মরশুমের শুরুটা আশা জাগিয়ে শুরু করেছিল এটিকে মোহনবাগান। তবে লম্বা রেসের লিগে শেষদিকে যে এভাবে ধীরে ধীরে চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড় থেকে ছিটকে যাবে, এটিকে মোহনবাগান, কে ভাবতে পেরেছিল। একসময় চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে ভালোভাবেই ছিল। এখন শেষ চারে ফিনিশ করা নিয়েই ঘোর সন্দেহ।
আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের কাছ থেকে এক মরশুম আগে দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন হুয়ান ফেরান্দো। চলতি সিজনে দল একদম নিজের মত গুছিয়ে নিয়েছিলেন। রয় কৃষ্ণ, ডেভিড উইলিয়ামসদের মত দুই পরীক্ষিত তারকাকে সরিয়ে দেওয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। অমরিন্দর সিং, সন্দেশ জিংঘানদেরও রিলিজ করে দিতে দ্বিধাবোধ করেননি। দল গঠনেও সেরা চমক দিয়েছিল সবুজ মেরুন শিবির। পল পোগবার দাদা ফ্লোরেন্তিন, ব্রেন্ডন হ্যামিল, দিমিত্রি পেত্রাতোসদের সঙ্গে দেশীয় তারকা হিসাবে আশিক কুরুনিয়ান, আশিস রাইদের মত দেশের সেরা দুই তারকাকে সই করিয়েছিলেন কোচ ফেরান্দো।
একের পর এক তারকা। ভাবা হয়েছিল এবার হয়ত হাবাস জমানার দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে আইএসএল সেরার মুকুট পড়তে পারবে বাগান শিবির। তবে মরশুম শেষ হওয়ার আগেই রীতিমত চাপে স্প্যানিশ কোচ। বড় কোনও চমক না ঘটলে আগামী চলতি মরশুমের শেষে সবুজ মেরুন সংসার থেকে বিদায় ঘটতে চলেছে হুয়ানের। এমনটাই সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: কলকাতায় এবার এমি মার্টিনেজ! মেসিকে কাপ জেতানো সোনার গোলকিপার ঝড় তুলবেন গঙ্গাপারে
ঘটনা হল, এবার কোনও পজিটিভ বিদেশি স্ট্রাইকার ছাড়াই দল সাজিয়েছিলেন কোচ ফেরান্দো। পেত্রাতোস আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার। তাঁকে উইথড্রয়াল হিসাবে খেলিয়ে সামনে মনবীরজ লিস্টন, কুরুনিয়ানরা বাজিমাত করবেন, এমনটাই ভেবেছিলেন সবুজ মেরুন কোচ। তবে কোচের সেই স্ট্র্যাটেজি বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে। পেত্রাতোস ৮ গোল করে দলের সেরা স্কোরার। তবে মনবীর কিংবা লিস্টনরা গতবারের ছায়ামাত্র। সেই সঙ্গে ফেরান্দোকও ডুবিয়ে দিয়েছেন হুগো বৌমাস। মাঝমাঠে বৌমাস এবং জনি কাউকো জুটির ওপর ভরসা ছিল সবুজ মেরুন শিবিরের। তবে মরোক্কান বংশোদ্ভূত ফরাসি তারকা এবার সেরা ফর্মের ধারেকাছে নেই।
প্ৰথম দশ ম্যাচে বাগান বাহিনী হাফডজন ম্যাচে জিতে মরশুম শুরু করেছিল। তবে সিজন এগোনোর সঙ্গেই সব এলোমেলো হয়ে যেতে থাকে। শেষ তিন ম্যাচেই হেরে বসেছে বাগান। কোচ ফেরান্দোকে শক্ত পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছে একাধিক চোট আঘাতও। জনি কাউকো, দীপক টাংরি, ফ্লোরেন্তিন পোগবার মত তারকারা সিজনের প্রথম অর্ধের অধিকাংশ ম্যাচে চোটের কারণে খেলেননি। তাঁদের পরিবর্ত হিসাবে গ্লেন মার্টিন্স, ফেদেরিকো গ্যালেগো, স্লাভকো দামজানোভিচকে সই করিয়েছে বাগান। তবে তাঁরাও এখনও পর্যন্ত নজর কাড়তে পারেননি। গত মরশুমেই চোট পেয়েছিলেন তিরি। এবার তিনি দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অস্ত্রোপচার, রিহ্যাব পর্ব সারার পর।
বর্তমানে লিগ তালিকায় পাঁচ নম্বরে রয়েছে বাগান। শীর্ষে থাকা মুম্বই সিটি ১৮ পয়েন্টে এগিয়ে সবুজ মেরুন শিবির থেকে অনেক দূরে। তবে কেরালা ব্লাস্টার্স, বেঙ্গালুরু এফসিরা বাগানের ধরাছোঁয়ার মধ্যেই রয়েছে।
গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হওয়ার আগে শনিবার বাগান খেলবে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিপক্ষে। প্লে অফ নির্ধারিত হয়ে যাবে বাকি দুই ম্যাচেই। এত বিপত্তি কাটিয়ে শেষ চারে ফিনিশ করে শেষমেষ ম্যাজিক ঘটাতে পারবে বাগান, সেটাই এখন দেখার।
তবে ঘটনা যাই হোক, ফেরান্দোর বাগান ভবিষ্যৎ যে খুব একটা উজ্জ্বল দেখাচ্ছে না, তা বলাই বাহুল্য। ময়দানি ফুটবল মহলের হাওয়া হাবাস এবং সের্জিও লোবেরাকে নাকি পরবর্তী কোচ হিসেবে দেখতে পাওয়ার সম্ভবনা প্রবল। তবে সূত্রের খবর, হাবাস মোটেই কলকাতায় আর ফিরতে আগ্রহী নন।।সের্জিও লোবেরা কি শেষমেশ ফেরান্দোর জায়গায় যোগ দেবেন? সময়ই বলবে।