দুর্ধর্ষ খেলেও 'নতুন মোহনবাগানে' ঠাঁই হয়নি তাঁর। বাগানকে চ্যাম্পিয়ন করা স্লাভকো চলে গিয়েছেন বেঙ্গালুরু এফসিতে। তবে কলকাতার সবুজ মেরুন জার্সিতে ডার্বিতে করা ইস্টবেঙ্গলের বিপক্ষে সেই গোল, এখনও অম্লান তাঁর মনে। আইএসএল জয় এবং ডার্বি গোলকে স্মরণীয় করে রাখতে এবার অভিনব উদ্যোগ নিলেন স্লাভকো। নিজের পায়েই সেই কীর্তি খোদাই করে রাখলেন সার্বিয়ান সেন্টার ব্যাক।
তারকার সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা তাঁর পায়ের ছবি এখন ভাইরাল। নিজের কেরিয়ারের সেরা অধ্যায় জায়গা পেয়েছে স্লাভকোর পায়ের ট্যাটুতে। মন্তেনেগ্রিয়ান কাপ, মন্তেনেগ্রিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের ঘটনা যেমন ট্যাটুর পরস্পর তালিকায় জায়গা পেয়েছে তেমন দক্ষিণ আফ্রিকা কাপ জয়ের ঘটনাও সাড়ম্বরে খোদাই করা রয়েছে স্লাভকোর পায়ে। এবার সেই তালিকাতেই জায়গা পেল আইএসএল জয়ের ঘটনা। আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ঘটনা মুদ্রিত করেছেন। সেই সঙ্গে বলের লোগোর সঙ্গে পাশেই জুড়ে দেওয়া হয়েছে '৬৮ মিনিট'। এর অর্থ ৬৮ মিনিটে স্লাভকোর ডার্বিতে লাল-হলুদ রক্ষণ কাঁপিয়ে সেই দুর্দান্ত গোল।
সেই ডার্বির সৌজন্যেই স্লাভকোর মোহন-জনতার কাছে হার্টথ্রব হয়ে ওঠা। অথচ, মরশুমের শুরুতে বাগান একাদশে ছিলেন না তিনি। কোচ হুয়ান ফেরান্দো ডিফেন্ডারে বোঝাই স্কোয়াড গড়েন গত সিজনে। একসঙ্গে চোট পাওয়া তিরিকে ধরে রেখে কার্ল ম্যাকহিউ, ফ্লোরেন্টিন পোগবা, ব্রেন্ডন হ্যামিলকে রাখা হয়েছিল বাগানের রক্ষণের দায়িত্বে। তবে বাগান যে শেষমেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তাঁর সিংহভাগ কৃতিত্বই ছিল জরুরিকালীন ভিত্তিতে সই করা মন্টিনেগ্রোর সেন্ট্রাল ব্যাক স্লাভকো দামজানোভিচের।
পোগবা, জনি কাউকো এবং তিরি তিন তারকা চোটের খাতায় মরসুমের মাঝপথে নাম লেখাতেই তড়িঘড়ি বাগান কোচ নিয়ে আসেন স্লাভকোকে। বাকিটা ইতিহাস।
টুর্নামেন্ট শেষে লিগের অন্যতম সেরা স্টপার হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।ক্যাপ্টেন প্রীতম কোটালের সঙ্গে রক্ষণে পার্টনারশিপে বহু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের ফয়সালা করে দিয়েছেন স্লাভকো। ৬ ফুট ২ ইঞ্চির সেন্টার ব্যাক বিপক্ষে আক্রমণ যেমন ছিন্নভিন্ন করেছেন, তেমন ডিপ ডিফেন্স থেকেই আক্রমণের সূচনা হয়েছে তাঁর পা থেকে। নিজের উচ্চতাকে কাজে লাগিয়ে সেট পিস থেকে মস্তানি দেখিয়ে গিয়েছেন।
এর আগেও অবশ্য চেন্নাইয়িন এফসিতে খেলে গিয়েছিলেন। তবে এরকম মারণ-ফর্মে আবির্ভুত হননি তিনি। কোচ ফেরান্দোর হাতে পড়ে ঝকঝকে করেছেন স্লাভকো লিগের বাকি সিজনে। বাগানের কাছ থেকে মরসুমের মাঝে অফার পান, তখন তিনি সার্ব লিগের নামি ক্লাব নোভি পাজারের হয়ে।
কলকাতা ডার্বিতে গোল করার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি ময়দানে তখনও ‘অপরিচিত’ স্লাভকোকে। সঙ্গেসঙ্গেই ফ্যান-ফেভারিট হয়ে যান তিনি। আর সেই গ্র্যান্ড ফাইনালে স্লাভকো নির্বিষ করে দিয়েছিলেন বেঙ্গালুরুর দুই তারকা ফরোয়ার্ড সুনীল ছেত্রী এবং রয় কৃষ্ণকে।
সেই স্লাভকোর পায়েই এবার জায়গা পেয়ে গেল একটুকরো ডার্বি। সার্বিয়ান তারকার শরীরের সঙ্গেই মিশে গেল ডার্বির একটুকরো স্মৃতি।