মোহনবাগান: ২ (সাদিকু-২)
ওড়িশা: ২ (জাহু-২)
লাঞ্ছিত হতে হয়েছিল মাত্র একসপ্তাহ আগেই। ঘরের মাটিতে সেই হারের প্রতিশোধ নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ ছিল হুয়ান ফের্নান্দোর কাছে। তবে বদলার সেই মঞ্চেই শেষ মুহূর্তে কোনওরকমে মুখরক্ষা হল বাগানের। টিকে থাকল অপরাজিত তকমা। ওড়িশা এফসির বিরুদ্ধে হারতে হারতে শেষ মুহূর্তে কোনওরকমে বাগানকে যিনি একপয়েন্ট এনে দিলেন সেই আর্মান্দো সাদিকুকে নিয়ে রটেই গিয়েছে তাঁকে নাকি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে জানুয়ারির ট্রান্সফার উইন্ডোতে।
তবে সেই রটনা যদি সত্যি হয়, তাহলে বলতেই হচ্ছে আউটগোয়িং তারকাই বাগানের মুখরক্ষা করলেন যুবভারতীতে। ০-২ গোলে বিরতিতে পিছিয়ে থেকে তিনিই সবুজ মেরুন শিবিরে হতাশা ঝেড়ে ফেললেন জোড়া গোল করে।
প্রথম একাদশে কামিন্স, পেত্রাতোস নন, ফেরান্দো নামিয়ে দিয়েছিলেন আপফ্রন্টে সাদিকু-কিয়ান নাসিরিকে জুটি করে। ডিফেন্সিভ থার্ড সামলানোর দায়িত্ব ছিল অনিরুদ্ধ থাপার ওপর। আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডারের ভূমিকায় যথারিতি সাহাল এবং বুমোস। কিয়ানের গোলশিকারের ক্ষিপ্রতা, লিস্টন, বুমোসের ডিরেক্ট গোলমুখী দৌড়, সাহালের দুর্ধর্ষ সমস্ত পাস দেখার অপেক্ষায় ছিল বাগান। ঠিক আট দিন আগেই এই যুবভারতীতে এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ২-৫ গোলে বিধ্বস্ত হতে হয়েছিল সবুজ মেরুন শিবিরকে।
আর লো লোবেরার এই ওড়িশার পুরো আক্রমণ-ই জাহু কেন্দ্রিক। মাঝমাঠে জাহুকে কেন্দ্র করেই সমস্ত আক্রমণের ঢেউ ওঠে। জাহুর দুই পাসে তাঁকে যোগ্য সহায়তা করতে হাজির থাকেন সিওয়াই গডার্ড এবং পুইতিয়া।
সেই জাহুই বাগানের কাছে দুঃস্বপ্ন নিয়ে হাজির হয়েছিলেন বিরতির আগে।
মোহনবাগান শুরুটা খারাপ করেনি। বরং কিছুটা ব্যাকফুটে থেকেই ম্যাচের শুরু করে লোবেরার দল। ২১ মিনিটেই সাদিকুর দুর্ধর্ষ ব্যাকহিল থেকে সাহাল এগিয়ে দিতে পারতেন দলকে। তবে সেই সুযোগ কাজে লাগেনি। ৩০ মিনিটেই বাগান গোল হজম করে বসে। নিজেদের অর্ধে আক্রমণ সামলে দিয়েছিলেন হ্যামিল। তবে সিওয়াই গডার্ড বল হোল্ড করে নরেন্দর সঙ্গে জুটিতে গোলের সুযোগ বের করে ফেলেছিলেন। এরপরে পুইতিয়ার শট বাঁচাতে গিয়ে বক্সের মধ্যে হ্যান্ডবল করে বসেন শুভাশিস। পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি জাহু। বিরতির আগে সংযোজিত সময়ে মরিসিও-র স্কোয়ার পাস ধরে বিশালকে বোকা বানিয়ে নিজের দ্বিতীয় গোল করে যান মরোক্কান তারকা।
বিরতিতে ২-০ গোলে এগিয়ে থাকা ওড়িশা প্ৰথম ধাক্কা হজম করে জাহু চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়ায়। ৫৮ মিনিটেই বাগানকে প্ৰথম গোল উপহার দিয়ে যান সাদিকু। ইউৎসের পাস ধরে বক্সের একপ্রান্ত থেকে স্কোয়ার পাস করেন কিয়ান। নরেন্দরকে বোকা বানিয়ে সাদিকু অমরিন্দরকে পেরিয়ে গোল করে যান।
ব্যবধান কমানোর পরে মোহনবাগান গোলশোধের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। খেলা গড়ায় শারীরিক পর্বে। ম্যাচ গড়ানোর সঙ্গেসঙ্গেই ওড়িশা বক্সে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে থাকেন সাদিকু। তবে গোল আসছিল না। গোলশোধের জন্য হেক্টর কার্যত মিডফিল্ডারও হয়ে যান। হাই ডিফেন্স লাইন নিয়ে বাগান তেড়েফুঁড়ে আক্রমণ শানাচ্ছিল।
শেষ মুহূর্তে গোল এল ৯৫ মিনিটে। ইউৎসের বাড়ানো বল দখলের জন্য লড়াই শুরু হয়েছিল অমরিন্দর এবং সাদিকুর মধ্যে। শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি হাসেন বাগানের আলবেনিয়ান স্ট্রাইকার।
ম্যাচের শেষ লগ্নে রয় কৃষ্ণের সঙ্গে তর্কাতর্কি করে লাল কার্ড দেখেন বাগান বস ফেরান্দো।
মোহনবাগান: বিশাল কাইথ, আশিস রাই, ব্রেন্ডন হ্যামিল, হেক্টর ইউৎসে, শুভাশিস, বুমোস, থাপা, সাহাল, কোলাসো, কিয়ান নাসিরি, আর্মান্দো সাদিকু