স্টিফেন কনস্টানটাইনের ইস্টবেঙ্গলে ব্যর্থতার মঞ্চে তিনি একাই ছিলেন উজ্জ্বল আলো। মাত্র এক মরশুমেই লাল-হলুদ জনতার নয়নের মণি হয়ে উঠেছিলেন তিনি। দেশের অন্যতম সেরা উইঙ্গার হিসাবে উঠে আসে তাঁর নাম। লেফট উইং বা রাইট উইং যে কোনও পজিশনেই প্রতিপক্ষের ত্রাস। উইং ধরে সোজা দৌড়, বিষাক্ত সমস্ত ক্রস আর ইনসাইড কাটে বক্সের মধ্যে ঢুকে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করা- নাওরেম মহেশের খেলার স্টাইল দখল করে নিয়েছে ইস্টবেঙ্গল জনতার হৃদয়।
ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে নয় গোলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অবদান ছিল মহেশের। সাত গোল, জোড়া এসিস্ট করার পর ইগর স্টিম্যাচ জাতীয় দলের দল সাজানোর কথা ভাবতেই পারেন না। গত সিজনের এগারো জন তারকাকে বাতিল করলেও কুয়াদ্রাতের নতুন করে সেজে উঠতে চলা ইস্টবেঙ্গলের রণকৌশলে যথারীতি ছিলেন তিনি। তবে ট্রান্সফার সিজনে হঠাৎ করেই ইস্টবেঙ্গল সংসারে কালো মেঘের অবতারণা ঘটে গেল।
আরও পড়ুন: Man U প্রিমিয়ার কাপ জেতা লোবেরার শিষ্যকে চাইছেন কুয়াদ্রাত! বড় সইয়ের পথে ইস্টবেঙ্গল
মহেশকে পাওয়ার জন্য এবার ঝাঁপাল আইএসএল-এ টাকার থলি নিয়ে বসে থাকা দুই ফ্র্যাঞ্চাইজি মোহনবাগান সুপার জায়ান্টস এবং মুম্বই সিটি এফসি। ২৪ ঘন্টা আগেই মোহনবাগান লিগের ইতিহাসে সবথেকে দামি চুক্তি করে ফেলেছে অনিরুদ্ধ থাপাকে সই করিয়ে। পাঁচ বছরের চুক্তিতে চেন্নাইয়িনে গত বার খেলা সুপারস্টারকে ১৫ কোটিতে নিয়েছে সবুজ মেরুন শিবির। সেই সঙ্গে তিন কোটি টাকা অতিরিক্ত ট্রান্সফার ফি দিতেও দ্বিধা বোধ করেনি মোহনবাগান। এই বিদেশি হিসাবে জেসন কামিন্সের সঙ্গে চুক্তির অর্থ তো বিদেশি মিডিয়াতেও আলোচ্য বিষয় হয়েছে।
এবার মোহনবাগান তাই টার্গেট করল পড়শি ক্লাবের মহেশকে। এমনিতেই নন্দকুমার এবং বোরহা হেরেরা কুয়াদ্রাতের দুই উইং দিয়ে অপারেট করবেন। মহেশকে খেলাতে হলে পজিশন বদলাতে হত। এমন অবস্থায় ইস্টবেঙ্গলের স্ট্র্যাটেজি পড়তে পেরেই মোহনবাগানের তরফে নাকি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে মহেশকে নেওয়ার জন্য। তারকা উইংগারের সঙ্গে ২০২৪ পর্যন্ত চুক্তি রয়েছে লাল-হলুদ শিবিরের। ইস্টবেঙ্গলের দল গঠনে আর্থিক সমস্যাও রয়েছে। যে কারণেই ক্লাবের তরফে ক্রাউডফান্ডিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় মহেশকে ছেড়ে দিলে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে লাল-হলুদ। মোহনবাগান এবং মুম্বইয়ের প্রস্তাব নিয়ে আপাতত চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।
আরও পড়ুন: ইউরো কাপে ইতিহাস গড়া কিংবদন্তিকে পেতে ঝাঁপাল বাগান! প্ল্যান বানচাল করতে ময়দানে গোয়া-কেরালাও
যে ফুটবলারকে নিয়ে জাতীয় ফুটবল উত্তাল, যে তারকা র ট্রান্সফার আপাতত ভারতীয় মিডিয়ায় ফ্রন্টপেজ নিউজ, সেই মহেশ এক মরশুম আগেও নিয়মিত ছিলেন না প্ৰথম একাদশে। কখনই কোনও স্কোয়াডে ফার্স্ট চয়েস ছিলেন না তিনি। ২০২০-তে কেরালা ব্লাস্টার্স-এ সই করার পরে তাঁকে লোনে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সুদেবা এফসি এবং তারপর ইস্টবেঙ্গল। যাতে মহেশ পর্যাপ্ত ম্যাচ টাইম পান। প্রথমে মহেশ সেভাবে নজর কাড়তে পারছিলেন না। ফাইনাল থার্ডে সেভাবে জ্বলে উঠতে যেমন পারছিলেন না, অনেক ম্যাচে আবার রিজার্ভ বেঞ্চ গরম করতে হচ্ছিল।
তবে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে প্ৰথমবার পূর্ণ সময়ের খেলার সুযোগেই বদলাল ভাগ্য। তবে ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে ঝলমলে করলেও সরাসরি জাতীয় দলে জায়গা জোটেনি। শিবশক্তি নারায়ণ চোট পাওয়ায় মহেশের ভাগ্যে শিকে ছেড়ে জাতীয় দলের। মায়ানমারের বিরুদ্ধে মাত্র ২০ মিনিট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। সামান্য সেই ক্যামিওতেই নিজের জাত চিনিয়ে গিয়েছিলেন।
মার্চে হিরো ট্রাই নেশন কাপে কিরঘিজস্তানের বিপক্ষেও ম্যাজিক দেখিয়েছিলেন। বর্তমানে হিরো কন্টিনেন্টাল কাপে খেলতে ব্যস্ত তিনি। আসন্ন মরশুমে ইস্টবেঙ্গল ত্যাগ করে তাঁকে অবশ্য দেখা যেতে পারে মেরিনার্সের জার্সিতে।