আইএসএল-এ আসন্ন সিজনের সেরা রিক্রুট বলা হচ্ছে তাঁকে। আইএসএল-এর ইতিহাসে অন্যতম সেরা হাইপ্রোফাইল চুক্তি করে এবার মোহনবাগান সই করিয়েছে কাতার বিশ্বকাপে খেলা অজি স্ট্রাইকার জেসন কামিন্সকে। কামিন্সের পর বাগান সাদিকু, হেক্টর ইয়ুস্তে সহ একাধিক নামি তারকাকে সই করিয়েছে। তবে বাগান জনতার নয়নের মণি আপাতত একজনই-জেসন কামিন্স।
সবুজ মেরুন জার্সিতে অভিষেক স্মরণীয় হয়নি। ডার্বিতে কামিন্স নামার পরেই ইস্টবেঙ্গলের হয়ে দুর্ধর্ষ গোল করে যান নন্দকুমার। অভিষেক ম্যাচে নজর কাড়তে না পারলেও কামিন্স অবশ্য নিজের জাত চিনিয়েছেন এএফসি কাপের প্রিলিমিনারি রাউন্ডে। নেপালের মাচিন্দ্রা এবং বাংলাদেশের আবাহনী ঢাকার বিপক্ষে দুর্দান্ত গোল করে দলকে জিতিয়েছেন। ডুরান্ডের কোয়ার্টার ফাইনালেও কামিন্স মুম্বই সিটিকে নাকানিচোবানি খাইয়ে গোল করেছেন পেনাল্টি থেকে।
সম্প্রতি আইএসএল মিডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কামিন্স মোহনবাগান নিয়ে নিজের মনের কথা উজাড় করে দিয়েছেন। বলেছেন, "সবসময়েই নিজেকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ভালবাসি। ক্লাবের ভিডিও, ঐতিহ্য, যে ইতিহাস প্রজন্মের পর প্রজন্ম বয়ে চলেছে সেই ক্লাবের অংশ হতে চেয়েছিলাম।"
বাগান সমর্থকরা কামিন্সকে নিয়ে পাগলপারা আবেগে ভেসে গিয়েছেন। কলকাতায় পা রাখার পর থেকেই সেই ভালোবাসা, উন্মাদনার আঁচ টের পেয়েছেন স্কটিশ বংশোদ্ভূত অজি সুপারস্টার। জানিয়েছেন, "সমর্থকরা কাছে অফুরান ভালোবাসা পেয়ে নিজের গন্তব্য নির্বাচন করা অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছিল। ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, টুইটারে ওঁরা আমাকে মেসেজ করেই চলেছিল। নিজেই নিজেকে বলি, 'জানো, আমি এই ক্লাবে গিয়ে কিংবদন্তিতুল্য হয়ে উঠতে চাই।"
"জেট ল্যাগড ছিলাম। এখনও স্পষ্ট মনে পড়ে। এরকম কোনও কিছুর প্রত্যাশা ছিল না। ভেবেছিলাম হয়ত দু-একজন ক্লাবের তরফে রিসিভ করতে হাজির থাকবে। তবে সকাল ৩-৪ টের সময় আমার চক্ষু-চড়কগাছ। এয়ারপোর্টে নেমেই দেখি বিশাল জনতা আমার প্রতীক্ষায়। এতেই অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করি। এতেই প্রমাণিত সমর্থকরা কতটা প্যাশনেট।"
"এখানকার সমর্থকদের প্যাশন সম্পূর্ণ অন্য মাত্রার। কেরিয়ারে বেশ কিছু বড় ক্লাবে খেলেছি। সেই সমস্ত ক্লাবেরও বড়সড় ফ্যানবেস রয়েছে। তবে এঁরা সবথেকে প্যাশনেট। ক্লান্তিহীন। হোটেল হোক বা শপিং মল বা ট্যাক্সি ড্রাইভার- সকলেই সমর্থক, সকলেই ফুটবলের কথা বলছে।"
কেরিয়ারের অধিকাংশ সময়ই কেটেছে ব্রিটেনের ফুটবলে। তবে ২০২২-এ এ-লিগে সেন্ট্রাল কোস্ট মেরিনার্সের হয়ে সই করেন। তারপরে অস্ট্রেলিয়া লিগে ধামাকা হাজির করেন তিনি। লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। এমনকি স্কটিশ হলেও পারিবারিক সূত্রে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বিশ্বকাপ গামী স্কোয়াডে জায়গাও জুটে যায় তাঁর।
সেই কামিন্স ভারতে প্ৰথম গোল করার আগে বেশ চাপে ছিলেন। স্বীকার করে বলছেন, "প্রথমবার গোল করতে পারার অনুভূতি বেশ ভালো। স্ট্রাইকার হিসাবে এটাই আমার কাজ। প্ৰথম গোল পাওয়া সবসময়েই স্পেশ্যাল। কাঁধ থেকে চাপ হালকা করে দেয় অনেকটা। একবার গোল করার পরে আরও অনেক গোল অপেক্ষা করে থাকে।"
বাগানের স্কোয়াডের গভীরতাতেও মুগ্ধ তিনি। আপফ্রন্টে দিমিত্রি পেত্রাতোস, আর্মান্দো সাদিকুর সঙ্গে জুটি বাঁধছেন তিনি। এছাড়াও আনোয়ার আলি, সাহাল আব্দুল সামাদ, অনিরুদ্ধ থাপা, লিস্টন কোলাসো, আশিস রাই, আশিক কুরুনিয়ান, ব্রেন্ডন হ্যামিল, মনবীর সিংদের মত একের পর এক তারকা।
কামিন্স জানাচ্ছেন, "লিগের সেরা দল গড়েছে মোহনবাগান। এমন দলে এসে ভারতের সেরা ফুটবলারদের সঙ্গে খেলতে পারা সৌভাগ্যের। কোয়ালিটি রিক্রুটমেন্ট হয়েছে আমাদের। মরশুম শুরু করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। এমন ফুটবলারদের সঙ্গে দারুণ একটা সিজন অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। সফল সিজনও হতে চলেছে আমাদের জন্য।"