সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া সেই পাক-সমর্থকের মিমের বক্তব্য যেন হুয়ান ফেরান্দোর সেই মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া স্ট্র্যাটেজিতে। যাকে বলে- 'একদম সে ওয়াক্ত বদল দিয়ে, জজবত বদল দিয়ে, জিন্দেগি বদল দিয়ে'! খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে গিয়েছিল এটিকে মোহনবাগান। শনিবারের ফাইনালে। রয় কৃষ্ণ পুরনো দলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ উগরে দিয়েছিলেন বিষ-হেডে জালে বল জড়িয়ে।
তারপরে শেষ কোয়ার্টারে কিয়ান-শো। যা চলতি আইএসএল-এ নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিয়ান নাসিরির সঙ্গে ইতিমধ্যেই জুড়ে গিয়েছে সুপার-সাব শব্দবন্ধনী। সেই কিয়ানকে নামিয়েই শেষ কোয়ার্টারে বাজিমাত করেছেন বাগানের স্প্যানিশ কোচ।
উঠতি তারকার তরতাজা পায়ের ক্ষিপ্র গতি সামলাতে পারেনি বেঙ্গালুরু ডিফেন্স। বারবার নাস্তানাবুদ করার পরে শেষমেশ পাবলো পেরেজের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ফাউল কিয়ানকে। সেই পেনাল্টি থেকেই গোলশোধ দিমিত্রি পেত্রাতোসের এবং তারপর অতিরিক্ত সময় এবং তারপর পেনাল্টিতে বিশাল কাইথের এমি মার্টিনেজ সদৃশ পারফরম্যান্স!
আরও পড়ুন: কে কী বলল কিছুই যায় আসে না আমাদের! চ্যাম্পিয়ন হয়ে সমালোচকদের জন্য গনগনে আগুন ছড়ালেন ফেরান্দো
কিয়ানের সেই পেনাল্টি নিয়েই তুঙ্গে উঠেছিল তরজা। বক্সের বাইরে ফাউল করা কিয়ানের জন্য কেন পেনাল্টি দেওয়া হবে, তা নিয়ে কার্যত সুনামি বয়ে গিয়েছে দেশের ফুটবল মহলে। রেফারিকে ম্যাচের পর সরাসরি কাঠগড়ায় তুলেছিলেন বেঙ্গালুরু কোচ সাইমন গ্রেসন, কর্ণধার পার্থ জিন্দাল।
পুত্রের সেই বিতর্কিত পেনাল্টি আদায় নিয়ে শেষমেশ মুখ খুললেন কিংবদন্তি জামশেদ নাসিরি। সরাসরি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে বলে দিলেন, "ওই গোল নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। সুনীলের গোল নিয়েই বলার কিছু নেই। মাঠের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন রেফারি। শুধু এই ক্ষেত্রেই নয়, প্রতিটি ক্ষেত্রে- পেনাল্টি নাকি পেনাল্টি নয়,, হ্যান্ডবল নাকি হ্যান্ডবল নয়, যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী একমাত্র রেফারি।"
বাংলার ক্লাবে খেলেই ভারতীয় ফুটবলে কিংবদন্তি তুল্য মর্যাদা পেয়েছেন। পুত্রও বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন। কিয়ানের পারফরম্যান্স নিয়ে জামশেদের গলায় সন্তোষ। বলছেন, "কিয়ানের খেলা দারুণ লেগেছে। সবথেকে ভালো লাগছে ও জানে ওঁকে ম্যাচে কোন দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেটাই করেছে ও।"
আরও পড়ুন: ATKMB কে পেনাল্টি উপহার দিয়ে কি চ্যাম্পিয়ন করা হল! রেফারিকে বীভৎস তোপ বেঙ্গালুরু মালিক জিন্দালের
লাল-হলুদের সোনার সময়ের বাসিন্দা অবশ্য পুত্রের সাফল্যের থেকেও বড় করে দেখছেন বাংলার ক্লাবের দেশের সেরা হওয়া। গড়গড় করে গর্বিত বাঙালির মত বলে চলেছিলেন, "খুব ভালো লাগছে। বহুদিন পরে ক্লাবে ট্রফি এল। আরও ভালো লাগছে বাংলার জন্য। বাংলার কোনও দল এরকম দেশের সেরা হল, মর্যাদার ট্রফি জিতল, অসাধারণ অনুভূতি হচ্ছে।"
"ফাইনালে মোহনবাগানকেই সমর্থন করছিলাম। বাংলার একটা দল ফাইনাল খেলছে। অবশ্যই সে দলকে সমর্থন করা নিয়ে কোনও প্রশ্নই থাকে না। ডার্বিতেও ওঁরা দুটো লেগে ভালো খেলেছে। মোহনবাগান বরাবর পরিচ্ছন্ন ফুটবল খেলে। যে দল পজিটিভ ফুটবল খেলবে তাদের পক্ষেই ফলাফল আসবে। এটা জানা কথা।"
ছেলে কিয়ান আইএসএল চ্যাম্পিয়ন। শনিবার ভারত সেরা হওয়ার পর গোয়া থেকে মেঘলা কলকাতায় কিয়ানদের আগমন ঘটেছে রবিবার। তবে এখনও সেভাবে কথা বলে উঠতে পারেননি পুত্রের প্রবল সেলিব্রেশন ব্যস্ততার মধ্যে। অল্প যেটুকু কথা হয়েছে, তার মধ্যেই কিয়ানকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, "আগামী টুর্নামেন্ট গুলোতে আরও সাফল্য আসুক।"
আরও পড়ুন: ATK আর থাকছে না! চ্যাম্পিয়ন হয়েই সমর্থকদের জন্য বিশাল ঘোষণা কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কার
কিয়ানকে এখনই জাতীয় দলের পরবর্তী সম্পদ ভাবা শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে এখনই পুত্রের জন্য তাড়াহুড়ো করতে রাজি নন মজিদের প্রাণের বন্ধু। বলছিলেন, "জাতীয় দলে ও খেলবে কিনা সেটা পুরোপুরি কোচ স্টিম্যাচ, ফেডারেশন সিদ্ধান্ত নেবে। এই নিয়ে আমার বলার কিছু নেই।"
কিয়ানের জন্য স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকা জামশেদ আশাবাদী নিজের ক্লাব ইস্টবেঙ্গল নিয়েই। ভরসার সুরে ফোন রাখার আগে বলে গেলেন, "আশা করি ইস্টবেঙ্গল পরের সিজন থেকেই ভালো খেলবে।"