মোহনবাগান: ১ (জেসন কামিংস)
মুম্বই সিটি এফসি: ৩ (জর্জে পেরেরা ডিয়াজ, বিপিন সিং, জাকুব)
ISL final, MCFC vs MBSG: উৎসবের মঞ্চ তৈরিই ছিল। আতশবাজি ফাটার অপেক্ষার ছিল। সবুজ মেরুন আবির নিয়ে নব্বই মিনিটের অনন্ত প্রতীক্ষা ছিল। ৪৫ মিনিট শেষে বাকি ৪৫ মিনিট যেন লেগে যাচ্ছিল শত সহস্র বছর। তবে বিরতির পর দ্বিতীয়ার্ধে যে ঘন কালো মেঘ সবকিছু ঢেকে দেবে, উৎসবের হ্যালোজেন এভাবে নিভিয়ে দেবে, কে ভাবতে পেরেছিল। ৫৩ মিনিটে জর্জে পেরেরা ডিয়াজ সমতা ফেরানোর পরেও এভাবে সমবেত দীর্ঘশ্বাস পড়েনি।
এমনকি বিপিন সিং যখন লড়কাতে লড়কাতে মুম্বইকে লিড এনে দিলেন, তখনও বুক চুঁইয়ে নেমে আসেনি হৃদয়ের হাহাকার। তখনও যে বাকি ছিল নির্ধারিত সময়ের ৯ মিনিট।
গোল ম্যাজিশিয়ান দিমিত্রি রয়েছেন, সঙ্গত দেওয়ার জন্য হাজির কামিংসও। এছাড়া লিস্টন, মনবীর, কোলাসোরাও যে রয়েছেন। হেরে যেতে দেওয়া যাবে নাকি! ঠিক সমতা ফিরিয়ে দেবে সবুজ মেরুন জার্সিধারীরা। এমন আশা নিয়েই সবুজ মেরুন জার্সি বুকে চেপে বসেছিলেন হাজার হাজার মোহনবাগান সমর্থক।
জিও সিনেমায় ম্যাচের টোটাল ভিউয়ারশিপ দুই মিলিয়ন পার। এত সমর্থকের মন ভেঙে গেল ঠিক অতিরিক্ত সময়ে। শেষ মুহূর্তে কোনও মা কোনওভাবে মোহনবাগান গোলশোধ করবে, এমনটাই অপেক্ষায় ছিল। সিনেমার চিত্রনাট্যে ঠিক যেরকম থাকে।
তবে অতিরিক্ত সময়ে খেলা শেষ হওয়ার ঠিক তিন মিনিট আগে মোহনবাগান রক্ষণকে স্থানুবৎ করে দলের তিন নম্বর গোল যখন করে গেলেন পরিবর্ত হিসাবে নামা জাকুব, তখন যেন সম্বিৎ ফিরল অপেক্ষমান সবুজ মেরুন জনতার। বাকি ৩ মিনিটে দুই গোল শোধ, তা অসম্ভব, অবাস্তব। তা হয়ওনি। তৃতীয়বার আইএসএল চ্যাম্পিয়ন তো বটেই মরশুমে ট্রেবল করার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন মেরিনার্সরা। তবে মুকুট নিজেদের দখলে রাখতে পারলেন না হাবাসের ছেলেরা। রানার্স হয়েই এবারের মত অভিযান শেষ!
লিগ শিল্ডে বাগানের হাতে পর্যুদস্ত হতে হয়েছিল মুম্বইকে। তখনই বোধহয় মুম্বই বস পের ক্রাটজি বদলার চিত্রনাট্য লিখে নিয়েছিলেন নিভৃতে। গ্যালারির হাজার হাজার দর্শককে শান্ত করে।
ম্যাচ শুরু হয়েছিল মাত্রাছাড়া শব্দব্রহ্মকে সঙ্গী করে। তবে মুম্বইয়ের শুরুর স্পেল-ই নীরব করে দিয়েছিল দর্শকদের। হাই প্রেসিং ফুটবল। সেই ফুটবলেই হাবাসের স্ট্র্যাটেজিকে ঘেঁটে দিয়েছিল মুম্বই। সারাক্ষণ নিজেদের পায়ে বল নিয়েও প্রথমার্ধে সেভাবে সুবিধা করতে পারেনি মুম্বই। গোলের মুখ ব্যর্থ হয়েছিল হাইল্যান্ডাররা।
২৭ মিনিটে মুম্বইয়ের বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে হাতে লাগিয়ে ফেলেন হেক্টর ইউৎসে। তবে রেফারির দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়ার পেনাল্টি থেকে বেঁচে যায় সবুজ মেরুন শিবির। ছাংতে থেকে বিক্রম প্রতাপ সিং বাগান রক্ষণকে বারবার চাপের মধ্যে রেখেছিলেন।
এই চাপ কাটিয়েই প্রতি আক্রমণ থেকে মোহনবাগান প্ৰথম গোল তুলে নিয়েছিল। দিমি পেত্রাতোসের দূরপাল্লার শট কোনওরকমে বাঁচিয়ে দেন লাচেনপা। তবে রিবাউন্ড থেকে বল জালে জড়িয়ে দেন কামিংস।
বিরতিতে এক গোলের লিড বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি মোহনবাগান। দ্বিরিয়ার্ধের শুরুতেই ৫৩ মিনিটে মুম্বইয়ের হয়ে চমৎকার ফিনিশ করে যান জর্জে পেরেরা ডিয়াজ। তাঁকে অবশ্য দুর্ধর্ষ গোলের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন আলবার্তো নগুয়েরা। আনোয়ার আলি এবং মনবীর সিংদের ধুলো দিয়ে গোলের জন্য যে বল বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তা ধরেই বিশ্বমানের ফিনিশ করেন ডিয়াজ।
বাগানের কফিনে দ্বিতীয় পেরেক দেন বিপিন। ৮২ মিনিটে ছাংতের ক্রশ ক্লিয়ার করতে পারেননি হেক্টর। সেই বল ধরেই লো পাস বাড়ান জাকুব। আর কোনও রকমে দ্বিতীয়বারের প্রচেষ্টায় ২-১ করেন বিপিন। তিন নম্বর গোল সংযোজিত সময়ে জাকুবের পাস থেকেই।