চলতি মাসের শুরুতেই বড়সড় ধাক্কা খেয়েছেন মেরিনার্স সমর্থকরা। রয় কৃষ্ণকে বিদায় জানানো হয়েছে এটিকে মোহনবাগান শিবির থেকে। তিন মরশুম এটিকে মোহনবাগানে খেলে ক্লাবের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গিয়েছিলেন তারকা। সবমিলিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজির জার্সিতে ৬০ ম্যাচে ৩৬ গোল করেছেন। ১৮টি এসিস্টও তাঁর নামের পাশে।
তবে এটিকে মোহনবাগানের রয় কৃষ্ণকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এটিকে মোহনবাগান ছাড়ার বিষয়ে এবার তিনি সরাসরি মুখ খুললেন ফুটবল মংকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে। তুলোধোনা করলেন কোচকে। সরাসরি নিজের ক্লাব ছাড়ার দায় চাপালেন কোচ হুয়ান ফেরান্দোর ওপর। জানিয়ে দিলেন, "ছাড়ার সিদ্ধান্ত মোটেই আমার ছিল না। কোচ অন্য স্টাইলে খেলাতে চেয়েছিলেন দলকে। আমাকে বলা হয়েছে, আমি সেই স্টাইলে ফিট করছি না।" অভিমানাহত রয় কৃষ্ণ তোপ দেগে জানিয়ে দিচ্ছেন, তাঁকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি আগেভাগে জানানোই হয়নি। কৃষ্ণের বক্তব্য, "যদি ক্লাবের পক্ষ থেকে আগেভাগে আমার বিদায়ের খবর জানানো হয়, তাহলে শেষ ম্যাচে সমর্থকদের সঙ্গে আরও ভালোভাবে সাক্ষাৎ পর্ব সারতে পারতাম।"
আরও পড়ুন: মাঠে বল গড়ানোর আগেই ক্লাব ছাড়লেন কোচ! অভিষেকের ডায়মন্ডে বেনজির বিতর্ক
এরপরে তিনি দার্শনিকের ভঙ্গিতে বলছেন, "এটাই ফুটবলের অংশ। সকলকে এগিয়ে যেতে হয়। এবার নতুন কোচ আসার পরে সমস্ত কিছুই বদলে গেল।" ক্লাব ছাড়ার পরে এখনও কোচ ফেরান্দোর সঙ্গে কথা হয়নি। কৃষ্ণ সরাসরি বলছেন, "ওঁর সঙ্গে কথা হয়নি। আমি আর খেলছি না এটা জানার পরে কিছু আবেগরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম।"
ফেরান্দো নন, হাবাসকেই পছন্দ করতেন কৃষ্ণ। কলকাতায় হাবাসের কোচিংয়ে তিন মরশুম খেলেছেন তারকা এই ফুটবলার। শেষ মরশুমে খেলেছেন ফেরান্দোর কোচিংয়ে। দুই স্প্যানিশ হেড স্যারের মধ্যে কৃষ্ণ এগিয়ে রাখছেন হাবাসকেই। স্পষ্ট করে বলে দিলেন, "দুজনের থেকেই অনেক শিখেছি। দুজনকেই শ্রদ্ধা করি। তবে হাবাসের দিকেই আমার ভোট থাকবে। কারণ ওঁর কোচিংয়েই আড়াই মরশুম খেলে আমার যাবতীয় সাফল্য। অন্যদিকে, হুয়ানকে কাছ থেকে দেখছি মাত্র কয়েক মাস হল। আমার কাছে হাবাস পিতৃতুল্য। উনি আমাকে সাহায্য করেছেন। তুলে ধরেছেন। আমরা প্ৰথম মরশুমে খেতাবও জিতেছি। দ্বিতীয় সিজনে ফাইনালে পৌঁছেছি।"
আরও পড়ুন: মেহতাব-নবিদের সুপারিশ ইস্টবেঙ্গলে! কর্তাদের নজরে একাধিক আইলিগ তারকা
দুজনের ট্যাকটিক্যাল অংশ নিয়েও খুল্লামখুল্লা রয় কৃষ্ণ, "হাবাসের স্ট্র্যাটেজিতে আমরা অনেক রক্ষণাত্মক খেলতাম। আমরা যে পজিশনেই খেলি না কেন, সকলে সকলকে সাহায্য করতাম। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমাদের লড়াই চালাতে হবে। হুয়ানের কোচিংয়ে আমরা বল পজেশন বেশি নিজেদের দখলে রাখছি। যে স্টাইলে হাবাস খেলাতেন, তা থেকে এই স্ট্র্যাটেজি সম্পূর্ণ আলাদা।"
কোচ হুয়ানকে সমালোচনায় বিদ্ধ করলেও রয় কৃষ্ণের ধন্যবাদ জানিয়েছেন টিম ম্যানেজমেন্টকে। বলেছেন, "ম্যানেজমেন্টকে অসংখ্য ধন্যবাদ। প্ৰথম সিজনে দলে যোগ দেওয়ার পর টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে অনেক সাহায্য করেছিল।" সবুজ মেরুন সমর্থকরা বরাবর রয় কৃষ্ণের কাছে স্পেশ্যাল। ফিজিয়ান সুপারস্টারের হৃদয়ে বরাবর থাকবেন মেরিনার্স সমর্থকরা। "এই জনতা বরাবর আমার কাছে স্পেশ্যাল। শেষ ম্যাচে সমর্থকদের সঙ্গে আলাপ করতে পেরেছিলাম। এই জন্য আমি কিছুটা ভাগ্যবান। ম্যাচের শেষে স্টেডিয়ামের প্রত্যেক প্রান্তে পৌঁছে যাই ওদের সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে। সমর্থকদের ক্লাবও আমার কাছে স্পেশ্যাল হয়ে থাকবে। হৃদয়ে ওঁদের জন্য বরাবর বিশেষ জায়গা থাকবে। প্ৰথম সিজন থেকেই আমাকে সমর্থন করার জন্য ধন্যবাদ।" বলছেন সুপারস্টার।
নিজের সাক্ষাৎকারে রয় কৃষ্ণ আরও জানাচ্ছেন, পারফরম্যান্সের ঘাটতির জন্যই এটিকে মোহনবাগান গত মরশুমে খেতাব জয় থেকে দূরে থেকেছিল। সেই সঙ্গে বায়ো বাবলের ক্লান্তির কথাও উল্লেখ করেছেন সুপারস্টার। "প্ৰথম সিজনে আমরা দল হিসেবে মাঠে খেলেছিলাম। ডিফেন্স করার সময়ও সংঘবদ্ধ হয়ে পারফর্ম করতাম। কিন্তু এটিকে মোহনবাগানে আমরা মোটেই পারফর্ম করতে পারিনি। হয়ত আমি ভুল হতে পারি। প্রত্যেক মরশুমেই লিগের মান বাড়ছে। তাই পারফরম্যান্সের মান ধরে রাখা বেশ কঠিন। আশা করি, ক্লাব হয়ত পরের সিজনে খেতাব জিততে পারে।"