বাংলার ফুটবল উত্তাপ থেকে তিনি আপাতত বহু দূরে। ঘাঁটি গেড়েছেন কোচিতে। কেরালা ব্লাস্টার্সের জার্সিতে তিনি ফুটবল সিজন কাটাবেন। সেই পরিচিত সবুজ মেরুন জার্সি আপাতত অতীত প্রীতম কোটালের কাছে।
মোহনবাগানও ছেড়েছেন রাজার মত। ক্যাপ্টেন হিসাবে আইএসএল জিতেছেন। তারপর সেরা ফর্মে থেকেই কলকাতা প্রস্থান করেছেন সবুজ মেরুন জনতার নয়নের মনি। কেরালার সঙ্গে আপাতত তিন বছরের চুক্তি করেছেন বাংলার তারকা।
আইএসএল-এর ইউটিউব চ্যানেলে ‘ইন দ্য স্ট্যান্ডস’ অনুষ্ঠানে সুয়াশ উপাধ্যায়কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বঙ্গ ফুটবল তারকা জানিয়েছেন, কেন তিনি চ্যাম্পিয়ন ক্লাব ছেড়ে কেরালায় সই করলেন।
প্রীতম জানিয়েছেন, "গত সিজন বেশ কঠিন গিয়েছে। সেই পরিস্থিতিতেও আমরা চ্যাম্পিয়ন হই। অধিনায়ক হিসাবে মোহনবাগানের জার্সিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া এক বিরাট বড় প্রাপ্তি। তবে হঠাৎ করেই ভাবলাম, কলকাতায় বেশ কয়েক বছর খেলে ফেলেছি। নতুন পরিবেশে নতুন চ্যালেঞ্জ খুঁজছিলাম। ক্লাব আমার সিদ্ধান্তে সহযোগিতা করেছে। বাগানের সঙ্গে বোঝাপড়া করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"
তিনবার আইএসএল জিতেছেন নিজের কেরিয়ারে। দুবার এটিকের হয়ে। সর্বশেষ বার আইএসএল জয়ীর শিরোপা পড়েছেন এটিকে মোহনবাগানের হয়ে। আইএসএল-এ ১৪৩ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা থাকা প্রীতম টুর্নামেন্টের অন্যতম কিংবদন্তি হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। চিরাগ ইউনাইটেড থেকে কেরিয়ার শুরু। তারপর পৈলান এরোজ হয়ে সেই যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা এখনও অব্যাহত।
কলকাতায় মোহনবাগান, এটিকে, এটিকে-মোহনবাগানের হয়ে যেমন মাঠ মাতিয়েছেন, তেমন দিল্লি ডায়নামোজ, পুনে সিটি এফসির হয়ে কলকাতার বাইরে খেলেছেন অতীতে। দেশের জার্সিতেও ফুল ফুটিয়েছেন বঙ্গতনয়। স্টিফেন কন্সটানটাইন হোক বা ইগর স্টিম্যাচ- যে কোনও কোচেরই সেরা অস্ত্র তিনি। তিনবার সাফ কাপ, দু-বার ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ জয়ী তারকা স্বীকার করে নিচ্ছেন, কেরালায় এসে ভাবতেই পারেননি তাঁকে নিয়ে এরকম ক্রেজ দেখা যাবে।
অকপটে সেই সাক্ষাৎকারে প্রীতম বলেছেন, "ভাবতেই পারিনি যে, এখানকার মলে শপিং করতে গেলে আমাকে ঘিরে এত ভিড় হয়ে যাবে। ওখানে একবার কেনাকাটা করতে যখন ঢুকি, তখন দু-তিনজন আমাকে দেখে ছবি তুলতে এগিয়ে এসেছিল। ভাবলাম, হয়ত বিষয়টির সেখানেই পরিসমাপ্তি ঘটবে। কারণ, কলকাতাতেও এরকম ঘটনার সাক্ষী থেকেছি এতদিন। কিন্তু এখানে ঘটনা অন্য। যখনই বাজারে ঢুকে কোনও জিনিস তুলে দেখতে শুরু করি, তখনই দু’জন পিছন থেকে এসে বলে, ‘স্যার সেলফি!’ এবং এটা চলতেই থাকে। এটাই ওদের ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। আমারও ভাল লাগে। কিন্তু এরকম পরিস্থিতি এখানে তৈরি হবে, আমি আগে ভাবতে পারিনি। এখনও ম্যাচেই নামিনি, শুধুই এসেছি, অনুশীলন শুরু করেছি। এমনকী, ট্যাক্সি বুক করে তার মধ্যে বসলেও লোকে আমাকে অভ্যর্থনা জানায়। ওদের একটাই আবদার, বলে, ‘স্যার আমাদের কাপটা চাই’!"
কেরালা সমর্থকদের এই অফুরান ভালবাসা কি প্রীতম ট্রফি জিতে দাম দিতে পারবেন, বাঙালি তারকাকে নিয়ে কিন্তু স্বপ্ন দেখা শুরু করে দিয়েছে দক্ষিণী ফ্র্যাঞ্চাইজি।