ইস্টবেঙ্গলে তিনি যেন ছিলেন কাদায় পদ্মফুল। স্টিফেন কনস্টানটাইনের প্রশিক্ষণাধীন গোটা দল যখন আইএসএল-এ একের পর এক ম্যাচে হতাশা উপহার দিয়েছেন। তিনি সেখানেই ব্যতিক্রমীভাবে ভালো খেলে গিয়েছেন ধারাবাহিকভাবে। স্বল্প যে কয়েকজন ফুটবলার লাল-হলুদ জার্সিতে নজর কেড়েছিলেন, তাঁদের মধ্যেই একজন ছিলেন জেরি লালরিনজুয়ালা।
সেই জেরিকেই এবার ছেড়ে দিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। এক বছরের চুক্তিতে জেরি চেন্নাইয়িন থেকে সই করেছিলেন ইস্টবেঙ্গলে। ৩১-এ মে’তেই চুক্তি শেষ হয়েছে জেরির সঙ্গে। তবে তাঁর সঙ্গে চুক্তি আর বাড়ায়নি ইস্টবেঙ্গল।
এবার সেই জেরিকেই তুলে নিল সের্জিও লোবেরার ওড়িশা এফসি। সের্জিও লোবেরা কার্যত নিঃশব্দে দল গুছিয়ে নিচ্ছেন। মুর্তাদা ফল, আহমেদ জাহু, আমে রানাওয়াদে, লেনি রদ্রিগেজরা এবার চলে এসেছেন কলিঙ্গ রাজ্যে। এছাড়াও ক্যাপ্টেন কার্লোস দেলগাদো, দিয়েগো মরিসিওর মত কোয়ালিটি বিদেশিরা রয়েছেন দলে। লোবেরার দলে জেরির অন্তর্ভুক্তি যে রক্ষণ আরও মজবুত করবে, তা বলাই বাহুল্য।
লেফটব্যাক হিসাবে ইস্টবেঙ্গল গত বছরে আসলে চেয়েছিল রিকি লালাউমাউমাকে। হীরা মন্ডল নাটকীয়ভাবে বেঙ্গালুরু এফসিতে চলে যাওয়ার পর পরিবর্ত হিসাবে জামশেদপুর এফসির লেফট ব্যাক রিকিকে পাওয়ার জন্য ঝাঁপিয়েছিল কনস্টানটাইনে ইস্টবেঙ্গল এবং জোসেফ গামবাউয়ের ওড়িশা। তবে জামশেদপুরের সঙ্গে রিকি শেষ পর্যন্ত চুক্তি বাড়িয়ে নেওয়ায় জেরিকে একদম শেষ মুহূর্তে নেয় ইস্টবেঙ্গল।
সেই জেরিই প্রতি ম্যাচে উন্নতি করেছেন। কনস্টানটাইনের হতাশার মরশুমে আলো হয়ে উঠেছেন মিজো এই ডিফেন্ডার। এআইএফএফ-এর এলিট একাডেমির প্রোডাক্ট জেরি সিনিয়র কেরিয়ার শুরু করেন চেন্নাইয়িন এফসির হয়ে। টানা সাত মরশুম খেলেছেন জাতীয় দলে খেলা যুব এই তারকা।
বাঁ পায়ের তারকা। বল কন্ট্রোল অসাধারণ। ওভারল্যাপে উঠে নিখুঁত সেন্টার যেমন বাড়াতে পারেন, তেমন প্রতিপক্ষ বক্সেও হানা দিতে পারেন। আগে ডিফেন্ডিং কোয়ালিটি দুর্বল ছিল। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গেসঙ্গে নিজের রক্ষণের দিকটিও মজবুত করেছেন তিনি।
চেন্নাইয়িনেই জার্সিতে আইএসএল যেমন জিতেছেন তেমন এমার্জিং প্লেয়ারের পুরস্কারও জিতেছেন। দক্ষিণী ক্লাবটিতে খেলার সময় এক সিজন লোনে পুনে এফসিতে নাম লিখিয়েছিলেন। আইলিগেও এমার্জিং প্লেয়ারের তকমা পান। সবমিলিয়ে, ছয় মরশুমে চেন্নাইয়িনের হয়ে ১০৩ ম্যাচ খেলছেন। জার্মানির মেটজ-এ ট্রেনিং নিয়ে আসা চেন্নাইয়িনের অন্যতম সেরা অস্ত্র হয়ে উঠেছিলেন। হেনরিখ সোরেনো, মেলসন আলভেজ, ইগ্নাসিও ক্যালডেরন-দের মত বিদেশিদের সঙ্গে দুর্ধর্ষ পার্টনারশিপ গড়ে তুলেছিলেন চেন্নাইয়িন রক্ষণে।
গত সিজনে ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে ২১ ম্যাচ খেলেছেন। ২৪ বছরের ডিফেন্ডার ইস্টবেঙ্গলের আগামী দিনে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে সম্পদ হতে পারতেন। তবে কলকাতা আপাতত অতীত হয়ে যাচ্ছে তাঁর কাছে।