হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, জাতীয় দলের জন্য কঠিন সময় অপেক্ষায়। তারপর ক্লাব বনাম জাতীয় দলের দ্বন্দ্বে ফের একবার সুর চড়াচ্ছেন হেড কোচ ঈগর স্টিম্যাচ। সামনেই এশিয়ান গেমস, ওয়ার্ল্ড কাপের কোয়ালিফায়ার এবং এশিয়ান কাপ। একের পর এক মেগা টুর্নামেন্টের আগে জাতীয় দলের শিবিরের জন্য ফুটবলার ছাড়তে অনিচ্ছুক অধিকাংশ আইএসএল ফ্র্যাঞ্চাইজিই। এমন পরিস্থিতিতে স্টিম্যাচ জানাচ্ছেন, "এখানে কারোর পদলেহন করতে আসিনি। সত্যি কথা বলতে ভয় পাইনা। আমার ভাষাপ্রয়োগে মার্জনা করবেন। তবে আমি সত্যি ভারতে কারোর পা চাটতে আসিনি। যদি ভারত আমার সাহায্য চায়, তাহলে সত্যি বলতে আমি দ্বিধাবোধ করব না। ওরা এই সমস্যা কাটানোর উদ্যোগ নিয়ে আমাকে সাহায্য করতে পারে। অথবা আমাকে বলতে পারে, বাড়ি যাও, আমরা কোনও পরিবর্তন করতে পারব না।"
স্টিম্যাচ আরও জানাচ্ছেন, "ভারতে বিশ্বের সমস্ত সেরা মস্তিষ্কদের বসবাস।এখন তুমি আমাকে বলছ, ক্যালেন্ডারে সামান্য রদবদল ঘটিয়ে জাতীয় দলের জন্য প্রয়োজনীয় সময় নিশ্চিত করতে ব্যর্থ। সত্যি কথা বলায় আমার কোনও সমস্যাই নেই। যে আমাকে মিথ্যা প্রমাণ করতে চায়, জনসমক্ষে আমার সঙ্গে তর্ক করে জানান, সমস্যা কোথায়!"
আগামী সপ্তাহ থেকেই ভারতীয় জাতীয় দলের ঠাসা ক্রীড়াসূচি। তাইল্যাণ্ডে কিংস কাপে খেলতে হবে জাতীয় দলকে। তারপর এশিয়ান আন্ডার-২৩ কোয়ালিফায়ার খেলতে হবে চিনে। এছাড়াও সেপ্টেম্বরের ১৯-এ এশিয়ান গেমসে নামবে টিম ইন্ডিয়া। মালয়েশিয়ার মারডেকা কাপ, ওয়ার্ল্ড কাপ এবং এশিয়ান গেমসের যুগ্ম কোয়ালিফায়ার ম্যাচেও খেলবে ভারত।
তবে তার আগে ভারতীয় ফুটবলে ডামাডোল তুঙ্গে। ভারতের যুব দলের প্রস্তুতি ক্যাম্প শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে হাফডজনের বেশি ফুটবলারদের রিলিজ করতে চায়নি ফ্র্যাঞ্চাইজি। যুব দলের কোচ ক্লিফোর্ড মিরান্ডা জানিয়েছেন, ২৫ জনের ক্যাম্পে মাত্র ১২ জন যোগ দিয়েছেন। ইস্টবেঙ্গল, কেরালা ব্লাস্টার্স, মুম্বই সিটি, জামশেদপুর এফসি, ওড়িশা এফসি, পাঞ্জাব এফসি ফুটবলারদের পাঠায়নি। এমনিতেই ক্লাবের আপত্তিতে একদফায় ক্যাম্প পিছিয়ে গিয়েছে। তারপরে এখনও সেই পরিস্থিতির সুরাহা হয়নি।
ক্লাবের তরফে যুক্তি, ফিফার ক্যালেন্ডারে বাইরে জাতীয় দলের ক্যাম্প আয়োজিত হচ্ছে। তাই ফুটবলার রিলিজ করতে বাধ্য নয় তাঁরা। আপাতত নিজের দেশ ক্রোয়েশিয়ায় রয়েছেন স্টিম্যাচ। কিংস কাপের জন্য জাতীয় দলের সঙ্গে তিনি যোগ দেবেন সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে। তাঁর আশঙ্কা এশিয়ান গেমস এবং এশিয়ান কাপের আগে একই সমস্যায় পড়তে পারেন তিনি।
এশিয়ান গেমসের যুব স্কোয়াডের সঙ্গে তিন সিনিয়র তারকা হিসাবে রাখা হয়েছে গুরপ্রীত সিং সান্ধু, সুনীল ছেত্রী এবং সন্দেশ জিংঘানকে। গ্রুপ ডি-তে ভারতের সঙ্গেই রয়েছেন চিন ,পড়শি বাংলাদেশ এবং মায়ানমার। স্টিম্যাচ বলছেন, "বড় সমস্যার মুখে পড়তে চলেছি আমরা। কাউকে দোষারোপ করছি না। তবে ফেডারেশনে এর জন্য আমরা দায়ী নই। করোনা অতিমারীর জন্য এশিয়ান গেমস এবং এশিয়ান কাপ স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। এখন কোনওরকম আলোচনা ছাড়াই হঠাৎ ক্যালেন্ডারের মাঝামাঝি এই টুর্নামেন্ট ফেলা হল। তাই অধিকাংশ দেশেই কোচ, ক্লাবের সঙ্গে এই সমস্যা রয়ে গিয়েছে।"
"তবে আমার ধারণা অধিকাংশ দেশেই ক্লাব, জাতীয় দল নিয়ে একটা সমাধানসূত্র বের করা গিয়েছে। আর আমরা এখনও বলে চলেছি, আমরা পারব না!"
আইএসএল-এর এক সূত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, ভারতের আন্তর্জাতিক সূচি যখন নির্ধারিত হয়েছিল, তখন স্টিম্যাচ নাকি জানিয়েছিলেন, এশিয়ান গেমস তাঁদের প্রায়োরিটিতেই নেই। যদিও এই বক্তব্য খন্ডন করছেন লুকা মদ্রিচের দেশের কোচ, "কোনও কি এরকম কিছু বলতে পারেন? এটা তো নির্বোধের মত মন্তব্য। আমি যা বলেছিলাম, তা হল দরকার হলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ফিফা উইন্ডো বিসর্জন দিয়ে এশিয়ান কাপের আগে চার সপ্তাহের এবং নভেম্বরে ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফায়ারের আগে দুই সপ্তাহের প্রস্তুতি ক্যাম্প করব। সেই সময় তো জানতাম-ই না এশিয়ান কাপ সেপ্টেম্বরে ফেলা হবে। এটা সর্বৈব মিথ্যা।"
ক্লাবগুলিকে বৃহত্তর স্বার্থের দিকে তাকাতে বলছেন জাতীয় দলের কোচ। "জানি ফুটবলাররা ক্লাবের অপরিহার্য অংশ। প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে ক্লাবের প্রয়োজন ওঁদের। তবে আমাদের প্রাথমিক বিষয়ে ফোকাস করলে, যখন আমাদের লক্ষ্য উপমহাদেশীয় স্তরে সেরা আট, সেরা দশে পৌঁছনো, তখন ভাবতে হবে আমরা কীভাবে ওই স্থানে পৌঁছবো? এখন ভারত যদি মহাদেশীয় স্তরে সেরা আট দলের বাইরে থাকে, তাহলে একসঙ্গে না খেলে কীভাবে ওই স্তরে পৌঁছনো সম্ভব?"
"মাথায় রাখতে হবে আমাদের থেকে এগিয়ে থাকা দেশ আমাদের তুলনায় দশ গুন অতিরিক্ত বিনিয়োগ করেছে। তাহলে আমরা কীভাবে ওই জায়গা অর্জন করব? জাদু কাঠির দ্বারা? এশিয়ার সবথেকে স্বল্পমেয়াদি লিগ আয়োজন করে ওই পর্যায়ে পৌঁছনো যায় না!" বলছেন তিনি।