়গা হয়নি ইস্টবেঙ্গলের সবেধন হীরার। ইস্টবেঙ্গলের কোনও ফুটবলারই নেই স্কোয়াডে।
তা সত্ত্বেও হতাশায় ভেঙে পড়ছেন না বাঙালি সুপারস্টার। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে তিনি জানাচ্ছেন, "নিশ্চয় আরও উন্নতি করতে হবে আমাকে। সেই জন্যই আমাকে নেওয়া হয়নি। খেলায় নিশ্চয় কোনও খামতি ছিল। আগামী দিনে সেই ভুল ত্রুটি সামলে জাতীয় দলের হয়ে খেলার প্রস্তুতি নেব।"
আরও পড়ুন: এশিয়ান গেমসের বাঙালি তারকা এখন ফ্লিপকার্টের ডেলিভারি বয়! ভয়ঙ্কর ট্র্যাজেডিতে ধ্বংস যাবতীয় স্বপ্ন
পরিশ্রমী সেই সঙ্গে রয়েছে নিজেকে নিরন্তর কঠোর সংযমে বেঁধে ফেলার জেদ। সেই অদ্ভুত আত্মপ্রত্যয় নিয়েই হীরা মঙ্গলবারের সন্ধ্যায় বলছিলেন, "নাকে অস্ত্রোপচার হয়েছে। মনে হয়না এই এই সামান্য কারণে জাতীয় দলের বাইরে রাখা হবে। আসলে জায়গা পাওয়ার জন্য আরও পরিশ্রম করতে হবে আমাকে। দেশের জার্সিতে খেলাই মূল লক্ষ্য আমার।"
দেশের সেরাদের তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলেছেন। অনামি থেকে মাত্র এক সিজনেই ভারতীয় ফুটবলে।নিজের স্বতন্ত্র জায়গা করে নিয়েছেন। তবুও মাকে ভোলেননি বঙ্গ ডিফেন্ডার। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মাকে সম্মান জানাতে হাতে মায়ের মুখের উল্কি করিয়েছেন। সবসময় মাকে সামনে না পেলেও হাতের দিকে তাকিয়ে সেই দূরত্ব ঘুচবে, এক নিমেষে। সোমবার নারী দিবসে আইএফএ-র তরফে একাধিক ফুটবলারের মাকে সংবর্ধিত করা হয়। হীরা নিজের মায়ের সংবর্ধনা মঞ্চে হাজির ছিলেন, গর্বিত পুত্র হিসাবে।
আরও পড়ুন: মোহনবাগানের জার্সিতে ব্যাটে ঝড় তোলেন কোহলি! বিরাটের বাঙালি কোচ এখনও সুখ-স্মৃতিতে ডুবে
হীরা আপাতত পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে মুখিয়ে। পরবর্তী গন্তব্যের বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। তিনি জানাচ্ছেন, "পরে কোন ক্লাবে খেলব, সেই বিষয়ে এখনই কিছু ঠিক করিনি। বাড়ির সকলের সঙ্গে কথা বলেছি। ইস্টবেঙ্গলে খেলে বড় হয়েছি। আমার বড় হয়ে ওঠা ইস্টবেঙ্গলেই। তবে ইস্টবেঙ্গলের জন্য যে পুরোটা বছর ওয়েট করব এমন নয়। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করব। তারপরে অন্য সিদ্ধান্ত নেব। এখনই এসব নিয়ে কিছু ভাবিনি।"
দেশের সেরা হয়ে উঠতেই হবে বঙ্গসন্তানকে। সেই প্রত্যয় নিয়েই আগামী দিনের নীল নকশা কষে ফেলেছেন তিনি।